জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,০৩ অক্টোবর : ওরা প্রবাসী বাঙালি। কলকাতা থেকে প্রায় পনেরো হাজার কিলোমিটার দূরে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার ঘোরোয়াতে বাস করে। পেশায় কেউ ডাক্তার, কেউবা আইটি সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত, কেউ আবার ইঞ্জিনিয়ার বা বৈজ্ঞানিক। প্রত্যেকেই আমেরিকার বিভিন্ন প্রেস্টিজিয়াস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত এবং যথেষ্ট সম্মানীয় ব্যক্তি। প্রবাসী হলেও দুর্গাপুজোর আকর্ষণ ওরা ভুলতে পারেনা। পুজো এলেই ওদের মন ছটফট করে। দূরত্বের কারণে আসব বললেই আসা যায়না। বিকল্পের খোঁজে বছর সাতেক আগে এখানে বসবাসরত সাড়ে চার শতাধিক বাঙালি পরিবারের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় দুর্গাপুজো। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সেটা চলে আসছে।
প্রবাসে হলেও পুজোর আয়োজনের কোনো ঘাটতি থাকেনা। সুন্দর করে সাজানো হয় মণ্ডপ। প্রবল উৎসাহে তাতে প্রত্যেকেই হাত লাগায়। অন্যত্র চারদিন হলেও এখানে পুজো হয় দু’দিন। হয়তো বিদেশে চরম ব্যস্ততার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথবা ভারতের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য একটা কারণ হতে পারে। যদিও এবিষয়ে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
প্রথম দিন হয় সপ্তমী ও অষ্টমীর পুজো। সকাল থেকেই শুরু হয় তোড়জোড়। পুজোর জোগাড় করতে বড়রা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পুরোহিতের উপস্থিতিতে আনা হয় ঘট। একেবারে রীতি মেনে পুজো হয়। পরের দিন হয় নবমী ও দশমীর পুজো। পুজোর সময় কলকাতা থেকে কোনো সঙ্গীত শিল্পী ওখানে যান এবং ওখানকার প্রবাসী বাঙালিদের তার সঙ্গীতের মাধ্যমে আনন্দ দেন। যেমন এবার গিয়েছিলেন অন্বেষা।
তবে প্রথম দিনের অন্যতম আকর্ষণ থাকে ওখানে বসবাসরত প্রায় সাত শতাধিক বাঙালির তিন বেলা একসঙ্গে ভোজন। সকালে ঘুগনি আর আলুর চপ দিয়ে শুরু হয়। দুপুরে লুচি, আলুর দম ও সঙ্গে ফল। আর রাত্রে হলুদ ভাত, ফুলকপি, খাসির মাংস, কমলা ভোগ, পান্তুয়া। সকাল ১১ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত চলে এই আনন্দ উৎসব। কার্যত প্রতিবছর একই মেন্যু। আরও একটা বিষয় দেখার মত। কচিকাচা, প্রবীণ থেকে শুরু করে নবীন, পুরুষ থেকে মহিলা প্রত্যেকে একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে। বাজনার তালে তাদের ট্রাডিশনাল বাঙালি নৃত্য দেখার মত। মুহূর্তের মধ্যে দূর হয়ে যায় কর্মক্ষেত্রের পদমর্যাদা।
আমেরিকায় বসবাসরত শিল্পী দেবী বললেন- ইচ্ছে থাকলেও পুজোর সময় দেশে ফিরতে পারিনা। তাই এখানেই সবাই মিলে আনন্দে মেতে উঠি। দেশের চেনাজানা পরিবেশে পরিচিত জনদের মধ্যে আনন্দের ফ্লেভারটা হয়তো এখানে থাকেনা ঠিকই কিন্তু আমরা সবাই খুবই আনন্দ করি।
এখানকার পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা পেশায় গবেষণারত বৈজ্ঞানিক তথা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বরূপ ঘোষ বললেন,’বিদেশ বিভুঁইয়ে পুজোর আয়োজন করা কিছুটা সমস্যার হলেও আমরা যতটা সম্ভব রীতি মেনে চলেছি। পুজোর সময় নিজ নিজ গ্রামে কেমন আনন্দ হয় তার একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমাদের পরিবারের কচিকাচাদের সামনে। সব মিলিয়ে এখানে দুর্গাপুজোর আয়োজন আমাদের কাছে এক অন্য অনুভূতি ।’।