প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ জুন : প্রশাসন থেকে বিভেদ মেটানো হলেও যেন মিটলো না!অভিভাবকদের অনেকে অনিহা প্রকাশ করায় বঙ্গের কিশোরীগঞ্জ- মনমোহনপুর প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল নিয়ে দ্বিজাতি তত্ত্ব জিয়েই রাইলো।
দ্বিজাতি তত্ত্ব,অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমানের ভেদাভেদ। এই তত্ত্বকে আঁকড়ে আজ থেকে ৭৭ বছর আগে ’ভারত’ ভাগ হয়েছিল। একই তত্ত্বে বহু বছর ধরে ’দ্বিধা-বিভক্ত’ রয়ে থাকে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের নাদনঘাট থানা এলাকার কিশোরীগঞ্জ মনমোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের হেঁসেল, রাঁধুনি ও রান্নাকরা খাবার।এমন ঘটনার কথা মঙ্গলবার জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায় প্রশাসনিক মহলে। জেলাশাসক আয়েশা রাণী এ ঘটনার কথা জানার পরেই তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর ব্লক প্রশাসন তড়িঘড়ি বুধবার ওই স্কুলে পৌছে গিয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে মূলত ব্লকের যুগ্ম বডিও জীবনকৃষ্ণ মণ্ডল,নাদানঘাট থানার আইসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ, মিড-ডে মিল দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্লকের আধিকারিক এবং স্থানীয় নসরৎপুর পঞ্চায়েতের প্রধান কানন বর্মন ও উপ-প্রধান মহবিল হোসেন মণ্ডল উপস্থিত থাকেন । এঁনারা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস ঘোষ ও অভিভাবকদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করে । বৈঠক শেষে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যান।
তবে পঞ্চায়েত প্রধান কানন বর্মন জানিয়ে দেন,’স্কুলে হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে আর মিড-ডে মিল রান্না করা যাবে না । দুই সম্প্রদায়ের রাঁধুনিকে এক সঙ্গে এক জায়গায় বসে মিড-ডে মিল রান্না করতে হবে।’ মিড-ডে মিলের হেঁশেলেও যে আর ধর্মের কোন প্রাচীর রাখা যাবে না, সেই কথাও আধিকারিকরা এদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছেন। এদিন থেকেই স্কুলের মিড- ডে মিলে ধর্মের যাবতীয় বেড়াজাল মুছে গিয়েছে বলে পঞ্চায়েত প্রধান দাবি করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন,’এদিন থেকে আমার স্কুলের মিড- ডে মিলে ধর্মের বিভেদ মুছে যাওয়ায় আমি খুব খুশি।’
তবে পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রধান শিক্ষক যাই দাবি করুন না কেন অভিভাবকরা এই সিদ্ধান্তে দ্বিধাবিভক্ত রয়ে আছেন । হিন্দু পরিবারের অনেক অভিভাবক এদিন পরিস্কার জানিয়ে দেন,আলাদা ভাবে রান্না করা না হলে তাঁদের বাড়ির ছেলে মেয়েরা স্কুলে মিড-ডে মিল খাবে না। যদিও মুসলিম পরিবারের অভিভাবকরা এমন মত পোষণ করেননি। উল্টে তাঁরা বলেন, স্কুলের মিড মে মিল রান্না নিয়ে ধর্মীয় বিভেদ এদিন থেকে উঠে যাওয়ায় আমরা খুশি। যেই রান্না করুক না কেন তাঁদের বাড়ির ছেলে মেয়েরা সেই মিডডে মিল খাবে । বিদ্যালয়ের মিড- ডে মিল রান্নার জন্য নিযুক্ত হিন্দু রাঁধুনি সোনালী মজুমদার এবং মুসলিম রাঁধুনি গেনো বিবি দু’জনেই বলেন,আমরা এদিন আর আলাদা আলাদা ভাবে মিড ডে মিল রান্না করিনি । একসথে মিলে মিডডে মিল রান্না করেছি।’ আগামী দিনেও এভাবেই মিড-ডে মিল রান্না করবেন বলে তারা জানান ।।