প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ জুলাই : এ যেন ’এক ফুল-দো মালির’ মত ব্যাপার। বুথ একটা ,ফুলও সেই একটা । ঘাসের উপর জোড়া ফুল। কিন্তু একই বুথে একই ফুলের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ছেন একই দলের দু’জন প্রার্থী! নির্বাচন কমিশনের নথিতে ’ডবল সিটেড কনস্টিটিউন্সি’ নামেই এমন বুথের পরিচিতি । অবাক করা এমন বুথেই শনিবার ভোট দেবেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার সাতটি পাড়ার ১,৩০০-এর বেশী ভোটার।আর যাঁদেরকে কেন্দ্র করে ওই ১৩৯ বুথ নজর কেড়েছে তাঁরা হলেন ঘাসফুল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা ওই বুথের দুই তৃণমূল প্রার্থী রিমা দে ও মিঠু রক্ষিত । জয়ের ব্যাপারেও এই দুই প্রার্থী আবার সমান আশাবাদী ।
পঞ্চায়েত ভোটে পূর্ব বর্ধমান জেলার ৩৯৩৩ টি বুথে হবে ভোট গ্রহন। তার মধ্যে এমন অনেক বুথে রয়েছে যার কোনটাতে আলাদা আলাদা দলের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন বৌমা ও শাশুড়ি। আবার কোন বুথে ভোটের লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন মামা ও ভাগ্নে। সেই রকমই এক নজর কাড়া বুথ হল জেলার জামালপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথ । ডি-লিমিটেশন প্রক্রিয়ার দৌলতে গোটা জেলায় ’ডবল সিটেড কনস্টিটিউন্সি’ বুথের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৩ টি ।তার মধ্যে অন্যতম একটি হল জামালপুরের ১৩৯ নম্বর বুথ । এই বুথে বিরোধী দলের যেমন দু’জন করে প্রার্থী রয়েছেন তেমনি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরও দু’জন প্রার্থী রয়েছেন। একজন হলেন রিমা দে । অপর জন মিঠু রক্ষিত। এই দু’জনেরই প্রতীক ঘাসের উপর জোড়া ফুল।
শাসক দলের ওই বুথ এলাকার কর্মীরা এই বিষয়টি নিয়ে রসিকতা করে বলছেন, আমাদের একই ফুল, মালকিন দু’জন।এসবের দরুন জালপুরের ১৩৯ বুথ এখন এক ফুল-দো মালকিন বুথ নামেই বিশেষ পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে। তবে বুথের ভোটাররা ঘাসফুল প্রতীকের প্রার্থীদের প্রতি আস্থা রাখেন নাকি কাস্তে হাতুড়ির প্রতি, সেটা ১১ জুলাই পরিস্কার হয়ে যাবে ।
যদিও ভোটে জয়ের ব্যাপারে একশ শতাংশ আশাবাদী ঘাসফুল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করা তৃণমূলের দুই মহিলা প্রার্থী রিমা দে ও মিঠু রক্ষিত। এক জনের বাড়ির নিকটেই অপর জনের বাড়ি। রিমা ও মিঠু দু’জনেরই বক্তব্য,তাঁদের বুথ ব্যতিক্রমী বুথ । ডি-লিমিটেশনের যাঁতাকলে পড়ে যাওয়ায় তাঁদের দু’জনকে একই বুথের প্রার্থী হয়েই বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়েছে ।একই যাঁতাকলে পড়ে বিরোধী দলের প্রার্থিরাও পড়েছেন । ভোটারা একই ব্যালটের দু’পাশে থাকা তাঁদের নাম ও ঘাসের উপর জোড়া ফুল প্রতীকে ছাপ দিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন বলে প্রার্থী রিমা দে ও মিঠু রক্ষিত শুক্রবার দাবি করেন, একই ভাবে এলাকার শাসক দলের দুই নেতা অভিক দাস ও লাল্টু পাত্র বলেন,আমরা নিশ্চিৎ,উন্নয়ন কাজের নিরিখে এবারের পঞ্চায়েত ভোটেও ১৩৯ নম্বর বুথের ভোটারা ঘাস ফুলের দুই প্রার্থীর পক্ষেই আস্থা রাখবেন । তৃণমূলের প্রার্থী ও নেতাদের এমন দাবিকে নস্যাত করেদিয়ে ওই বুথের সিপিএম প্রাথী দেবীকা দেবনাথ ও পরিতোষ সিং বলেন,তৃণমূলের প্রার্থীরা দিবা স্বপ্ন দেখছেন ।
বিডিও (জামালপুর ) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, জনসংখ্যার নিরিখে বুথ নির্দিষ্ট করার সময় এমন বুথের অস্তিত্ব তৈরি হয়। ডি-লিমিটেশনের ফলে সব বিধান বিধানসভা এলাকাতেই এমন বুথ রয়েছে। তবে তার সংখ্য থাকে হাতে গোনা । জামালপুর বিধানসভা এলাকায় ‘ডবল সিটেড কনস্টিটিউন্সি’ বুথ রয়েছে মাত্র ১৬ টি । এমন বুথে শুধু মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে একটি ব্যালটের দু -পাশে একই দলের দু’জন করে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকে । ভোটাররা তাঁদের পছন্দ মত একই দলের দুই প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। আবার আলাদা আলাদা দলের থেকেও এক এক জন করে প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। তবে এইরকম বুথে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদ আসনের জন্য নির্দিষ্ট ব্যালটে এমনটা হয় না । তাতে যে কোন দলের একজন করে প্রার্থীর্ই নাম ও প্রতীক থাকে ।।