এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ সেপ্টেম্বর : বালি পাচার মামলায় আজ সোমবার সকাল থেকেই কলকাতার একাধিক জায়গায় হানা দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। কলকাতা, গোপীবল্লভপুর-সহ রাজ্যের ২২টি জায়গায় ইডি একযোগে তল্লাশি চালাচ্ছে । তার মধ্যে রয়েছে বিমা সংস্থার কলকাতার কয়েকটি অফিসেও। বালি পাচারের মোটা অঙ্কের টাকা বিমায় বিনিয়োগ করা হত বলে মনে করছে ইডি । সোমবার ভোর থেকে তল্লাশি চলছে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর -১ ব্লকের নয়াবসানের বাসিন্দা জহিরুল শেখ নামের এক তৃণমূল নেতার বাড়িতেও। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই তৃণমূল নেতা বালি কারবারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। এমনকী বেশ কয়েকটি বালি খাদান আছে তার । সুবর্ণরেখা নদীর ঠিক পাশেই শেখ জাহিরুলের বাড়ি । এই সুবর্ণরেখা নদী থেকে দেদার বালি পাচারের অভিযোগ রয়েছে । ফলে তার ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে একাধিক বালি খাদানের মালিক এবং তাঁদের অফিসগুলি ।
এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ইডির এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “যথপোযুক্ত ব্যবস্থা ৷” পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, ‘নদীর বালি তোলার রাজস্ব বাবদ সরকারের কাছে কুড়ি টাকা গেলে বাকি ৮০ টাকা রাজস্ব পুলিশের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে ভাইপোর কাছে ।’
সেই সাথে তিনি লালগড়ের আইসি সৌরভ রায়ের বিরুদ্ধে একটা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি দাবি করেছেন,’সৌরভ রায় ডুপলিকেট চালান দিয়ে বালি পাচারের একটা চক্র চালাচ্ছে রাজ্য জুড়ে । এই সৌরভ রায়ের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে ভাইপো(অভিষেক ব্যানার্জি) যুক্ত । এখন বর্ষাকালে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর বাঁধ পর্যন্ত কেটে পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে ৷ আর এই পুরো বালির সিন্ডিকেটে যুক্ত আউশগ্রামের লালন, পাণ্ডবেশ্বরের গৌতম ঘোষ, সিউড়ির জাকির,সঞ্জীব পাটোয়ালিরা । তিনি এটাকে “বড় স্ক্যাম” বলে অবিহিত করেছেন ।
শুভেন্দুর কথায়,’অ্যাচুয়্যালি এটা ডায়মন্ড হারবারের মডেল । তোলা তুলতে হবে । যা পাওয়া যায় । মানে পোড়া বিড়ি পেলেও এরা ছাড়বে না । এদের এইরকমই অবস্থা হয়েছে । ভাইপো মডেল ।’ তিনি বলেন,’নদীর বালি তোলার রাজস্ব বাবদ সরকারের কাছে কুড়ি টাকা গেলে বাকি ৮০ টাকা রাজস্ব পুলিশের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে ভাইপোর কাছে । পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপাররা এই সৌরভ রায়ের চক্রে সরাসরি যুক্ত ।’ তিনি বলেন, ‘গোপীবল্লভপুর, জামপুর, বিনপুর, কাসাই, সুবর্ণরেখা ছাড়াও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে শুরু করে সোনামুখী পর্যন্ত ভয়ংকর অবস্থা৷ পশ্চিম বর্ধমানেও তাই, বীরভূমেও তাই । সব জায়গাতে নদীর কোন অস্তিত্ব নেই । সব টাকা ভাইপোর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এবং পুলিশ সুপাররা টাকা তোলার দায়িত্বে আছে । থানার আইসিরা এখন সব কাজ ছেড়ে এই বালি পাচারের কাজ করছে ।’
তিনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, এই তদন্ত আরো গতি পাওয়া উচিত । প্রচুর তথ্য জনগণের কাছে আছে । প্রচুর ডুপলিকেট চালান আছে । পুলিশ অফিসারদের দামি দামি গাড়ি ভেট দিয়েছে, তার ছবিও আছে । এদের বিরুদ্ধে আরো কঠিন ব্যবস্থা তদন্তকারী সংস্থা নেবে । প্রয়োজনীয় তথ্য জনগণ পাঠাবে, এটাই আমি আশা করব ।’ শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, ‘সিবিআই কয়লা পাচার বন্ধ করে দেওয়ার পর রানীগঞ্জে আবার চেষ্টা করা হচ্ছে । লালগড়ের আইসি সৌরভ রায়ের জন্য পুরো একটা গ্রামকে জেল খাটিয়েছে ।’
এদিকে জানা গেছে,তদন্তকারীদল জানতে পেরেছে যে অতিরিক্ত লরি পাঠিয়ে সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে নদী থেকে বালি তুলে পাচারের কাজ। লরির নম্বরেও করা হতো দুর্নীতি । ফলে এটাই এই দুর্নীতিতে পুলিশের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সবচেয়ে বড় প্রমান বলে মনে করা হচ্ছে । বালি তোলার ক্ষেত্রে যে লরিকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, আইন অনুযায়ী সেই গাড়ির নম্বর দিতে হতো । কিন্তু একই নম্বর ব্যবহার করেই একাধিক লরিতে চলত এই বালি পাচার । যেটা স্থানীয় থানাগুলির পুলিশের নজর এড়িয়ে করা একেবারেই সম্ভব নয় মনে করছে তদন্তকারীরা । এখানেই শেষ নয়, বালি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি পত্রে কিউআর কোড দেওয়া হত। কিন্তু সেই কিউআর কোডকেও জাল করা হত। আর এই অবৈধভাবে বালি তোলার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে বারবার সরব হয়েছেন বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় মানুষজন। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই প্রতিবাদকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এখনো এরাজ্যে দেদার বালি পাচার চলছে বলে অভিযোগ।।