প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ মার্চ : পড়ুয়ারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।তাই দুই শিক্ষক শুধু নিয়ম করে স্কুলে আসেন,আর গল্পগুজব করে সময় কাটিয়ে যথা সময়ে বাড়ি চলে যান । শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে যখন তোলপাড় চলছে সেই সময়ে পড়ুয়ার অভাবে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুড়ি জুনিয়র হাই স্কুলের ধোঁকার বিষয়টি সামনে এসেছে । স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে জেলা স্কুল দপ্তর,কারুরই জানা নেই ফের কবে এই স্কুল পড়ুয়াদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে।কেনই বা বাড়ির ছেলে মেয়েদের এই স্কুলে পড়াতে পাঠানোর ব্যাপারে অনাগ্রহী অভিভাবকরা । উত্তর খুঁজছে প্রশাসন।
কাটোয়া মহুকুমার কেতুগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের জনবহুল এলাকা গঙ্গাটিকুড়ি । শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার ২০১৩ সালে এই এলাকায় একটি স্কুল তৈরির অনুমোদন দেয় ।তিন কাঠা জমির উপর তিনটি শ্রেণিকক্ষ,অফিস ঘর ও মিডডে মিলের রান্নার ঘর সমেত গঙ্গাটিকুড়ি জুনিয়র হাই স্কুল ভবন প্রতিষ্ঠা পায়। শতাধিক পড়ুয়া নিয়ে এই স্কুলে শুরু হয় পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পঠন পাঠন ।স্কুলে পঠন পাঠনের দায়িত্ব বর্তায় দুই অবসর প্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, নুরুল আমিনের উপরে। প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে এই স্কুলের প্রতি পড়ুয়া এবং তাঁদের অভিভাবকদের মোহ ভঙ্গ হতে শুরু করে। এই বছর খাতায় কলমে স্কুলের পড়ুয়া হিসাবে মাত্র একজনের নাম থাকলেও ওই পড়ুয়াও আর স্কুলে আসেন না। পড়ুয়া বিহীন নিস্তব্ধ এই স্কুলে এখন শুধু নিয়মকরে আসেন দুই শিক্ষক । তাঁরাই স্কুলের গেট খোলেন। তবে কো পড়ুয়া না থাকার জন্য ক্লাস হয়না বলে ঘন্টা বাজানোর আর প্রয়োজন হয় না। ক্লাস রুমের বেঞ্চ ,ব্লাকবোর্ড সবেতে পড়ে গিয়েছে ধুলোর আস্তরণ । শিক্ষকরা স্কুলে এসে শুধু অফিস রুমে বসে গল্পগুজব করে সময় কাটান । টিফিন খেয়ে যথা সময়ে স্কুলে গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে শিক্ষকরা বাড়ি চলে যান ।
স্কুলটির এমন দুর্দশা তৈরি হওয়া নিয়ে নানা কথা গ্রামবাসীরা শুনিয়েছেন। গ্রামবাসী গায়েত্রী মন্ডল ও উৎপল বৈরাগ্যর কথায়,দুই জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল । তার পর থেকে বছরের পর বছর বছর কেটে গেলেও আজ অবধি স্কুলে কোনো স্থায়ী শিক্ষক নেই।শিক্ষকের আকালে স্কুলে পড়ুয়াদের লেখা পড়া ঠিকঠাক হয় না।এইসবের কারণে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে অভিভাবকদের এই স্কুলের প্রতি মোহভঙ্গ হতে শুরু করে।পরবর্তী সময়ে বাড়ির ছেলে মেয়েদের এই ষ্কুলে আর ভর্তি করান না অভিভাবকরা । তাই এই স্কুল এখন পড়ুয়া শূন্য হয়ে পড়েছে। আর স্কুলটির দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল জানিয়েছেন,’এখন খাতায় কলমে এক জন পড়ুয়া স্কুলে থাকলেও সে স্কুলে আসে না।স্কুলটি পড়ুয়া শূন্য হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষকের ব্যাখ্যা, সম্ভবত সঠিক পরিকাঠামো না থাকার কারণেই তাঁদের স্কুলের এই হাল হয়েছে ।’
কেতুগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বি ডি ও অমিত সাউ এর কথাতেও উঠে এসেছে স্কুলটিতে শিক্ষকের আকালের কথা। বিডিও বলেন,জানতে পেরেছি গঙ্গাটিকুড়ি জুনিয়র হাই স্কুলটি দু’জন মাত্র অতিথি শিক্ষক মিলে চালান। স্কুলে কোনো স্থায়ী শিক্ষক নেই। অবিভাবকরা তাঁদের ছেলে মেয়েদের ওই স্কুলে ভর্তি করতে না চাওয়াতে স্কুলটি ধুঁকছে । বিডিও এমনটা জানালেও জেলার স্কুল পরিদর্শক শ্রীধর প্রামাণিক বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখে তবেই বলতে পারবো ।।