এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুর্শিদাবাদ,১২ এপ্রিল : মুর্শিদাবাদের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ । ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে নামে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের হামলার শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘু হিন্দুরা । বৃহস্পতিবার রাতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে মুর্শিদাবাদের শমশেরগঞ্জ-এর জাফরাবাদের বাসিন্দা পিতা ও পুত্র হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসকে । পরিস্থিতি এতটাই হিংসাত্মক যে রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখতে না পেরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । এত হিংসার পরেও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সিপিএম মুখে কুলুপ এঁটে ছিল । অবশেষে আজ সিপিএম মৌনতা ভঙ্গ করে । মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্ট্রের তরফে আজ শনিবার একটা প্রেস বিবৃতি জারি করা হয় । কিন্তু সেখানে পুলিশের গুলিতে মৃত মুসলিম ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকলেও নৃশংসভাবে খুন হওয়া হতভাগ্য হিন্দু পিতাপুত্রের ঠাঁই হয়নি । সিপিএমের এই ভন্ডামির তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল ।
অগ্নিমিত্রা পাল সিপিএমের প্রেস বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছেন,’বামফ্রন্টের বিবৃতি। বিবৃতিতে পুলিশের গুলিতে মৃত মানুষের নাম দেওয়া হয়েছে।অথচ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এই দল বাবা ও ছেলেকে যে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে সেই নাম নেই। কারণ ওরা দুজন হিন্দু। ছিঃ। এই দল ধর্মনিরপেক্ষ? এদের রাজনীতি মানুষ ধরে ফেলেছে।’
মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্টের বহরমপুর ১৮, বিমল সিংহ রোডের অফিস থেকে আহ্বায়ক জামির মোল্লা স্বাক্ষরিত ওই প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে,গতকাল ১১ এপ্রিল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াকফ্ (WAQF) সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে এস.ডি.পি.আই, ডব্লউ.পি.আই, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংগঠন এবং তৃণমূল কংগ্রেস এই জমায়েতে ইন্ধন যোগায়। সুতি-২ নম্বর ব্লক-এর সাজুর মোড়ে এবং সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ানে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা আন্দোলনের নামে হিংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়। আগাম খবর থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেরকম সদর্থক কোন ভূমিকা গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশ প্রশাসন সঠিক ভূমিকা পালন করলে এই ধরণের ঘটনা হয়ত ঘটত না। কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ প্রশাসন। দীর্ঘক্ষণ আন্দোলন চলার পর শেষের দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি ছোড়ে বলেও শোনা যায়। সেই গুলিতে কয়েকজন জখম হয়েছে বলে জানা যায়। আন্দোলনকারীদের মধ্যে ইজাজ সেখ নামে একজন মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয় এবং আজ মারা গেছে। আজ দুপুরে ধুলিয়ানে একই পরিবারের ২ জন মারা গেছে। জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে মৃত পরিবারের সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হচ্ছে।
আজ সকালে ধুলিয়ান বাজারে পুলিশের উপস্থিতিতে বিজেপি’র নেতৃত্বে একটা মিছিল বের হয়। আগেরদিন ঐ ধরণের ঘটনার পর কেন মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল? ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামশেরগঞ্জ ব্লকের পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে রেষারেষি বাড়তে থাকে। দীর্ঘক্ষণ চলার পরেও প্রশাসনের ভূমিকা ভালো ছিল না। প্রথম দিনের শেষের দিকে বিএসএফ-কে নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে কিন্তু আজ সকাল থেকে কোন অজ্ঞাত কারণে বিএসএফ ছিল না, প্রশ্ন জাগছে সবার মধ্যে। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিজেপি-তৃণমূলের বাইনারি রাজনীতির সুযোগ করে দিতেই প্রশাসন নীরব থেকেছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের অপদার্থতার কারণে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার কারণে বিপদে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই ইস্যুতে আন্দোলনকে চাপা দিতেই বিভাজনের রাজনীতিতে মেতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আমরাও শুরু থেকেই ওয়াকফ্ (WAQF) সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি নিয়ম মেনে।
তাই, আমরা মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানাতে চাই-এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত সামরিক বাহিনী নিয়োগ করে সামশেরগঞ্জ ও সুতি-২ ব্লকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দলমত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষকে গুজবে কান না দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রীতি রক্ষার কাজে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। অবিলম্বে জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনকে জেলাস্তরে এবং প্রতিটি ব্লকস্তরে দ্রুত সর্বদলীয় সভা ডাকতে হবে। এই ঘটনায় মৃত ৩ জনের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’।

