দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৯ সেপ্টেম্বর : পড়নে কেবল একটি ডাইপার । আর কোনও পোশাক নেই । বাম হাতে লাগানো স্যালাইনের চ্যানেল । ওই অবস্থাতে দু’হাতে একটা কাঠের টুল নিয়ে হাসপাতালের এইচডিইউ বিভাগে কার্যত তান্ডব চালালো এক বৃদ্ধ রোগী । শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে । শারিরীক সমস্যার কারনে অরুন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই রোগী অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় এই কান্ড ঘটিয়েছে বলে অনুমান স্থানীয় বাসিন্দাদের । তবে তাঁকে বিরত করতে গিয়ে জখম হতে হয়েছে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটের দুইজন নার্সকে । তারপর আর কোনও স্থাস্থ্যকর্মী ভয়ে তাঁর কাছে ঘেঁষেননি । শেষে তাঁদের মধ্য থেকে জনৈক এক স্থাস্থ্যকর্মী সাহস করে রোগীর হাত থেকে কাঠের টুলটি কোনও রকমে কেড়ে নিতে সক্ষম হন । যদিও তারপরেও খালি হাতেই ভাঙচুর অব্যাহত রাখেন ওই রোগী । খবর পেয়ে কাটোয়া থানার পুলিশ আসে । শেষে পুলিশ ও চিকিৎসকরা মিলে রোগীকে শান্ত করেন । তাঁকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। রবিবার তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে । এই ঘটনার জেরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এইচডিইউ বিভাগসহ গোটা হাসপাতাল চত্বরে ।
হাসপাতালের এক নার্সের কথায়, ‘শনিবার রাতের অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবন মনে থাকবে । প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের চরম উৎকন্ঠার মধ্যে কাটাতে হয়েছে । চোখের সামনে দামি দামি ও গুরুত্বপূর্ণ সব চিকিৎসার সামগ্রী ভাঙচুর করছিল ওই রোগী । অথচ আমদের অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছিল । আমাদের কেবল চেষ্টা ছিল ওই রোগী যাতে এইচডিইউ বিভাগের অনান্য রোগীদের উপর হামলা না করতে পারে ।’
স্থানীয় ও হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে,কাটোয়া শহরের গোয়ালপাড়া এলাকায় বাড়ি পেশায় ব্যবসায়ী অরুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের । বেশ কিছুদিন ধরে তিনি শারিরীক অসুস্থতায় ভুগছিলেন । শেষে শনিবার সকালে তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন । হাসপাতাল থেকে তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় । রক্ত পরীক্ষায় অরুনবাবুর সোডিয়াম পটাসিয়ামের ঘাটতি ধরা পড়ে বলে জানা গেছে । প্রথমে তাঁকে হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছিল । পরে পরিস্থিতি বুঝে তাঁকে এইচডিইউ বিভাগে ৬ নম্বর বেডে স্থানান্তরিত করা হয় ।
প্রসঙ্গত,কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটটি(এইচডিইউ) চালু হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে । তখন প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে উন্নত যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিল । জানা গেছে, শনিবার রাত্রি প্রায় একটা নাগাদ অস্বাভাবিক আচরন শুরু করে দেন অরুন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই বৃদ্ধ রোগী । তিনি বেড থেকে উঠে হাতে একটি কাঠের টুল নিয়ে তান্ডব শুরু করে দেন । একে একে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়ার যন্ত্র ভেঙে ফেলেন । তাঁর হাত থেকে টুলটি কেড়ে নেওয়া হলে খালি হাতেই কমপিউটারের সিপিইউ,মনিটরসহ অনান্য মেশিনপত্রের মাটিতে আছড়ে ভেঙে দেন । ফেলে দেন অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার ও ওষুধের প্যাকেট ।
দু’জন নার্স তাঁকে থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হন । তারপর আর কেউ রোগীর কাছে যাওয়ার সাহস করেননি । হাসপাতালের নার্স, সিকিউরিটি গার্ড, সিভিক ভলেন্টিয়ারা কার্যত দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোগীর এই তান্ডব লীলা দেখতে বাধ্য হন ।
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার ধীরাজ রায় বলেন, ‘আমার চাকুরি জীবনে এই প্রথম এমন ঘটনা দেখলাম । এইচডিইউ বিভাগের অনেক দামি দামি মেশিনপত্র ভেঙে নষ্ট করে দিয়েছে । সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ্য টাকার চিকিৎসা সামগ্রী ভাঙচুর করে দিয়েছেন ওই রোগী । এনিয়ে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে ।’ পাশাপাশি তিনি জানান,ওই রোগী আচমকা কেন এতটা ভায়োলেট হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।।