শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২২ ডিসেম্বর : একটা সময়ের পর মানুষের জীবন যেন থমকে যায় । বার্ধক্যের কারনে শারিরীক শিথিলতা, অর্থাভাব বা সঙ্গীর অভাব,চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে দেয় জীবন ৷ কর্মচঞ্চল পৃথিবীতে এযেন আর একটা পৃথক জগৎ । যেখানে জীবন শুধুই একঘেয়েমি।বয়সের ভারে নুহ্য ওই সমস্ত মানব মানবীদের কাছে শেষ দিনের ডাকের অপেক্ষায় থাকাই যেন লক্ষ্য হয়ে ওঠে । অথচ সন্তান সন্ততিরা যদি তাদের মনকে একটু উপলব্ধি করত… প্রতিদিন একটু সঙ্গ দেওয়া…মাঝে মাঝে প্রমোদ ভ্রমণ বা চড়ুইভাতিতে একসাথে হুল্লোড় করা…তাহলে হয়ত নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা পেতেন তারা । আরও সুন্দর ও প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠতে পারত একটা পরিবার । কিন্তু মাইক্রো ফ্যামিলির এই সমাজে কে ভাববে তাদের কথা ? বিয়ের পর হঠাৎ করে স্বার্থপর হয়ে ওঠা সন্তানদের বৃদ্ধ মা-বাবা আজও উপেক্ষিত হয় শহর থেকে গ্রামে ।
এটাই উপলব্ধি করেছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার বসন্তপুর(টাকপুর) গ্রামের বাসিন্দা আলিম শেখ নামে এক যুবক । তিনি জানান, নিজের গ্রামের বৃদ্ধ- বৃদ্ধাদের দেখে কিছু করার তাগিদ অনুভব করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে । সেই লক্ষ্যেই গ্রামের বৃদ্ধ মানুষগুলোকে নিয়ে আজ রবিবার বনভোজনের আয়োজন করেছিলেন তিনি । এই অভিনব উদ্যোগটির তিনি নাম দিয়েছিলেন “বৃদ্ধ ভোজন উৎসব” । রীতিমতো ব্যানারও ছাপানো হয় । সকালের টিফিন থেকে শুরু করে দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজন পর্যন্ত গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাত পেড়ে খাওয়ালেন আলিম শেখ ও তার সঙ্গীসাথীরা । শুধু বৃদ্ধরাই নন,তাদের নাতিনাতনিরাও বনভোজনের আনন্দ চেটেপুটে উপভোগ করে ৷ গ্রামেরই এক কৃষকের খামারে এই বিশেষ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় ।
আলিম শেখ জানিয়েছেন,সকালের টিফিনে ছিল মুড়ি,রুটি,বেগুনি ও মিষ্টি । আর মধ্যাহ্নভোজে ভাত, মুরগির মাংস ও চাটনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল ।
মন্তেশ্বরের রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ৭০-এর শেখ মহম্মদ আনোয়ার আলি সদ্য মধ্যাহ্ন ভোজ খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম করছিলেন । আলিম শেখদের এই বিশেষ উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,’সত্যই আমাদের জীবন খুব একঘেয়ে । আমি তো তবুও এখনো কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার বয়সী যারা বাড়িতে আছেন তাদের কি অবস্থা বলুন তো ? প্রমোদ ভ্রমণের কথা ছেড়েই দিন, অনেকে পরিবারের মধ্যেই কার্যত এক ঘরে অবস্থায় দিন কাটান । সেই হিসেবে আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে খুব ভালো লাগছে । আমরা খুব আনন্দ পেলাম৷ আমার বয়সীদের সঙ্গে এক সাথে বসে পাত পেড়ে খেতে খেতে গল্প করার অভিজ্ঞতাই আলাদা ।’
এদিন বসন্তপুর গ্রামের “বৃদ্ধ ভোজন উৎসব“-এ দুই শতাধিক মানুষের খাবার আয়োজন করা হয়েছিল । কিন্তু এত খরচ করল কে ? উত্তরে আলিম শেখ বলেন, ‘আমি ছাড়াও আমার বন্ধু আমজাদ শেখ,সানোয়ার শেখ আতয়ার রহমান,রিনু বাগ ও আব্বাস শেখ নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে এই আয়োজন করেছি ।’ মিতভাষী আলিম জানান,এভাবেই প্রতি বছর এই বিশেষ উৎসবের আয়োজন করার চেষ্টা করবেন তারা ।।