এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ এপ্রিল : আজ রবিবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিএমের ‘মহাসভা’ ছিল । মূলত শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর এবং বস্তি এই চারটি গণসংগঠনের ডাকে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয় । কিন্তু কার্যত গোটা মাঠই ফাঁকা ছিল । মঞ্চের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু ক্যাডারদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি কটাক্ষ করেছেন, ‘NOTA এবারও জিতে যাবে । তা সত্ত্বেও ভোট কাটুয়া হয়ে তৃণমূলকে সাহায্য করতে এরা মাঠে থাকবে৷’
এদিকে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে বেশ কিছু সিপিএমের ক্যাডারকে দেখা যায় । যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি । সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে সজল ঘোষ লিখেছেন,’ব্রিগেড ভরেছে প্যালেস্টাইন পতাকায় l এই জায়গায় বাম – তৃণমূলী জিহাদীরা সম্পূর্ণভাবে এক, বিশ্বে জিহাদিদের ওপর কোথাও হামলা হলে এরা সবাই এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু মুর্শিদাবাদে নিজের দলের সমর্থক কর্মীদের কথা একেবারে ভুলে গেল ।’
তরুনজ্যোতি তিওয়ারিও সিপিএমের ক্যাডারদের ফিলিস্তিনি পতাকা বহনের ছবি পোস্ট করেছেন । তিনি লিখেছেন,’চিনে রাখুন এই বামপন্থীদের । সামশেরগঞ্জে যখন হিন্দু হওয়ার অপরাধে হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়, তখন বামপন্থীরা নিঃশব্দ। গোটা রাজ্য দেখেছে, পরিবার থানায় কী অভিযোগ করেছে — তবুও মোঃ সেলিমদের মতো তথাকথিত নেতারা মুখ ফুটে বলতে পারেনি কেন খুন হল তাদেরই সমর্থক, কারা করল এই বর্বরতা।’
তিনি লিখেছেন,’মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের উপর একের পর এক আক্রমণ হয়েছে। ঘরছাড়া, নিপীড়ন, প্রাণনাশ — সবকিছু ঘটেছে খোলাখুলি। কিন্তু একটিও বাম নেতা, একটিও মুখপাত্র সাহস করেনি প্রশ্ন তুলতে — “কারা করছে এইসব?” অথবা “কেন করা হচ্ছে?” যাদের কাজ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মুখে তালা, চোখে ঠুলি।’
সিপিএমকে নিশানা করে তিনি লিখেছেন,’যখন হিন্দুদের উপর অত্যাচার চলে, তখন বামপন্থীরা চুপ থাকে। আর এই নীরবতার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় এদের স্বরূপ। এরা তখনই চিৎকার করে ওঠে, যখন বিদেশে কিছু ঘটে — আগে ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম করে চেঁচাত, এখন প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন বলে রাস্তায় নামে। কলকাতার রাজপথে কাঁধে প্যালেস্টাইনের পতাকা নিয়ে যারা ‘মানবতা’র নামে হাঁটে, তারা নিজের রাজ্যে হিন্দুদের উপর চলা অত্যাচার নিয়ে একটা পোস্টারও তৈরি করে না। তাদের মানবতা শুধুই আন্তর্জাতিক — নিজেদের দেশ, নিজের রাজ্যের হিন্দু সমাজের দুর্দশা এদের দৃষ্টিসীমার বাইরে। এই হল এদের ধর্মনিরপেক্ষতা — যেখানে মুসলিম তোষণই মূল লক্ষ্য, আর হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া মানেই ‘communal’ তকমা। একপাক্ষিক এই নীতি শুধুই রাজনৈতিক সুবিধাবাদের প্রতিচ্ছবি। যদি এদের শরীরে সত্যিই ভারতীয় রক্ত থাকত, যদি এই বামপন্থীদের অন্তরে সামান্য হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতি থাকত, তাহলে ব্রিগেড সমাবেশে যেমন প্যালেস্টাইনের পতাকা আর পোস্টারে ছেয়ে যায় ময়দান, তেমনই মুর্শিদাবাদের নিহত হিন্দুদের জন্যও কিছু না কিছু প্রতীক থাকত।এরা কেউ ধর্মনিরপেক্ষ নয়, এদের ধর্মনিরপেক্ষতা হলো হিন্দু বিদ্বেষ এবং মুসলমান তোষণ।। PSEUDO SECULAR RUDALI এই কথাটা এদের জন্য যথাযথ প্রযোজ্য ।’
তবে ব্রিগেড না ভরলেও তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করার স্বপ্ন দেখছেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম । তিনি বলেছেন,’ দূরবীন দিয়ে লাল ঝান্ডা দেখতে পাচ্ছিল না, তাদের বুকে কাঁপন ধরাবে এই ব্রিগেড।’সেলিমের অভিযোগ, ‘কাজের জায়গা ছোট হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র, রাজ্যে কোথাও নিয়োগ হচ্ছে না। যেখানে নিয়োগ হচ্ছে, সেখানে দুর্নীতির পাহাড়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাকে ঝামা ঘষে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২৬ হাজার মানুষের চাকরি গিয়েছে।’ রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রকেও বেঁধেন সেলিম। তিনি জানান, সরকার এখন ট্রেন না চালিয়ে মন্দির মসজিদ চালাচ্ছে। তৃণমূল বিজেপির স্ক্রিপ্টের লেখক একজনই তিনি হলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত।
সিপিএমের এদিনের ব্রিগেডের সভায় বক্তব্য রাখেন কৃষক সভার অমল হালদার, ক্ষেতমজুর সংগঠনের নেতা ও সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার, বন্যা টুডু, বস্তি উন্নয়ন সমিতির সুখরঞ্জন দে, সিটুর অনাদি সাহু ও মহম্মদ সেলিম। তবে বক্তার তালিকায় নাম ছিল না বাম যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জির ।।