এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১০ নভেম্বর : বাঁকুড়া জেলায় ৬৫-৭০ টি হাতির একটি দলকে দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে । এলাকায় ঢুকলেই বনদপ্তরের বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের রেঞ্জ এবং সোনামুখী রেঞ্জ হাতির ওই দলটিকে একে অপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ । ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের । বুধবার পাত্রসায়রের বিস্তীর্ণ এলাকা ধান জমিতে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেল হাতির ওই দলটিকে । কিছু কিছু জমির ধান সবেমাত্র পাকতে শুরু করেছিল । ফলে এদিন হাতির তান্ডবের কারনে ওই সমস্ত জমির কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হল । এখন সরকারি ক্ষতিপূরণের দিকে তাকিয়ে আছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা । শুধু কৃষকরাই নয়,জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারাও ব্যাপক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন । যদিও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে গত মাসে একটি বৈঠকে প্রধান বন সংরক্ষক দেবল রায় জানিয়েছিলেন, বনদপ্তরের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের ব্যাবস্থা করা হবে । পাশাপাশি তিনি জানান, প্রায় আট মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া বাকি রয়েছে । সেগুলো দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে ।
বুধবার পাত্রসায় রেঞ্জের চক পাত্রসায়ের এলাকায় হাতির ওই একটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল । বিঘা পর বিঘা জমির ধান পায়ের তলায় পিষে নষ্ট করেছে বুনো হাতির দলটি । যে সমস্ত কৃষকরা লালস্বর্ণ বা খাস ধানের চাষ করেছিলেন সেই সমস্ত জমির ধান সবেমাত্র পাকতে শুরু করেছিল । সেই সমস্ত জমির ধান খাওয়ার লোভে দিনভর কার্যত দাপিয়ে বেড়ালো হাতির ওই দলটি । এদিকে অনেকেই মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছেন । হাতির তাণ্ডবে এদিন পাকা ধানে যেভাবে মই পড়ল তারপর মহাজনের ঋণ কিভাবে শোধ করবেন তাই ভেবে রাতের ঘুম ছুটেছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের । এখন বনদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসীরা ।
দেখুন ভিডিও :
শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘আজ হাতির তাণ্ডবে কয়েক একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেল । এদিকে বনদপ্তরের পাত্রসায়ের এবং সোনামুখী রেঞ্চ পিঠ বাঁচানোর লড়াই করছে । কারণ পত্রসায়ের রেঞ্জ সোনামুখীর দিকে হাতিগুলোকে ঠেলে দিচ্ছে । আবার সোনামুখী রেঞ্জ পাত্রসায়ের এর দিকে হাতিগুলোকে ঠেলে দিচ্ছে । মাঝে ক্ষতির মুখে পড়ছে দুই এলাকার কৃষিজীবিরা ।’
পাশাপাশি তিনি জানান,অন্যদিকে সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক গ্রাস করছে পাত্রসায়ের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীদের । সন্ধ্যা হলেই এক প্রকার গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে । কারন রাতের অন্ধকারে বাড়ির বাইরে বেরোলে যেকোনও মুহূর্তে হাতির হামলায় প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারে । বহুগ্রাম রয়েছে যাদের জঙ্গল পেরিয়ে পাত্রসায়ের এবং বিষ্ণুপুর শহরে প্রতিনিয়ত আসতে হয় ফলে সন্ধ্যার পর তারা পাত্রসায়ের এবং বিষ্ণুপুর শহরে আসতে পারছেন না । স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারন মানুষকে ।
জানা গেছে,গত ২৪ অক্টোবর বিষ্ণুপুর ফরেস্ট অফিসে বন আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক(CCF) আধিকারিক দেবল রায় । ওই হাতির দলটি এক জায়গায় গিয়ে যাতে বেশি দিন না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার জন্য তিনি দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন । কিন্তু তাঁর সেই নির্দেশের পরেও পাত্রসায়ের রেঞ্জে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০ টি হাতির একটি দল । স্বভাবতই বনদপ্তরের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় ।।