প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ জুলাই : ’মহারাষ্ট্রে তো দেখেছেন এপাং ওপাং ঝপাং । মহারাষ্ট্র এখন ড্যাং ড্যাং।এবার আমরা ঝাড়খণ্ডেও উল্টে দেব।আর ভোট হলেএ রাজস্থানও যাবে।সেখানেও তোষণ’। সোমবার বিকালে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে অনুষ্ঠিত জনসভায় যোগ দিয়ে মহারাষ্ট্রের উদ্ধ্বব ঠাকরের সরকারের পতন নিয়ে এই ভাষাতেই কটাক্ষ করলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পাশাপাশি এদিন ফের একবার তিনি দাবী করেন ,২৬ শে নয় -২৪ শে বাংলায় লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে হবে । আর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলায় ক্ষমতা দখল করবেই ।যদিও শুভেন্দু অধিকারীর এই দাবীকে পাগলের প্রলাপ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল। নেতৃত্ব ।
সাতগেছিয়ায় অনুষ্ঠিত বিজেপির জনসভা থেকে থেকে এদিন শুভেন্দু অধিকারী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও বাংলার তৃণমূল সরকারকে কার্যত তুলোধনা করেন।তিনি মুখ্যমন্ত্রীর নাম মুখে না এনে বলেন,“বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ১৯ শো আতঙ্কে আতঙ্কিত। অসুখের নামও ১৯ শো । সব সময় উনার মাথায় ঘুরছে ১৯ শো ।তাই বর্ধমানে গিয়ে উনি বলেছেন,১৯১৩ সালে উনি নাকি বর্ধমানে মাটি ক্ষেত্র করে দিয়ে গেছেন ।তার পরে বলেছেন, ১৯১৫ সালে জাতি সংঘ এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুভেন্দু বলেন ,উনার এত ১৯শো বলার কারণ হল ,উনি আমার কাছে ১৯ শো ৫৬ ভোটে হরেছেন । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর একটাই আতঙ্ক ১৯৫৬। ।শুভেন্দু এও বলেন , এটা কোন দিনও মুছবে না মাননীয়া। অটোবায়োগ্রাফিতেও থাকবে আপনি কম্পার্টমেন্টাল চিফ মিনিস্টার । কোনও দিনও আপনি মুছতে পারবেন না আপনি শুভেন্দুর কাছে হেরেছেন ।
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে দেউলিয়া সরকার বলেও কঠাক্ষ করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা । তিনি বলেন,’বাম আমলে রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের বোঝা ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা। আর এখন তৃণমূল সরকারে আমলে ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ৬২ হাজার কোটি টাকা ।শুভেন্দু বলেন ,আমি কেন্দ্রে সরকারকে বলেছি বাংলায় নেক্সট সরকার তো বিজেপি করবে । তৃণমূল সরকারকে এত ঋণ নিতে দিচ্ছেন কেন। এই সরকারটাতো দেউলিয়া সরকার,ইনসলভেন্ট সরকার ।’
রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে অনিয়ম ও পরিযায়ী শ্রমীক সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও তৃণমূল সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন শুভেন্দু অধিকারী । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,এই রাজ্যের যে কোন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক রয়েইছে । আর ব্লকে সেটা ৮-১০ হাজারে দাঁড়াবে ।এখানে শ্রমিকরা কাজ পায় না ।১০০ দিনের কাজও পায় না । কারণ এখানে জেসিবি মেশিন দিয়ে ১০০ দিনের কাজ হয়।আর ’তৃণমূলের পঞ্চু’ নির্মাণ সহায়কদের সঙ্গে অাঁতাত করে ১০০ দিনের কাজের সুপার ভাইজাররা কোটি কোটি টাকা লুট করছে । তাই পেটের খিদে মেটানোর জন্যে এখানকার শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে । ২০১১ সালে রাজ্যে ৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ছিল । মমতা যাদুতে আজ সেটা ৪৫ লক্ষ হয়েছে বলে শুভেন্দু অধিকারী দাবী করেন । একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, আগে রাজ্যে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ ছিল ।সেটা এখন আর নেই । বেকারের সংখ্যাটা নথিভুক্ত হবে বলে এই রাজ্যে ৪০ টা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে তালাচাবি মেরে দেওয়া হয়েছে বলেও শুভেন্দু দাবী করেন। পাশাপাশি তিনি এও জানান,সরকারী ৩০ লক্ষ পোস্ট ফাঁকা পড়ে রয়েছে। আর বাংলায় আজ ২ কোটির উপর বেকার ।
সরকারী চাকরিতে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এদিন সরব হন বিরোধী দলনেতা । তিনি বলেন,’প্রাইমারি, এসএসসি, দমকল বাহিনীতে নিয়োগ নিয়ে দুর্গন্ধ উঠে গেছে। টাকা নিয়ে চাকরী দিয়েছে তৃণমূল নেতারা। কোন নিয়ম কানুন মানা হয় নি।সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরী পেয়েছে।বিচারক সব জাল জোচ্চুরি ধরে ফেলেছেন । ওদের সবার চাকরি যাবে।
রাষ্টপ্রতি নির্বাচন নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘রাষ্টপ্রতি নির্বাচন নিয়ে মমতা এখন ডিগবাজি খাচ্ছেন ।ইস্কনের রথ টানতে গিয়েছিলেন।সেখানে তিনি বলেছেন,দ্রৌপদী মুর্মু প্রার্থী হচ্ছেন আগে জানলে ভেবে দেখতেন।আসলে মোদীজীর ছক্কায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুপোকাত হয়ে গিয়েছেন। সামনের ২১ তারিখে দ্রৌপদী মুর্মু-ই জিতবেন।তিনিই দেশের রাষ্ট্রপতি হবেন বলে এদিন শুভেন্দু অধিকারী ঘোষনা করে দেন । মিঠুন চক্রবর্তীর সোমবার রাজ্য বিজেপি পার্টি অফিসে আসা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মিঠুন বিজেপির জাতীয় কর্ম সমিতির সদস্য । বিজেপি কোন ব্যক্তি নির্ভর দল নয়।’ শুভেন্দু জানান ,দলীয় কাজে মিঠুন রাজ্য পার্টি অফিসে আসতেই পারেন।।