এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ অক্টোবর : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের ১৬৩.২০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি । বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার স্ত্রী কাজল সোনি রায়ের নামে থাকা সম্পত্তিও । আজ এক্স-এ এই খবর জানিয়ে ইডি লিখেছে,’ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে WBCSSC-এর আধিকারিকদের দ্বারা গ্রুপ ‘সি’ এবং ‘ডি’ স্টাফ নিয়োগ কেলেঙ্কারি মামলায় প্রসন্ন কুমার রায়ের নামে প্রধান মধ্যস্থতাকারীর হোটেল/রিসর্ট মিলে ১৬২.২০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি অস্থায়ীভাবে সংযুক্ত করেছে ইডি কলকাতা, । প্রসন্ন রায়ের স্ত্রী শ্রীমতি কাজল সোনি রায় এবং মেসার্স শ্রী দুর্গা ডিলকম প্রাইভেট লিমিটেড, প্রসন্ন কুমার রায় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত একটি কোম্পানি। এই মামলায় আজ পর্যন্ত মোট সংযুক্তি/বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৫৪৪.৮০ কোটি টাকা।’
তদন্তকারী দলের মতে এসএসসি-এর নিয়োগ দুর্নীতিতে দু’জন মিডলম্যান হিসেবে কাজ করতেন । তার হলেন প্রদীপ সিংহ ও প্রসন্নকুমার রায় । তাদের বিরুদ্ধে অযোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়োগ-কর্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রসন্নর অফিস থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিও মেলে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে প্রসন্ন ধরা পড়ে। এসএসসি-এর প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও প্রাক্তন সচিব অশোক সাহা গ্রেফতারের পর একে একে সিবিআইয়ের জালে ধরা পড়েন তারা ।
সিবিআইয়ের দাবি, নিয়োগ মামলায় ধৃত মিডলম্যান প্রসন্ন রায় ও তার আত্মীয়দের ৪৬৩ টি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে । আর ওই সমস্ত সম্পত্তির পুরোটাই কেনা হয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় । মাত্র ৮ বছরে ৪৬৩ টি সম্পত্তি কিনেছিল প্রসন্ন । ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রসন্ন রায়, তাঁর স্ত্রী, মা ও বাবার নামে এই সম্পত্তিগুলি কেনা হয়। প্রসন্ন ও তাঁর স্ত্রী কাজল সোনি রায় ৯০টির উপর সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন। কয়েকটিতে নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রসন্নর সঙ্গী রোহিতকুমার ঝাঁয়ের। এই সংস্থাগুলির মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা পাচার হত বলে দাবি তদন্তকারীদের । টাকা পাচারের জন্য প্রসন্ন ও তাঁর স্ত্রী ও সংস্থার নামে ২০০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছিল । ওই অ্যাকাউন্ট গুলিতে নিয়োগ দুর্নীতির কয়েক কোটি টাকা জমা হয় এবং সময় বুঝে যথাস্থানে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ ইডির । সামান্য টালির চালের বাড়িতে থাকতেন প্রসন্ন। সেখান থেকে ক্রমশই ফুলে ফেঁপে ওঠে তাঁর গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা । সেই সংস্থা থেকেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে WBCSSC-এর আধিকারিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় । তারপর অযোগ্য প্রার্থীদের লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষা দপ্তরে নিয়োগের ব্যবসা শুরু হয় তার ।
সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে ধৃত শান্তিপ্রসাদ সিনহার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রসন্নকুমার রায়ের। প্রসন্ন’র সল্টলেকের অফিসে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি হত। সেই তালিকা ইমেল করে পাঠানো হত এস এস সির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহাত কাছে । এই অফিসেই অযোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকও হত। প্রসন্ন রায় চাকরিপ্রার্থীদের থেকে সরাসরি টাকা নিতেন । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই প্রসন্ন রায়ের মাধ্যমেই চাকরি বিক্রির টাকা পৌঁছে যেত প্রভাবশালীদের হাতে । কিন্তু পার্থ চ্যাটার্জি ছাড়া আর কোনো প্রভাবশালীর নাম এখনো প্রকাশ্যে আসেনি এখনো ।।