নীহারিকা মুখার্জ্জী,বর্ধমান,২৫ সেপ্টেম্বর : রবিবার এক অবিস্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেল সংস্কৃতি মনস্ক মেমারিবাসী। সৌজন্যে মেমারি থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপ্রেমী সাংবাদিক সেখ আনসার আলি প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় পাক্ষিক সংবাদপত্র – ‘জিরো পয়েন্ট’। এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মেমারির অডিটোরিয়াম হলে পালিত হয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮-তম প্রয়াণ দিবস। একইসঙ্গে ‘জিরো পয়েন্ট’ পত্রিকার ৩৫-তম বছর পূর্তি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কাজী নজরুল ইসলাম ও ‘জিরো পয়েন্ট’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সেখ আনসার আলির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তাদের প্রতি সম্মাননা প্রদর্শন করেন। পরে পরিবেশ দূষণ জনিত কারণে সৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য চারাগাছে জলসিঞ্চন করা হয় এবং এভাবেই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বর্তমান যুগে কেন নজরুলের মত কবিকে বেশি করে দরকার সেটা তারই লেখা কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যাখ্যা করেন। এছাড়াও গত ৩৫ বছর ধরে তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে কিভাবে ‘জিরো পয়েন্ট’ ভিন্ন স্বাদের খবর পরিবেশন করে পাঠকের কাছে নিজের একটা আলাদা আসন করে নিয়েছে সেটাও তুলে ধরেন। এরজন্য তারা প্রয়াত সেখ আনসার আলি ও পিতার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য তার সুযোগ্য পুত্র আনোয়ার আলির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী পায়েল শেঠ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ‘জিরো পয়েন্ট’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদিকা কবি আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুনিপুন ভাবে পরিচালনা করেন পত্রিকার সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা ব্রততী ঘোষ আলি।
প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সেখ আনসার আলির ঐতিহ্য অনুসরণ করে অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণীজন ব্যক্তিদের সম্মান প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ৩৫ তম বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে তোলার জন্য পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে যে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তাতে বিভিন্ন বিভাগে স্থানাধিকারীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
‘জিরো পয়েন্ট’ পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক আনোয়ার আলির কাছে জানা যায় – বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক সুনীতি মুখোপাধ্যায় হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘জিরো পয়েন্ট লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক নূর আহামেদ ও সাংবাদিক পার্থসখা অধিকারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘আনসার অ্যাওয়ার্ড’। বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার, বাচিক শিল্পী ও মঞ্চ-অভিনেতা আরণ্যক বসুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘জিরো পয়েন্ট অ্যাওয়ার্ড’, মেমারি শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রয়াস এডুকেয়ার ফাউন্ডেশন’ এর সভাপতি মানস রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘জিরো পয়েন্ট সোস্যাল অ্যাওয়ার্ড’। ‘জিরো পয়েন্ট নজরুল অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় ‘ধূমকেতু আম্তর্জাতিক নজরুল একাডেমিকে’।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ ব্যানার্জী, কবি উজ্জ্বল দাস ও অশোক মুখোপাধ্যায়, বাচিকশিল্পী সাদেকুল করিম ও মনীষা ভট্টাচার্য্য, সঙ্গীতশিল্পী সমীরণ কুমার মাকর, মধুশ্রী চক্রবর্তী মল্লিক ও সুচিন্ত্য নন্দী, নৃত্যশিল্পী অরুণিমা মুখার্জী, চিত্রশিল্পী শিবাজী বসু ও দেবাশিস ব্যানার্জী, যন্ত্রশিল্পী সোমনাথ দাস, তবলা বাদ্যকার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য্য, মেমারি পৌরসভার কাউন্সিলর কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, ডা. অভয় সামন্ত, গল্পাকার শুভাশিস মল্লিক সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি।
নিত্যানন্দবাবু বললেন,’জিরো পয়েন্ট’ পত্রিকা গোষ্ঠী যেভাবে মেমারির বুকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তাধারকে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে কোনো প্রশংসা যথেষ্ট নয়। আশাকরি ভবিষ্যতে মেমারি ও পার্শ্ববর্তী মানুষের মধ্যে এক সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র গড়ে তুলতে ‘জিরো পয়েন্ট’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন – আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব পত্রিকা গোষ্ঠীর পাশে থাকব।।