প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ মার্চ : আইপিএল ম্যাচ চলাকালীন ইডেনের মাঠে ঢুকে গিয়ে বিরাট কোহলিকে প্রণাম করে ধন্য ঋতুপর্ণ পাখিরা।ভগবানের আসনে স্থান দেওয়া বিরাট কোহলিকে প্রণাম করা ও আলিঙ্গন করার সাধ পূর্ণ করতে পেরে ঋতুপর্ণর এখনও ঘোর কাটেনি । তবে ছেলে ঘোরের মধ্যে থাকলেও সেই পথের পথিক হতে পারেন নি ঋতুপর্ণর বাবা-মা ও দিদিরা । পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামিন মিললেও আদালত পরবর্তী কি পদক্ষেপ নেবে, তা ভেবেই তাঁরা এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তার সাথে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ঋতুপর্ণর ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে।
ঋতুপর্ণদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার অন্তর্গত পাড়াতলের বাগ-কালাপাহাড় গ্রামে। পারিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নয়। বাবা মহাদেব পাখিরা কিছু জমি চাষ করেন।পশাপাশি এলাকায় তাঁর একটি ফলের দোকান রয়েছে। ইটের দেওয়ালের দু’কামরার নির্মীয়মান বাড়ির মধ্যেই মা, বাবা ও কলেজ পড়ুয়া দুই দিদির সঙ্গেই থাকে ঋতুপর্ণ।তাঁদের বাড়িতে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। ঋতুপর্ণর মা কাকলিদেবী একজন আশা কর্মী। বৃহস্পতিবার তিনি জানান,তাঁর ছেলে স্থানীয় পর্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র । এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।ঋতুপর্ণ ছোট বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী হয়ে পড়ে। প্রথম জামালপুরের নেতাজী অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠে গিয়ে এক প্রশিক্ষকের কাছে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে।বর্তমানে কলকাতার বেলেঘাটা স্পোর্টিং ক্লাবে ক্রিকেটের কোচিং নিচ্ছে ।আমার ছেলে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির একনিষ্ট ভক্ত।বিরাট কোহলি আমার ছেলের কাছে ভগবান তুল্য।
কাকলিদেবী আরও জানান,উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গত শনিবার আমার ছেলে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ দেখতে ইডেনে যায়। ওই দিন বিরাট কোহলিকে মাঠে স্বচক্ষে দেখে আমার ছেলে ঋতুপর্ণ আর আবেগ চেপে রাখতে পারেনি। দর্শক আসন ছেড়ে তারের ঘেরাটোপ টপকে আমার ছেলে সোজা খেলার মাঠে ঢুকেপড়ে ।ছুটে গিয়ে বিরাট কোহলির কাছে পৌছে গিয়ে বিরাট কোহলির পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ঋতুপর্ণ সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে। প্রণাম সেরেই আমার ছেলে বিরাট কোহলিকে বুকে জড়িয়ে ধরে ।
এই ঘটনা বিরাট কোহলির ভক্ত মহলে ঋতুপর্ণকে বেশ জনপ্রিয়তা পাইয়ে দিয়েছে ঠিকই। তবে ঋতুপর্ণর পরিবারে গ্রাস করেছে দূশ্চিন্তা। এ নিয়ে কাকলিদেবী ও তাঁর মেয়ে রীতু পাখিরা বলেন,’খেলা চলাকালীন ঋতুপর্ণর এই ভাবে মাঠে ঢুকে পড়াটা পুলিশ ভালভাবে নেয়নি। তাই কলকাতার ময়দান থানার পুলিশ ’ক্রিমিনাল ট্রেসপাশিং’ ধারায় মামলা রুজু করে ঋতুপর্ণকে গ্রেপ্তার করে। ওকে থানার লকআপে দু’রাত কাটাতে হয়।পরে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত শর্তশাপেক্ষে ঋতুপর্ণর জামিন মঞ্জুর করে ।’
আদালত জামিন মঞ্জুর করার পর ঋতুপর্ণ সোমবার রাতে বাড়ি ফেরে। বৃহস্পতিবার নিজের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাকলিদেবী এবং তাঁর মেয়ে রীতু বলেন,’জামিন মিললেও মামলা এখনও ঋতুপর্ণর ঘাড়ে ঝুলে রয়েছে । এই বিষয়টি তাঁদের খুব দিশ্চিন্তায় রেখেছে।’ মামলা কতদিন চলবে,পুলিশ বা আদালত ,এ নিয়ে পরবর্তীতে কঠিন কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা এই ভেবেই তাঁরা এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ।তাঁরা পুলিশ ও আদালতের কাছে ঋতুপর্ণর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আর্তি জানিয়েছেন, ঋতুপর্ণকে মার্জনা করে দেওয়ার জন্য।
এই দুশ্চিন্তার বিষয় নিয়ে ঋতুপর্ণর বাবা মহাদেব পাখিরা ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে ক্যামেরার বাইরে তিনি জানান,’ছেলের ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি।দুশ্চিন্তায় আমার রাতে ঘুম হচ্ছে না। শরীরও খারাপ লাগছে।’ বিরাট কোহলি, পুলিশ,আদালত সবার উদ্দেশ্যে ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য মহাদেব বাবু আর্জি জানিয়েছেন ।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা মামলা নিয়ে বাবা, মা ও দিদিরা চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেও গত শনিবারে ঘটনা নিয়ে এখনও নস্টালজিয়ার ভাসছে ঋতুপর্ণ।তাঁর ভগবান বিরাট কোহলিকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করা ও জড়িয়ে ধরতে পারার সাধ পূর্ণ হওয়ায় ঋতুপর্ণ নিজেকে ধন্য মনে করছে। ভগবানকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারার উচ্ছাস সে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারে নি। এলাকার ক্রীড়া মোদিদের কাছে ঋতুপর্ণ এখন যেন সেলিব্রেটি বনে গিয়েছে। অনেকেই তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলছে। এমনকি তাঁর বাড়িতে সংবাদ মাধ্যমের যাতায়াতও বেড়ে গিয়েছে।
পায়ে প্যাড ও গ্লাভস পরা হাতে ব্যাট ও বল নিয়ে এদিন বাড়ির উঠানে একাকি নিজের মনে প্র্যাক্টিস করে যাচ্ছিল ঋতুপর্ণ।পরে তাঁর সঙ্গে সঙ্গত দেয় পাড়ার এক খুদে। প্র্যাক্টিসের সময়েও ঋতুপর্ণর পরণে ছিল সেই একই জমা প্যান্ট । এর কারণ প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণ জানায়, ‘ভগবান বিরাট কোহলি স্যারকে আমি যখন বুকে জড়িয়ে ধরি তখন আমার পরণে ছিল হাল্কা আকাশী রঙের এই জামাটাই।আমার এই জামাটা আমার ভগবানের শরীরের স্পর্শ পেয়েছে। তাই এই জামাটা আমার কাছে অগাধ মূল্যবান। কোন বিত্তশালী ব্যক্তি কোটি কোটি টাকা দিয়ে আমার কাছ থেকে এই জামাটা নিতে চাইলেও দেব না।এই জামাটাকে আমি আজীবন আঁকড়ে থাকবো। সংরক্ষণ করে রাখবো জামাটা।’
বিরাট কোহলির কাছে কি আবেদন রাখবে ? এর উত্তরে ঋতুপর্ণ বলেন,’আমি ক্রিকেট খেলে অনেক বড় জায়গায় যেতে চাই। তার জন্য ভাল জায়গায় প্রশিক্ষণ পাওয়ার সূযোগ যদি আমার ভগবান বিরাট কোহলি স্যার আমায় করেদেন তাহলে আমি ধন্য হব।’ খেলা চলাকালীন ইডেনের মাঠে অনধিকার প্রবেশ ঘটিয়ে বিরাট কোহলিকে প্রণাম করা ও জড়িয়ে ধরার জন্য পুলিশ তো কড়া ধারায় মামলা রুজু করছে । জামিন মিললেও মামলা তো এখনও চলবে,আদলতের ধার্য করে দেওয়া দিনে আদালতে গিয়ে হাজিরাও তো দিতে হবে,এসব নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে না? উত্তরে ঋতপর্ণ বলে,’আমি কোন অপরাধ মানসিকতা নিয়ে শনিবার ইডেনের মাঠে প্রবেশ করিনি। আমি মাঠে প্রবেশ করেছিলাম আমার ভগবান বিরাট কোহলি স্যার কে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। হ্যাঁ, আমি আবেগের বসে এমনটা করে ফেলেলেও আইনের চোখে সেটা অপরাধ। তবুও আমি আশাবাদী আমার ভগবান বিরাট কোহলি স্যার,পুলিশ কর্তাগণ ও বিচারক মহাশয় আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে মামলা থেকে নিস্পত্তি দেবেন!’।

