প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ মার্চ : অবশেষে প্রায় তিন শাতাধীক বছর পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভাঙলো অস্পৃশ্যতা ও জাত পাতের বৈষম্যের বেড়াজাল।বুধবার প্রথম পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধেশ্বর শিব মন্দিরে প্রবেশাধিকার পেলেন স্থানীয় দাসপাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন।পুষ্প,ফলমূল,মিষ্টান্ন,ধুপ বাতি সহযোগে ডালা সাজিয়ে নিয়ে পাঁচ দলিত পরিবারের বধূ এদিন গিধেশ্বর মন্দিরে প্রবেশ করেন।পুরোহিত মশাই নাম গোত্র দিয়ে তাদের পুজো দেবতা গীধেশ্বরের কাছে নিবেদন করেন। দীর্ঘদিনের মন বাসনা এদিন পূর্ণ হওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন গিধগ্রামের দাস পাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন।
কাটোয়ার গিধগ্রামে রয়েছে সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো একটি শিবমন্দির।এই শিব ‘গীধেশ্বর’ নামে পরিচিত।গ্রামবাসীদের আরাধ্য দেবতা গীধেশ্বরের সারাবছর নিত্যসেবা হয়।তবে শিবরাত্রি ও গাজন উৎসবে ব্যাপক ধুমধাম হয়।এহেন শিবের মন্দিরে ঢুকে পুজো দেওয়ার অধিকার লাভেরর জন্য কাটোয়ার মহকুমা শাসকের কাছে আর্জি জানিয়ে ছিলেন দাস পাড়ার দলিতরা। মঙ্গলবার মহকুমা শাসকের দফতরে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সর্ব সন্মতিতে সেই আর্জি মঞ্জুর হয় । ঠিক হয় বূধবার সকালেই গীধেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন দীর্ঘকাল পুজো দিতে না পারা দাস পাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন ।
দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজনের পুজো দেওয়া নিয়ে যাতে কোন রকম গোলযোগ বা অশান্তির ঘটনা না ঘটে তাই এদিন সকাল থেকেই মন্দির চত্ত্বরে পৌছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী ।কাটোয়ার মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন , কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশিাথ মিস্ত্রি এবং কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও ইন্দ্রজিৎ মারিক এদিন মন্দির চত্ত্বরে উপস্থিত থাকেন । তাঁদের উপস্থিতিতে দাস পাড়ার দলিত সম্প্রদারের পাঁচটি পরিবারের বধূরা এদিন মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেন। মহকুমা শাসক নিজে গীধেশ্বরের সন্মূখে দাড়িয়ে দলিত পরিবারের বধূদের পূজো দেওয়া চাক্ষুষ করেন।
গীধেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে বাইরে বেরিয়ে দাস পাড়ার বধূ সান্তনা দাস বলেন,“আজ আমরা খুব খুশি।ভক্তি ভরে এদিন বাবা গীধেশ্বরের সন্মূখে গিয়ে তার পুজো দিয়েছি। এতদিন আমাদের মন্দিরে উঠতে দেওয়া হতনা বলে বাবা গীধেশ্বরের দর্শন লাভ সম্ভব হয় নি। পুলিশ , প্রশাসন এবং গ্রামের সবাই একমত হওয়াতেই এদিন আমরা গীধেশ্বর শিব মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দিতে পারলাম । আজ আমরা ভীষণ তৃপ্ত।“ গ্রামের অপর বাসিন্দা সন্তোষ দাস বলেন ,“প্রশাসন মানবিক ভাবে আমাদের পাশে দাড়িয়েছে বলেই আজ আমাদের দাস পরিবারের বধূরা গীধেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিতে পারলেন। এর জন্য আমরা পূলিশ ও প্রশাসনের কাছে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো। মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন বলেন,’আমরা প্রশাসন ও পুলিশের তরফে গ্রামের বিবেকবান সকল মানুষজনকে অনেক বোঝাই । এমন বিভেদ বৈষম্য থাকাটা যে ঠিক নয়,সেই ব্যাপারে গ্রামের বিবেকবান মানুষজনও ঐক্যমতে পৌছান। সবার প্রচেষ্টাতেই পুজো দেওয়া নিয়ে জটিলতার অবসান সম্ভব হয়েছে ।’।