বানা রায়, মঙ্গলকোট (পূর্ব বর্ধমান), ২৬ অক্টোবর: সেই বিয়ে ছিল বড় বিয়োগান্তক। কারণ মনসাদেবীর কোপে পড়ে বাসরঘরেই প্রাণত্যাগ করতে হয়েছিল নববধূ বেহুলার পতি লখিন্দরকে। মনসামঙ্গল কাব্যে বর্নিত আছে সেই বিয়োগান্তক কাহিনী। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের জালপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা মনসাদেবীর আরাধনার পাশাপাশি আজও পালন করেন বেহুলা-লখিন্দরের প্রতীকী বিবাহ উৎসব। এদিন শনিবার জালপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা মেতে উঠলেন বেহুলা লখিন্দরের বিবাহ অনুষ্ঠান ঘিরে।এলাকাবাসীর দাবি বেহুলার বাপেরবাড়ি হল এই মঙ্গলকোটেই । তাই বেহুলা-লখিন্দরের বিবাহ অনুষ্ঠানের রীতি আজও রয়েছে। প্রাচীন রীতি মেনেই প্রাচীন একটি বটগাছের প্রতীকী বিবাহ দেওয়া হয় জালপাড়ায়। আর বটগাছের চারিদিকে বিয়ের গায়েহলুদের সুতো বেঁধে সাত পাক ঘোরানো হয় দেবী মনসার ঘটটি। এই ধর্মীয় উৎসব চলে আটদিন ধরে। অষ্টমঙ্গলায় শেষ হয়। অনুষ্ঠান ঘিরে আয়োজন করা হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এদিন শনিবার থেকে শুরু হয়েছে উৎসব।
জালপাড়ায় এই পুজোর সাতদিন আগে থেকে স্থানীয় লোকশিল্পীরা মনসা মন্দিরে খোল করতাল সহযোগে মনসার পালাগান করেন। অষ্টম দিনে কোনও গৃহবধূ দেবী মনসার ঘট নিয়ে এই মন্দির থেকে গ্রামেরই আরএক মনসার থানে যান। সেখানেই রীতি অনুযায়ী পুরনো বটগাছকে সাক্ষী রেখে বেহুলা-লখিন্দরের প্রতীকী বিয়ে হয়। বটগাছের চারদিকে সাতপাক ঘুরে তারপর আবার মূল মন্দিরে চলে পুজো।পুজোয় ধুনো পোড়ানো হয়। এই ধুনো পোড়ানোর দৃশ্য দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন।
মনসা মন্দিরের এক সেবাইত দয়াময় পাল জানান , জালপাড়া গ্রামে বহুবছর আগে একটি পুকুর থেকে একটি প্রস্তরখণ্ড পাওয়া গিয়েছিল। সেদিন রাতে এক গ্রামবাসীর স্বপ্নাদেশ হয় ওই প্রস্তরখণ্ডে বিরাজ করছেন দেবী মনসা। তখন থেকেই ওই প্রস্তরমূর্তির পুজো হয়ে আসছে। যখন এই মূর্তিটি পাওয়া গিয়েছিল তখন ছিল কার্তিক মাস। তাই দেবীর আবির্ভাব দিবস হিসাবে কার্তিক মাসে এই পুজো হয়। গ্রামবাংলায় মনসাদেবীর পুজো বহুল প্রচলিত। তবে জালপাড়ার মনসা পুজোর রীতি একটু ব্যতিক্রমী। এলাকাবাসীর দাবি উজানিনগর বলতে মঙ্গলকোটকেই বোঝায়। মঙ্গলকোটে এক সাধুর কন্যা ছিলেন বেহুলা। তাঁর সঙ্গেই চম্পকনগরের বণিক চাঁদ সওদাগরের কনিষ্ঠ পুত্র লখিন্দরের বিবাহ হয়েছিল। তাই এই বিবাহ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ।
মনসাপুজো সাধারণত পঞ্চমী তিথিতে পালন করার রেওয়াজ বেশি। জালপাড়া গ্রামে দেবী মনসার আরাধনা হয় কার্তিক মাসেই। এদিন বিবাহের ও পুজোর অনুষ্ঠানে আনা হয় ৮৬ ঢাকির দল। রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে উৎসব পালন করা হচ্ছে জালপাড়ায়।।