এইদিন ওয়েবডেস্ক,মথুরা,১৪ এপ্রিল : যেখানে আধুনিক বিজ্ঞান সেখান শেষ সেখান থেকে শুরু ভারতীয় অধ্যাত্ববাদ। পৃথিবীর আকৃতি, সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব, সৌরমন্ডলের গ্রহের সংখ্যা প্রভৃতির অনুসন্ধান হাজার হাজার বছর আগে করে গেছেন ভারতের মুনিঋষিরা । আধুনিক প্রযুক্তি এমনকি টেলিস্কোপ ছাড়াই ধ্যানযোগে এবং প্রাচীন ভারতের উন্নত গণিতশাস্ত্রকে কাজে লাগিয়ে ভারতের মহান ঋষিরা ওই সমস্ত আবিষ্কারগুলো করে গেছেন । যার সত্যতা বহু পরে বিজ্ঞান স্বীকার করেছে । অথচ ভারতের এমন কিছু জায়গা আছে যার রহস্য আজও বিজ্ঞান উদঘাটন করতে পারেনি । তার মধ্যে একটি হল হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলায় শিবালিক পর্বতমালার কালিধর পাহাড়ে অবস্থিত ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম জাওয়ালাজি বা জ্বলাদেবী মন্দিরের ৯টি সদা জ্বলন্ত অগ্নিশিখার রহস্য । প্রথমে হানাদার মুঘল, পরে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ এবং আজ আধুনিক বিজ্ঞান ওই ৯টি সদা জ্বলন্ত অগ্নিশিখার রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ ।
ভারতের দ্বিতীয় আরেকটি পবিত্রতম স্থান হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলার প্রাণকেন্দ্র মথুরার বৃন্দাবনে রংমহল যা নিধিবন নামে অরণ্য দ্বারা বেষ্টিত ক্ষেত্রটি । নিধিবনকে বৃন্দাবনের অন্যতম রহস্যময় স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি একটি ঘন বনাবৃত সবুজ গাছগাছালিতে পূর্ণ একটি স্থান । হিন্দুদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান । বৈষ্ণবধর্মে একটি পবিত্র উদ্ভিদ তুলসী গাছ দ্বারা আবৃত এই ক্ষেত্রটি । বড় বড় তুলসী গাছের বাকল বা ছাল ফাঁপা এবং জমি শুকিয়ে গেলেও সারা বছরই গাছে সবুজ পাতায় আবৃত থাকে। আর সমস্ত গাছগুলিও মাটির দিকে বাঁকানো অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় ।
নিধিবনের সাথে জড়িয়ে আছে বহু অলৌকিক কাহিনি । যার ব্যাখ্যা আজও দিতে পারেনি আধুনিক বিজ্ঞান । শোনা যায় যে ভগবান কৃষ্ণ প্রতি রাতে এখানে রাসলীলা করেন । শোনা যায়, রাতেও মানুষ ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পায়। তুলসী গাছগুলি রাতে গোপীতে পরিণত হয় এবং চারপাশে নাচতে থাকে যখন কৃষ্ণ তার রাস লীলা করেন। বৃক্ষও রাত্রে ভগবান কৃষ্ণকে স্বাগত জানাতে আলোকিত হয় । যদিও বিজ্ঞান এর সত্যতা সম্পূর্ণভাবে যাচাই করতে এখনো পেরে ওঠেনি।
বলা হয় যে বৃন্দাবনে রংমহল যা নিধিবনের রাধা- কৃষ্ণের মন্দিরে রোজ রাতে উপস্থিত হন স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ। প্রতিরাতে তিনি রাধিকা ও ১৬,১০৮ গোপীর সাথে লীলাখেলায় লিপ্ত হন। দেখা গেছে যে নিধিবনে গাছের সংখ্যাও ১৬,১০৮টি যা পুরাণমতে কৃষ্ণের গোপীদের সংখ্যার সমান। নিধিবনে একটি কুঁয়ো রয়েছে, বলা হয় শ্রীরাধার তৃষ্ণা নিবারণার্থে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাঁশির ব্যবহারে তৈরী করেন এই কূপ । ভক্ত ও পূজারীদের মতে এই লীলাখেলার দরুন ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রামের জন্য রাধা-কৃষ্ণ উপস্থিত হন রংমহলে, যেখানে তাঁদের জন্য রাখা থাকে মিষ্টি, পান, দাঁতন প্রভৃতি খাদ্য ও নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী । নিধিবনের দুটো দরজায় লাগানো হয় মোট আটটি তালা, যেখানে রাতে কারোর প্রবেশের অনুমতি নেই । অথচ প্রতিদিন সকালে মন্দিরের দরজা খুললে দেখা যায় অন্য এক চিত্র । আহার হিসাবে যে লাড্ডুসহ খাদ্য সামগ্রীন, মুখশুদ্ধির জন্য পান, দাঁত পরিষ্কারের জন্য দাঁতন ইত্যাদি আগের দিন সন্ধ্যারতির পর রেখে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেই খাবার অর্ধেক খাওয়া, পান চিবোনো এবং দাঁতনগুলিও ব্যবহার করা দেখতে পাওয়া যায় । পূজারীরা বলেন, যে এটা স্বয়ং প্রভু শ্রীকৃষ্ণের লীলা ছাড়া আর কিছুই নয়।
নিধিবনের গাছগুলিও রহস্যে মোড়া । অন্য যে কোনো গাছের অনুরূপ এই গাছগুলির বৃদ্ধি আকাশের দিকে হয় না, বরং বেশি হয় ভূমির দিকে। এর সমস্ত ডালপালা বিস্তৃত হয় জমির আশেপাশেই, এটি গাছের সাধারণ প্রকৃতির একেবারেই বিপরীত। এমনকি এই নিধিবনের সংলগ্ন এলাকা অর্থাৎ বৃন্দাবন মথুরার অন্য কোন জায়গায় এই প্রজাতির গাছ দেখতে পাওয়া যায় না। এটা শুধুমাত্র নিধিবনেই দেখতে পাওয়া যায় । সারাদিন বনে থাকার পর সন্ধ্যা হলেই এই বনের সমস্ত বানর, ময়ূর ও পশুপাখি নিধিবন ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়,যদিও পশুপাখির জন্য জায়গাটি রাত্রিযাপনের জন্য উপিযুক্ত । এমনকি নিধিবনের পাশে যারা থাকে তারা তাদের বাড়ির যে সমস্ত দরজা জানালা বনের দিকে থাকে সেগুলি সন্ধ্যের পরেই বন্ধ করে দেন, আর রাত দশটার পরে তো কেউ বনের দিকে তাকানও না ।
নিধিবনে কখনো কাউকে রাতে থাকতে দেওয়া হয় না, তবে বলা হয় এমন মানুষও রয়েছেন যারা নিধিবনে সত্যিই শ্রীকৃষ্ণের অবতরণ হয় কিনা তা জানার জন্য লুকিয়ে থেকে গিয়েছিলেন রাতে। পরের দিন সকালে হয় তাঁদের মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে আর নয়তো তাঁরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেছে,পরে দু এক দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে তাদের । কেউ কেউ উন্মাদ হয়ে গেছে বলেও শোনা যায় ।
আধুনিক সমাজে তথাকথিত সেকুলারদের শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা নিয়ে কদর্য মন্তব্য করতে শোনা যায় । কিন্তু রাস হল মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলা । ভগবান কৃষ্ণের রাসলীলার আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য হল জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় মিলন । আর এই উদ্দেশ্যেই এবং শ্রীকৃষ্ণের সুমধুর বংশীধ্বনিতে মুগ্ধ হয়ে গোপিনীবৃন্দ আপনাপন কর্তব্যকর্ম বিসর্জন দিয়ে সংসারের সকল মোহ পরিত্যাগ করে বৃন্দাবনে উপস্থিত হয়ে ভগবানের চরণে নিজেদের সমর্পন করেছিলেন।।