এইদিন ওয়েবডেস্ক,০৭ ডিসেম্বর : ভোটব্যাঙ্কের লোভে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকের মর্যাদা দেওয়ার দৃষ্টান্ত শুধু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মত অবিজেপি শাসিত রাজ্যেই নেই, বরঞ্চ একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় ইউরোপের দেশগুলিতেও । ভারতের মত ইউরোপের দেশগুলির বামপন্থী মানসিকতার দলগুলির ভূমিকা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক । সেকুলারিজমের নামে গোটা দেশের জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিচ্ছে তারা । ফলে প্রতি বছর ব্যাপক হারে বেড়ে চলে মুসলিম অভিবাসীর সংখ্যা । এরপরেও দেশগুলি সচেতন না হলে ২২০০ সালের মধ্যে গোটা ইউরোপ মুসলিম বহুল হয়ে যাবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেছে পিউ রিসার্চ রিভিউ । এনিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছেন জার্মানির প্রাক্তন শীর্ষ অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর প্রধান হ্যান্স-জর্জ মাবেন (Hans-Georg Maaßen)।
হ্যান্স-জর্জ মাবেন একটি নতুন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ব্যাপক অভিবাসনের কারণে ইউরোপ একটি নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, ইসলাম ইউরোপকে জয় করার জন্য প্রস্তুত এবং জার্মানি ও অস্ট্রিয়া এই সংকট থামাতে অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু তারা সেটা বেছে নিচ্ছেন না ।’ তিনি বলেন,’একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতি আমাদের কাছে আসছে । আমরা এর জন্য মোটেও প্রস্তুত নই, কারণ আমরা সহিংসতার মাধ্যমেও দ্বন্দ্ব নিরসনে অক্ষম, যেমন আরব রাষ্ট্রগুলির পারিবারিক গোষ্ঠীগুলি করে। এই লোকেরা সহিংসতার মাধ্যমে দ্বন্দ্বের সমাধান করে, যেখানে মধ্য ইউরোপের লোকেরা মনে করে যে এটি কেবল আদালতের মাধ্যমেই করা যেতে পারে ।’
মাবেন ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে সংবিধানের সুরক্ষা অফিসের (বিএফভি) সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন । জার্মান পিএফও টিভিতে সাক্ষাৎকারের তিনি এই সমস্ত আলোচনা করেন । ম্যাসেন বলেন,’ ইউরোপীয়রা ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। একদিকে, কারণ তারা এই দ্বন্দ্বকে আসতে দেখতেও অক্ষম এবং অন্যদিকে, কারণ তারা একইভাবে দ্বন্দ্বের সমাধান করতে অক্ষম । শেষ পরিণতি হবে আমাদের ইউরোপীয় সংস্কৃতি ধীরে ধীরে ধ্বংস ।’
জার্মানির বৃহত্তম সংবাদপত্রগুলির একটিতে একটি বিতর্কিত ঘৃণাপূর্ণ নিবন্ধে জাতিগত জার্মানদের “মৃত্যু” উদযাপন করছেন একজন ইরানী । মাবেনের মতে ইউরোপীয়দের কোনো দূরদৃষ্টি ও কোনো মিশন নেই, যেখানে অন্যান্য প্রতিযোগী সংস্কৃতির(ইসলাম) তারা কি এবং তাদের উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা রয়েছে।
তিনি বলেন,’আমরা কোথায় যেতে চাই তা আমরা নিজেরাই জানি না। ২০৩০ সালে জার্মানি বা অস্ট্রিয়া কেমন হওয়া উচিত? আমরা কেবল এই মুহূর্তে বেঁচে আছি এবং তাই আমরা অন্যদের কাছে হারাচ্ছি । যাদের ধর্ম বা আদর্শ আছে যারা জানে তারা কোথায় যেতে চায়। আমাদের একটি মিশনের অভাব রয়েছে ।’ তিনি বলেন,’বেশিরভাগ মুসলমানরা সংস্কৃতি, ধর্ম এবং পরিবার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন সচেতনতা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। ধর্মনিরপেক্ষ ইউরোপে, ধর্ম এবং পরিবার – যদি আদপেই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয় – তবে এটি ব্যক্তির জন্য একটি বিষয়, কিন্তু এই(ইসলাম) সংস্কৃতিতে এটি গোষ্ঠীর বিষয় ।’
মাবেন বলেছেন যে ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরা সক্রিয়ভাবে গণ অভিবাসনের অনুমতি দিচ্ছেন কারণ তার মতে,’আমাদের রাজনীতিবিদরা ভিন্ন জনসংখ্যা চান। রাজনৈতিক বামপন্থীরা জার্মান বিরোধী মতাদর্শের পথ অনুসরণ করে। একটি জনসংখ্যা যত বেশি ভিন্নধর্মী, তত কম সে নিজেকে প্রকাশ করতে এবং গণতান্ত্রিক বক্তব্য রাখতে সক্ষম হয় । যত বেশি রাজনীতি অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের গ্রহণ করে এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করে, তত বেশি রাজনীতি রাষ্ট্রের জনগণকে নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করে । এই অভিবাসীরা তখন স্থানীয়দের চেয়ে ভিন্নভাবে ভোট দেয় ।’
মাবেন সাক্ষাৎকারের সময় বলেছিলেন যে জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ার মতো দেশগুলিতে অভিবাসন বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে, তবে তাদের সচেতন প্রচেষ্টা নেই । প্রাক্তন গুপ্তচর প্রধান বলেছেন,’জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া প্রতিদিন সীমান্তে লোকদের প্রত্যাখ্যান করা শুরু করতে পারে – তৃতীয় দেশের নিয়ন্ত্রণের কারণে হয় না । এছাড়াও, রাষ্ট্র সেই সমস্ত লক্ষ লক্ষ বিদেশীর নির্বাসন বা স্বেচ্ছায় প্রস্থান নিশ্চিত করতে পারে যারা একীভূত হতে চায় না এবং রাষ্ট্রের সামাজিক সুবিধার নিয়েও যারা অপরাধ করে ।’
এভাবে ইউরোপ দ্রুত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন হতে থাকলে মাবেন-এর সতর্কবাণী খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ইতিমধ্যেই পিউ রিসার্চ (Pew Research) উল্লেখ করেছে যে ইউরোপের মুসলিম জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ তিনগুণ হয়ে ৭৬ মিলিয়ন হতে পারে । পিউ রিসার্চ রিভিউ ২২০০ সালের মধ্যে সমগ্র ইউরোপ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, যখন কিছু ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশে, যেমন গ্রীস, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং ব্রিটেনে, জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশেরও বেশি মুসলিম হবে ।।