প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ নভেম্বর : শাসক দলের কোটিপতি নেতার নাম জায়গা করে নিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় । কিন্তু সেই তালিকায় জায়গা পায়নি পূর্ব বর্ধমানের
খণ্ডঘোষেরই পূর্বচক গ্রামের হবিবুর ইসলামের পরিবারের কারুর নাম। বৃহস্পতিবার রাতে হাবিবুরের মাটির বাড়ি ভেঙে পড়লে তার নিচে চাপা পড়েন পরবারের তিন বধূ। তাদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে হাবিবুর শুক্রবার বলেন,’সরকারী প্রকল্পে ঘর পাবার জন্যে একাধিকবার বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঘর মেলেনি।যদি সরকারী ঘর পেতাম তাহলে আমার বৌমাকে এইভাবে অকালে প্রাণ খোয়াতে হত না ।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে মাটির বাড়ি ভেঙে চাপা পড়েন পূর্বচক গ্রামের হাবিবুর ইসলামের পরিবারের তিন মহিলা তারা হলেন ,মধুরানী বেগম,সাবানা বেগম ও
জুলেখা বেগম। জেসিবি মেশিনের সাহায্যে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে পুলিশ তিনজন কে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর জখম জুলেখা বেগম কে মৃত বলে গোষণা করেন। বাকি দু’জন বর্ধমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পরিবারের এক বধূকে হারানোর আক্ষেপ এখন বুকে নিয়েই এখন ত্রিপলের আচ্ছাদনের নিচে দিন কাটাতে হচ্ছে হাবিবুর ইসলামের পরিবারকে ।
পরিবারের এক সদস্য ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শবনম পরভিন এদিন বলেন,বৃহস্পতিবার রাতে
হঠাৎ আমার কাকী বলেওঠেন ঘর ভেঙে পড়ছে। কোনোক্রমে আমি দৌড়ে নিচে নেমে প্রাণ বাঁচাই।’
পরিবারে আর এক সদস্য মুন্সি সায়দুল রিজভি জানান,“সার্ভে হলেও আমাদের গ্রামের অনেকেই সরকারী প্রকল্পের পাকা ঘর পান নি । আমরাও পাই নি । আমি নিজে বিডিও কে সব নথি দিয়েছিলাম’। পাক ঘর মিললে হয়তো এইদিন দেখতে হত না“।
এলাকার বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী,হাবিবুর ইসলামের দোতলা মাটির বাড়ির নীচের তলার ঘরের মেঝে পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই মতো বাড়ির চারদিকে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছিল।
গ্রামবাসীদের অনুমান,হয়তো খোঁড়াখুড়ির জন্যে
ভিত আলগা হয়ে যাওয়াতেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান উতোর
তঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব ঘটনাকে একটা দুর্ঘটনা বলে দাবি করলেও বিরোধীরা তা মানত চায় নি । বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র কটাক্ষ করে বলেন,“এই খণ্ডঘোষ ব্লকের শাঁকারি ১ অঞ্চলের তৃণমূলের সবাপতি জাহাঙ্গীর শেখ কোটিপতি নেতা হিসাবেই এলাকায় পরিচিত।তাঁর রাজপ্রাসাদ তুল্য চার তলা পাকা বাড়ি রয়েছে । তবু জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের অনেকের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় স্থান পেয়েছিল । অথচ প্রকৃতই যাঁর পাক বাড়ির দরকার ছিল সেই
হাবিবুর ইসলামের পরিবার বহু আবেদন করেও সরকারী প্রকল্পের বাড়ি পেলেন না । তৃণমূলের রাজত্বে গরীব মানুষ এই ভাবেই সরকারী সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মৃত্যুঞ্জয় বাবু মন্তব্য করেছেন ।
যদিও খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন,’বিরোধীদের কাজ বিরোধীতা করা।তবে
ওই পরিবার কেন ঘর পায় নি সেটা আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’ আর বিডিও (খণ্ডঘোষ)অভীক কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’প্রশাসন ওই পরিবারের পাশে আছে।বাড়ির আবেদন প্রসঙ্গে বিডিও বলেন,আমি কোন আবেদন পত্র পায় নি।তবে গোটা বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি ।’।