প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ জুন : তৃণমূল কংগ্রেস দল করার জন্যে বাম আমলে অনেকেই খুন হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের মরাবাঁধ গ্রামের ফিরদৌস রহমান ওরফে বোটন।১৯৯৮ সালের ৩১ মে পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষনার পরদিন খুন হন তৃণমূল কর্মী ফিরদৌস রহমান । টাঙ্গি ও কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে নৃশংস ভাবে খুনের অভিযোগ ওঠে ১১ জন সিপিএমের হার্মাদদের বিরুদ্ধে ।তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয় । চারজন গ্রেপ্তারও হয়েছিল । ব্যাস ওই পর্যন্তই ।
তরপর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে ২৩ টা বছর । কিন্তু ফিরদৌসের খুনিদের কারুর সাজা আজও হয় নি । যাঁদের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তাঁরা সবাই খালাস পেয়ে গিয়েছেন ।তবুও প্রতি বছর ৩১ মে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ঘটা করে পালন করেন ফিরদৌস রহমানের শহীদ দিবস। যদিও মৃতর মা তহুরা পুরকাইত শহীদ দীবস পালনের থেকেও বেশী করে চান খুনিদের শাস্তি ।সেই দিন আদৌ আর আসবে কিনা তা জানেন না ফিরদৌসের পরিবার ।
তৃণমূল কর্মী ফিরদৌস রহমান খুন হওয়ার পর
জাড়গ্রামের মরাবাঁধে তৈরি করা হয়েছিল শহীদ বেদি । এদিন ফুল মালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় সেই বেদি। জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি ,ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ,যুব সভাপতি ভূতনাথ মালিক সহ এক ঝাঁক নেতা নেত্রী এদিন বিকালে ফিরদৌসের শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানান । পাশাপাশি নেতারা শহীদ বেদির সামনে দাঁড়িয়ে ৯৮ সালের সেই ভয়াবহ দিনের স্মৃতি চারনাও করেন । কিন্তু অভিযুক্তরা কেন ঘটনার ২৩ বছর বাদেও শাস্তি পেলেন না তার উত্তর কেউই দিতে পারলেন না ।সবাই আইনের যাঁতাকলের দোহাই দিয়ে পাশ কাটালেন । তবে নেতাদের আড়ালে থাকা জাড়গ্রামের পুরানো কয়েকজন তৃণমূল কর্মী এদিন বলেন , কে কাকে শাস্তি দেবে ।সেদিন যারা তৃণমূল কর্মীদের পেটাতো ,এলাকায় সন্ত্রাস চালাতো, তাঁরা সবাই এখন তৃণমূলে ভিড়ে গিয়েছেন । জাড়গ্রামে এখন মার্কসবাদী তৃণমূলীরাই দাপট দেখাচ্ছে ।তাই ফিরদৌসের খুনিদের বিচার আর কোন কালেই হবে না বলেই মত পুরানো তৃণমূল কর্মীদের ।
নিহত ফিরদৌসের বৃদ্ধা মা জাহানারা পুরকাইত এদিন বলেন , “তাঁর ছেলের খুনিদের বিচার আল্লাহই করবেন । সেই আবেদনই তিনি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে রাখেন” । ফিরদৌসের দাদা জাহাঙ্গীর রহমান এদিন বলেন ,তাঁর ভাই খুন হওয়ার পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জামালপুরে এসেছিলেন। সভাও করেছিলেন । জাহাঙ্গীর বলেন ,’তাঁদের পরিবারের কথা ভেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রেলে চাকরি করে দেন । কিন্তু আক্ষেপ একটাই রয়েগেছে ,তাঁর ভাইয়ের খুনিরা কেউ শাস্তি পেল না । বিষয়টি নিয়ে ফের তৃণমূল নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান ফিরদৌসের মা ও দাদা “। এই প্রসঙ্গে জামালপুর ব্লক তৃণমূলে সভাপতি মেহেমুদ খাঁন বলেন ,“খুনের মামলায় যারা সাক্ষী ছিলেন তাঁদের অনেকে মারা যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয় ।বর্ধমান আদালতে মামলা চলাকালীন অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে গিয়েছে ।তবে উচ্চ আদালতে এই মামলার নিস্পত্তির কোনও বিধান আছে কিনা সেই বিষয়টি নিয় রাজ্য নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে মেহেমুদ খাঁন জানিয়েছেন ।।