এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ জুলাই : ফের ভোটের নামে কার্যত প্রহসন হল এরাজ্যে ! বুধবার রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্র – মানিকতলা, রায়গঞ্জ,রানাঘাট দক্ষিণ ও বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচন হয়েছে । প্রায় সর্বত্রই ছিল রাজ্যের সেই চেনা সন্ত্রাসের ছবি । কোথাও পড়ল দেদারে ছাপ্পা,কোথাও চলল গুলি,কোথাও ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ । এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে । তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন,’যেভাবে ভোট হল, তার থেকে ভোট না হওয়াই ভাল ছিল ।’ তিনি মানিকতলার । ৮৯ টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন,’এভাবে ভোট করে সরকারি অর্থের অপচয় করার থেকে ওয়াকওভার দিয়ে দেওয়াই ভাল ।’
বুধবার বিধানসভা উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রায়গঞ্জের অধিকাংশ বুথে দেদারে ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । বিজেপির অভিযোগ, বেলা বাড়তেই শাসকদলের নেতাকর্মী ও পঞ্চায়েত সদস্যরা বুথগুলি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় এবং দেদার ছাপ্পা দেয় । হিন্দু প্রধান এলাকাগুলিতে হিন্দু ভোটারদের বুথমুখো হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । রায়গঞ্জ পুরসভার ১৪ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রাক্তন কাউন্সিলার অনিরুদ্ধ সাহা ও বিমলজ্যোতি সিনহার বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী মানস কুমার ঘোষ । এছাড়া তিনি রায়গঞ্জ শহরে বেশ কিছু ওয়ার্ডে বুথের ভেতরে বসে থেকে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছেন প্রাক্তন কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ যে রায়গঞ্জের ২১২ টি বুথের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বুথ বাদে প্রতিটি বুথ দখল করে নিয়েছিল শাসকদল।
পাশাপাশি মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের অভিযোগ, প্রতিটি ওয়ার্ডে ৭-৮ জন করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঘিরে রেখেছিল । তার আগের রাতে বেলেঘাটায় তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভোটারদের শাসিয়ে এসেছিল বলে অভিযোগ তার । বিজেপির এজেন্ট পর্যন্ত বসতে দেওয়া হয়নি । বিজেপির এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দিয়ে তৃণমূলের ৪-৫ জন করে লোক বিনা বাধায় ভোট করেছে ।
জানা গেছে,ভোট ঘিরে রানাঘাট দক্ষিণের পায়রাডাঙ্গা পঞ্চায়েতের ২ নম্বর প্রীতিনগর এলাকায় মঙ্গলবার মাঝরাতে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে । বিজেপির পোলিং এজেন্ট শ্রাবন্তী দে-র বাড়িতে ভাঙচুর ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে । এছাড়া অভিযোগ যে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য অমল বিশ্বাস ও গোলক মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায় ৩০ জন দুষ্কৃতী। পরপর দুটি বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলায় আহত হয় বাড়ির এক নাবালিকা সদস্য।এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রানাঘাট নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে এটিআর তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। দু’ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচনী আধিকারিক এবং পুলিশ সুপারের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর।
পাশাপাশি উপনির্বাচন ঘিরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাগদা। বাগদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ডিহিলদহ ৮২ নম্বর বুথ এলাকায় বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাসকে মারধর করা হয়। তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ । তৃণমূলের কর্মীরা এলাকায় বুথ জ্যাম করে রেখেছে বলে অভিযোগ পেলে সেখানে যান বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ডিহিলদহের সেই ঘটনায় অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চাইল নির্বাচন কমিশন ৷
রাজ্যের চার বিধানসভার আসনের উপনির্বাচনে সন্ত্রাসের আবহ প্রসঙ্গে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের কথায়,’মমতার শাসনে গণতন্ত্র ছুটিতে! তাই তো বাংলায় ভোট মানেই ভাওলেন্স আর যেনতেনপ্রকারেণ চলে বিরোধী দমন। আজ নদিয়ায় চার কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ঠিক আগের দিন রাতে বাইকবাহিনীর তাণ্ডব চলে। নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি এজেন্টের বাড়িতে হামলা করে সেই দুষ্কৃতিরা। লোহার রড দিয়ে BJP কর্মী গৌতম বিশ্বাসকে মারধর করা হয়। এরপর উকিলনাড়া মিস্ত্রিপাড়া এলাকাতেও ঘটে সেই একই ঘটনা। এলাকার মানুষজন কার্যত আতঙ্কগ্রস্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাত্রিবেলা বাইকে করে মুখে কাপড় বেঁধে এসে লোহার রড নিয়ে আসে প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ জন লোক। তাঁরা বেছে বেছে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে হামলা-মারধর চালায়। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই কী আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে চায় তৃণমূল ?’