চোখ প্রাণীর আলোক-সংবেদনশীল অঙ্গ ও দর্শনেন্দ্রীয়। প্রাণিজগতের সবচেয়ে সরল চোখ কেবল আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির পার্থক্য করতে পারে। উন্নত প্রাণীদের অপেক্ষাকৃত জটিল গঠনের চোখগুলো দিয়ে আকৃতি ও বর্ণ পৃথক করা যায়। অনেক প্রাণীর (এদের মধ্যে মানুষ অন্যতম) দুই চোখ একই তলে অবস্থিত এবং একটি মাত্র ত্রিমাত্রিক “দৃশ্য” গঠন করে। আবার অনেক প্রাণীর দুই চোখ দুইটি ভিন্ন তলে অবস্থিত ও দুইটি পৃথক দৃশ্য তৈরি করে (যেমন – খরগোশের চোখ)।ইউরোপিয়ান বাইসনের চোখ
জটিল চোখ আকার এবং রং আলাদা করতে পারে। অনেক প্রাণীর চাক্ষুষ ক্ষেত্র, বিশেষ করে শিকারীর, গভীরতার উপলব্ধিকে উন্নত করার জন্য দুই চক্ষুর উপযোগী দৃষ্টিভঙ্গির বড় অংশগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে, চোখগুলি এমনভাবে অবস্থিত থাকে যাতে ক্ষেত্রের সর্বাধিক পরিমাণ দেখা যায়, যাদের একক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যেমন খরগোশ এবং ঘোড়া।
ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রাণীদের মধ্যে প্রথম আদি-চোখ অভিব্যক্ত হয়। ৬০০ কোটি বছর আগে পশুর শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষদের দৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় জৈবরাসায়নিক সরঞ্জামাদি ছিল এবং আরো উন্নত চোখ প্রধান পর্বের ছয়টির মধ্যে পশু প্রজাতির ৯৬% প্রবর্তিত হয়েছে। বেশিরভাগ মেরুদন্ডী এবং কিছু শামুক জাতীয় প্রাণীর মধ্যে, চোখ আলো প্রবেশ করতে দিয়ে, চোখের পিছনে একটি হালকা সংবেদনশীল প্যানেল যেটি রেটিনা হিসাবে পরিচিত তাতে, আলো নিক্ষেপ করে কাজ করে। কোন কোষগুলি (রঙের জন্য) এবং রড কোষ (অল্প আলোর কন্ট্রাস্টের জন্য) রেটিনাতে সনাক্ত করে এবং দর্শনের জন্য স্নায়ু সংকেতগুলিতে রূপান্তর করে। চাক্ষুষ সংকেত তারপর অপটিক স্নায়ু মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। বিশেষত এই ধরনের চোখ প্রায়শই গোলাকার হয়, একটি স্বচ্ছ জেল মত পদার্থ vitreous humor দ্বারা ভরাট হয়, একটি ফোকাসিং লেন্স এবং প্রায়ই একটি কনীনিকার সঙ্গে;কনীনিকা বা আইরিশের চারপাশের মাংসপেশীর শিথিল বা দৃঢ়তা চোখের পুতলি অথবা পিউপিলের আকার পরিবর্তন করে, যার ফলে চোখটিতে ঢুকে যাওয়া আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো ছড়িয়ে পড়ে এবং অত্যধিক আলো কমিয়ে বিচ্যুতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সর্বাধিক জীবজন্তুর জাতিবিশেষ, মাছ, উভচর প্রাণী এবং সাপের চোখগুলি লেন্সের আকৃতিগুলি অপরিবর্তনীয়, এবং লেন্স দূরবীন তৈরি করে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দৃষ্টিগোচর হয় – একটি ক্যামেরা যেভাবে ফোকাস করে।
যৌগিক চোখগুলি সন্ধিপদীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং অনেক সহজ উপায়ে গঠিত হয়, যা শারীরিক বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে, একটি পিক্সেল্যাট ইমেজ বা একাধিক ইমেজ, প্রতি চোখ প্রতিস্থাপন করতে পারে। প্রতিটি সেন্সরের নিজস্ব লেন্স এবং আলোকসংবেদী কোষ রয়েছে। কিছু চোখ ২৮০০০ এর মতো সেন্সর আছে, যা ষড়্ভুজাকারভাবে সাজানো হয় এবং যা একটি পূর্ণ ৩৬০ ° দর্শনের ক্ষেত্র দিতে পারে। যৌগিক চোখ গতিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বেশিরভাগ স্ট্রেপসিপেরার সহ কিছু আর্থপোড, মাত্র কয়েকটি দিকের যৌগিক চোখ, প্রতিটিতে একটি রেটিনা রয়েছে যা ছবি, দৃষ্টি তৈরি করতে সক্ষম। প্রতিটি চোখের একটি ভিন্ন জিনিস দেখার সঙ্গে, সমস্ত চোখ থেকে একটি জড়িত ইমেজ মস্তিষ্কের মধ্যে উত্পাদিত হয়, খুব ভিন্ন, উচ্চ-রেজল্যুশন ছবি তৈরি করে।
অতিবর্নালীযুক্ত বর্ণের বিস্তারিত বিশ্লেষণে, মান্টিস চিংড়ি বিশ্বের সবচেয়ে জটিল রং দৃষ্টি ব্যবস্থার জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।
ট্রাইলোবাইট, যা এখন বিলুপ্ত, অনন্য যৌগিক চোখের অধিকারী। তারা তাদের চোখের লেন্স গঠন স্পষ্ট ক্যালসাইট স্ফটিক ব্যবহৃত। এগুলি, তারা অন্যান্য আর্থপোড, যা নরম চোখ আছে তাদের থেকে পৃথক। সেরকম একটি চক্ষুর লেন্সের সংখ্যা বিভিন্ন হয়, তবুও কিছু ট্রাইলোবাইটের একটিমাত্র ছিল, এবং কিছুদের এক চোখের মধ্যে হাজার হাজার লেন্স থাকত।
মানুষের চোখ
সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
চক্ষু বা চোখ হল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় । আমাদের চোখ দুটি মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অক্ষিকোটরে অবস্থিত । প্রতিটি চোখ একটি অক্ষিগোলক, একজোড়া অক্ষিপল্লব এবং একটি অশ্রুগ্রন্থি নিয়ে গঠিত ।
অক্ষিগোলকের প্রধান অংশগুলি হল : কনজাংটিভা, কর্নিয়া, আইরিশ, লেন্স বা মনি, স্ক্লেরা, কোরয়েড এবং রেটিনা ।
মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশগুলির সংক্ষিপ্ত গঠন:-
[i] অক্ষিপল্লব [Eyelids]:- চোখ দুটি সঞ্চারশীল একটি ঊর্ধপল্লব ও একটি নিম্নপল্লব দিয়ে ঢাকা থাকে । অক্ষিপল্লবের কিনারায় এক সারি পল্লব লোম [eye lash] থাকে ।
• কাজ:- বাইরের আঘাত ও ধুলোবালির হাত থেকে চোখ দুটিকে রক্ষা করা হল অক্ষি পল্লবের কাজ ।
[ii] কনজাংটিভা বা নেত্রবর্ত্মকলা [Conjunctiva]:- এটি অক্ষিগোলকের একবারে বাইরের দিকে অবস্থিত একরকম স্বচ্ছ পাতলা আবরণ ।
• কাজ:- কনজাংটিভা চোখের আভ্যন্তরীণ অংশকে রক্ষা করে ।
[iii] করনিয়া বা অচ্ছোদপটল [Cornea]:- এটি অক্ষিগোলকের সামনের দিকে অবস্থিত স্বচ্ছ স্তর । কনজাংটিভা করনিয়ার ওপর থাকে ।
• কাজ:- করনিয়া প্রতিসারক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ।
[iv] আইরিশ বা কনীনিকা [Iris]:- এটি করনিয়ার নীচে এবং লেন্স -এর ওপরে অবস্থিত স্তর । এটির কেন্দ্রে অবস্থিত ক্ষুদ্র ছিদ্রটিকে তারারন্ধ্র বা পিউপিল [pupil] বলে ।
• কাজ:- কনীনিকা তারারন্ধ্রকে ছোটো-বড়ো করে চোখে আলো প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ।
[v] লেনস বা মণি [Lens]:- এটি কনীনিকার পরবর্তী দ্বি-উত্তলাকার স্বচ্ছ অংশ ।
• কাজ:- লেনস আলোক রশ্মির প্রতিসরণে মুখ্য ভুমিকা গ্রহণ করে ।
[vi] স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডল [Sclera]:- এটি অক্ষিগোলকের পিছনের 5/6 অংশ জুড়ে অবস্থিত একবারে বাইরের আবরণী । এই আবরণীটি তন্তুময় ।
• কাজ:- স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের প্রধান কাজ হল চোখের ভেতরকার অংশগুলিকে রক্ষা করা ।
[vii] কোরয়েড বা কৃষ্ম মণ্ডল [Choroid]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাতে অবস্থিত স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের পরবর্তী আবরণ । এই অংশে মেলানিন নামে রঞ্জক থাকায় এই অংশটি কালো রং -এর হয় ।
• কাজ:- কোরয়েড বা কৃষ্ম মণ্ডল আলোকের প্রতিফলন রোধ করে এবং রেটিনাকে রক্ষা করে ।
[viii] রেটিনা বা অক্ষিপট [Retina]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত কোরয়েড স্তরের পরবর্তী স্নায়ুস্তর । এই স্তরটি রড [rod] এবং কোন [cone] নামে দু’রকম স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত ।
• কাজ:- রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় । রড কোষ ও কোন কোষ আলো ও বর্ণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে । রড কোষ মৃদু আলো এবং কোন কোষ উজ্জ্বল রঙ্গিন আলোয় সংবেদনশীল ।
[ix] অশ্রুগ্রন্থি [Tear Gland]:- প্রতি চোখের অক্ষিকোটরের বহির্ভাগে এবং ঊর্ধঅক্ষিপল্লবের নীচে ছোট্ট বাদামের মতো দেখতে একটি করে অশ্রুগ্রন্থি থাকে । অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণকে অশ্রু [tear] বলে ।
কাজ:-
(ক) অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণ নালি পথে বাহিত হয়ে কনজাংটিভার ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং চোখকে ভিজে রাখে ।
(খ) অশ্রু চোখের উপরিভাগে ধুলোবালি পড়লে তা ধুয়ে দেয় ।
(গ) এছাড়া অশ্রুতে অবস্থিত সোডিয়াম কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড জীবাণুনাশক পদার্থ হিসেবে কাজ করে ।
অন্যান্য প্রাণীর চোখে পৃথিবী কেমন দেখায়?
বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর রূপ-রং-রস পুনরায় উপভোগ করতে মৃত্যুর পর শঙ্খচিল কিংবা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশ। কবি এই পৃথিবীকে ফিরে দেখতে চেয়েছিলেন ঘুঘুর চোখে, কিংবা নিতান্তই সাদাসিধে ভোরের কাক হয়ে।
আচ্ছা, কখনো ভেবেছেন, আমরা যেভাবে পৃথিবীটাকে দেখতে পাই, যে রঙে, যে ধরনে, প্রাণিজগতের বাকিরাও কি একইভাবে দেখে? না, তাদের দেখার চোখ মানুষের থেকে একেবারেই আলাদা!
কে জানে হয়তো কবি এ কারণেই পৃথিবীর স্বাদ নিতে চেয়েছিলেন অন্য চোখে। সুজলা-সুফলা এই পৃথিবী প্রাণিজগতের চোখে কেমন, আসুন তা জেনে নিই—
মাছির চোখে
বহুমুখী দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন প্রাণী হলো মাছি। হাজারের ওপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখ একই সময়ে একসঙ্গে কাজ করে একটা দৃশ্যপট তৈরি করে, আর মাছি সেটাই দেখতে পায়। তারা অতি বেগুনি রশ্মিও দেখতে পায়, যদিও মানুষের তুলনায় মাছির চোখে পৃথিবী খানিকটা শ্লথগতিতে ঘোরে।
কুকুরের চোখে
দিনের আলোয় কুকুরের দৃষ্টি ক্ষমতা অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা অনেক রঙের কাছেই অসহায়, সেসব রং তাদের চোখে ধরা দেয় না। পৃথিবী তাদের চোখে দৃশ্যমান হয় খানিকটা কুয়াশায় মুড়িয়ে কিছুটা ধূসর হয়ে! অন্যদিকে, কুকুর কিন্তু রাতে বেশ ভালো দেখতে পায়। এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ানো আর আশপাশের পরিবেশ বোঝার ক্ষমতা তখন কিন্তু বেশ প্রবল।
মাছের চোখে
মাছেদের চোখে রং আবার একটু বেশি। যেখানে মানুষই অতিবেগুনি রশ্মিতে দেখতে পায় না, সেখানে কিছু কিছু মাছ তাও দেখতে পায়! মাছেদের চোখে পৃথিবী একটু কাছাকাছি এসে প্রসারিত হয়ে ধরা দেয়, যেমনটা আতশি কাচের মধ্য দিয়ে আমরা দেখি! আর এ কারণেই বোধ হয় মাছ সারাক্ষণ অবাক চোখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছুটোছুটি করে।
পাখির চোখ
জীবনানন্দ পাখি হতে চেয়েছেন বারবার। তিনি হয়তো জানতেন, পাখিদের দৃষ্টি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ! অতিবেগুনি রশ্মিতে পাখিরা দেখতে পায়, আর দিনের আলোয় দেখতে পায় রঙের ছায়াও! নিশাচর পাখিরা রাতের অন্ধকারে বেশ স্পষ্ট দেখতে পায়, যেটা আমরা পারি না।
সাপের চোখে
অনেকের ধারণা, সাপ চোখে দেখে না। ধারণাটি ভুল, হ্যাঁ, এটা সত্যি যে সাধারণত সাপের দৃষ্টিশক্তি কুকুরের চেয়েও নিম্নমানের, তবে তারা দেখতে পায় অবশ্যই। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, রাতের বেলা তারা যেকোনো আধুনিক অবলোহিত রশ্মির প্রযুক্তির চেয়েও ১০ গুণ বেশি প্রখরতা দিয়ে তাপীয় বিকিরণ দেখতে পায়। সাপকে যন্ত্রণা না করলে সাপও কাউকে যন্ত্রণা করে না। তবে তার চোখে যখনই আশপাশে কোনো কিছুর চলাফেরা শুরু হয়, তাতে সে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়। তখন কপাল মন্দ থাকলে কামড় খাওয়াই স্বাভাবিক!
ইঁদুরের চোখে
‘টম অ্যান্ড জেরি’ কার্টুনের ইঁদুরটি যতই স্পষ্ট দেখতে পাক না কেন, বাস্তবতায় কিন্তু কোনো ইঁদুরই স্পষ্ট দেখতে পায় না। তাদের চোখে সমস্ত বিশ্ব একটা ঘোলাটে পর্দার আড়ালে, নীলচে সবুজ হয়ে ধরা দেয় তাদের চোখে। পৃথিবী তাদের কাছে খুব শ্লথ। এতেই তারা অস্থির হয়ে দ্রুতগতিতে দৌড়ায়। আর যদি আমাদের মতো স্বাভাবিক পৃথিবী দেখতে পেত, তবে ভাবুন! আর একটা অদ্ভুত কাণ্ড, তাদের দুটি চোখের মাঝে কোনো সখ্য নেই, দুটি আলাদা চোখে তারা একই দৃশ্যের আলাদা দুটি চিত্র পাশাপাশি দেখতে পায়।
গরুর চোখে
আমরা যেমন মাঠে সবুজ ঘাস দেখি, গরুরা তা দেখতে পায় না। তারা তাদের চারণভূমিতে দেখে কমলা বা লাল রঙের ঘাস। আর মাছের মতো তারা খানিকটা বিবর্ধিত দৃশ্য দেখে।
ঘোড়ার চোখে
ঘোড়ার চোখের অবস্থান তাদের মাথার দুপাশে। এতে করে যেমন সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে। পেছনে বা পাশে কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা সামনে আসার আগেই ঘোড়া দেখে ফেলতে পারে, সে অনুযায়ী সতর্ক হয়ে যায়। কিন্তু আফসোস, তাদের ঠিক নাকের সামনে কী আছে, চোখের অবস্থানের কারণে তা কখনোই দেখতে পায় না।
মৌমাছির চোখে
মৌমাছির দৃষ্টিক্ষমতা অত্যন্ত প্রখর। মানুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি দ্রুততায় বুঝতে পারে তারা পৃথিবীকে।মৌমাছি অতি বেগুনি রশ্মিও দেখতে পায়।
হাঙরের চোখে
হাঙরের চোখে পৃথিবী সাদা-কালো। তাতে অবশ্য শিকারে কোনো সমস্যা হয় না, কেননা জলের নিচে তাদের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ, আমাদের দৃষ্টিক্ষমতা যার ধারেকাছেও নেই!
গিরগিটির চোখে
গিরগিটি বেশ আজব এক সৃষ্টি। মজার ব্যাপার হলো, তাদের চোখের মণি দুটোই একসঙ্গে সম্পূর্ণ গোলাকার আবর্তে ঘুরে ঘুরে চারপাশ ইচ্ছেমতো দেখে নিতে পারে। এই ক্ষমতাবলেই তারা দেখতে পারে ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য!
নিশাচর টিকটিকির চোখে
মানুষের আজন্ম সাধ একটা রূপকথার গল্পের মতো রাতের ছবি দেখার, যেখানে তারা খসে পড়ছে, উল্কা ছুটোছুটি করছে, নক্ষত্রদের মেলায় মেলায় পুরো আকাশ ছেয়ে রেখেছে এক আলোকিত রাত! এই দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আছে নিশাচর টিকটিকিদের। আমাদের তুলনায় ৩৫০ গুণ বেশি পরিষ্কার রাত দেখতে পায় টিকটিকি!
প্রজাপতির চোখে
প্রজাপতিও এক বিশেষ ধরনের কীট! তাদের দৃষ্টিশক্তি অতটা প্রখর নয়, তবে মানুষের তুলনায় অনেক বেশি রং আর রঙের বিভিন্ন ছায়া দেখতে পায়। সেই সঙ্গে অতিবেগুনি রশ্মি তো আছেই!
এক টু অন্য দৃষ্টি কোন থেকে ভাবনা:
“সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলেম, আমার সর্বনাশ…”
কথাতেই আছে চোখ নাকি মনের আয়না। চোখ দ্বারা আমরা অনেক সময় মনের কথা বলে থাকি। মুখে না বললেও চোখ দিয়েও অনেক কিছু বুঝিয়ে দেওয়া যায়। যেমন পছন্দের রং এর মাধ্যমে মানুষের স্বভাব বলে দেওয়া যায়, ঠিক তেমনি চোখের মণির রং দেখেও বলে দেওয়া যায়। বিভিন্ন রং এর প্রকারভেদ এর উপর নির্ভর করে এক একজনের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য।
এবার দেখে নেয়া যাক, চোখের মণির রং অনুযায়ী মানুষের স্বভাব কেমন হয় –
বাদামী:
যাদের চোখের মণির রং বাদামী রঙের হয়ে থাকে তারা অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রকৃতির হন। এদের বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি হয় এবং বন্ধুত্ব করার প্রবণতাটাও অনেকটাই বেশি। এরা খুব সহজে সকলকে মানিয়ে নিতে পছন্দ করেন, তাই সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাদের স্বভাবে একটু জেদি হলেও সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলার ক্ষমতা থাকে।
নীল:
যে সকল ব্যক্তির চোখের মণির রং নীল রঙের হয়ে থাকে তারা আকর্ষণীয় এবং অপরূপ সুন্দর হন। তাদের স্বভাবের কথা বললে এরা ছোটবেলা থেকেই খুবই লাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকে। তবে এরা মানসিক কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারে না অল্পতেই কেঁদে ফেলেন। বিশেষ করে আবেগপ্রবন হওয়ায় সামান্য কারণেই দুঃখ পেয়ে থাকেন।
সবুজ:
বিশ্বে খুব কম সংখ্যকই মানুষের চোখের মণির রং সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এই প্রকার মানুষেরা অত্যন্ত সৃজনশীল প্রকৃতির হয়। এছাড়া এরা বাস্তবের সাথে লড়াই করে বাঁচে এবং জীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধান করতেও সক্ষম।
ধূসর:
যাদের চোখের মণির রং ধূসর রঙের হয়ে থাকে তারা বেশিরভাগ নিজস্ব সীমার মধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। এরা নিজস্ব সীমা থাকে বেরিয়ে আসতে চান না এবং মিলেমিশে কাজ করতে সক্ষম। তবে অন্যান্য মানুষের পক্ষে এদের মন বোঝা খুবই কঠিন।
কালো:
এরা মানুষের খুবই বিশ্বাসযোগ্য এবং দায়িত্বশীল হয়ে থাকেন। এরা যে কোন কাজের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে তবে সহজে প্রেমে পড়ে না আর যদি প্রেমে পড়ে যান তাহলে তাঁর প্রতি খুবই নিষ্ঠাবান হয়ে থাকেন। এই প্রকার মানুষের মধ্যে ধার্মিকভাব বিরাজমান করে।
আসুন জেনে নিই চোখ ভালো রাখতে কী খাবেন:-
১. ঘন সবুজ রঙের বিভিন্ন শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান। তবে সবচেয়ে ভালো পালং শাক। এই শাক চোখ ভালো রাখে।
২. চোখ ভালো রাখতে খেতে পারেন ছোট মাছ, ইলিশ ও রুই। এসব মাছ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ, যা চোখের রেটিনার চারপাশে থাকা খুবই জরুরি।
৩. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে। কমলার রয়েছে ভিটামিন সি। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ বছর প্রতিদিন একটি করে কমলা খেলে অন্ধত্বের হার অন্যদের তুলনায় ৬৪ শতাংশ হ্রাস পায়।
৪. গাজর চোখের জন্য উপকারী। প্রায় সব কমলা রঙের সবজি ও ফলে থাকে বিটাক্যারোটিন। এটি চোখের ভেতর দিয়ে আলোর প্রবাহকে শোষণ করে ও রাতে কম আলোয়ও দেখার শক্তি বাড়ায়।
৫. ডিমকে সুপারফুড বলা হয়। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ডিম খেতে পারেন। ডিমের কুসুমে আছে লিউটেইন ও জিংক, যা রেটিনায় কোনো ধরনের ক্ষয় প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
৬. বিভিন্ন ধরনের বাদাম খেতে পারেন। এই খাবারে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’সহ নানা ধরনের ভিটামিন। এটি চোখের ক্রমাগত দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়াকে রোধ করে ।।