এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ জানুয়ারী : পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আজ শুক্রবার সাতসকালেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তিন হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রী সুজিত বসু,বিধায়ক তাপস রায় ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) । সুজিত বসুর কলকাতার লেকটাউনের বাড়ি, তাপস রায়ের বউবাজারের বাড়ি এবং উত্তর দমদম পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে রেখে অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল । তৃণমূলের মন্ত্রী,বিধায়ক ও নেতাদের বাড়িতে ইডির অভিযান প্রসঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেছেন,’আজকের পূণ্যদিনে পূণ্য কাজ করছে ইডি, ব্যাগ গোছানো শুরু করুন, সঙ্গে শীতের জিনিসও রাখবেন ।’
আজ গোটা দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬১ তম জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছে । এদিন সকালেই স্বামীজিকে শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানাতে কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে মহান এই যোগীর বাড়িতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । স্বামীজির বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি ইডির আজকের এই অভিযান সম্পর্কে বলেন,’এটা পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি ৷ ভাইপো ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলের বাড়িতে এই দুর্নীতি সংক্রান্ত যে হার্ডডিস্ক এবং তালিকা পাওয়া গিয়েছিল,তারপর সিবিআই হাইকোর্টে এই মামলায় পৃথক কেস করার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়ে বলে যে এসএসসি এবং প্রাইমারির রিক্রুটমেন্ট এটা আনা যাবে না । হাইকোর্ট সিবিআইকে এফআইআর দায়রের অনুমতি দিয়েছিল । এই এফআইআরকে কে আটকানোর জন্য প্রথমে ডিভিশন বেঞ্চে যায় ফিরহাদ হাকিমের দপ্তর । পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় ৷ সুপ্রিম কোর্টে চোর মমতা সরকারের আবদার খারিজ হয় ।’
শুভেন্দু বলেন,’চোর মমতার আবদার খারিজ হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টা নিয়ে সিবিআই এবং ইডি তদন্ত করে । পদ্ধতি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে যে তদন্ত করেছে তার রিপোর্ট এম এল এ এক্ট-এ হস্তান্তর করা হয় । সুজিত বসুর পিএ সহ ওখানকার সাউথ দমদমের চেয়ারম্যান পাঁচু বাবু,বরানগরের চেয়ারম্যান প্রভৃতি যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে । এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট আজকের পূর্ণ দিনে পূর্ণ কাজ করতে ভোট থেকে বেরিয়ে পড়েছে ।’
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’সুজিত বসু দক্ষিণ দমদম পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত, একাধিকবার আমি বা অন্যরা এই বিষয়ে বলেছেন । সুজিত বসুর দুই শ্যালকের দুই স্ত্রী কামারহাটি পুরসভাতে চাকরি পেয়েছেন । স্বাভাবিকভাবে ,৭০ টা পুরসভার চেয়ারম্যান এবং তৃণমূলের নেতারা এতে যুক্ত ।’ শেষে তিনি তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ দেন, ‘ব্যাগ গোছানো শুরু করুন, সঙ্গে শীতের জিনিসও রাখবেন ।’
প্রসঙ্গত,রেশন দুর্নীতি ও সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপর শেখ শাহজাহানের ‘রোহিঙ্গা বাহিনী’র হামলার পর থেকে সরগরম গোটা দেশ । এরই মাঝে পুরসভার নিয়োগ দূর্নীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতামন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কার্যত ল্যাজে গোবরে অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর সরকারের । হুগলির বলাগড়ের বেতাজ বাদশা শান্তনু ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলের অফিসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ৩৭ ঘণ্টার ম্যারাথন তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে একাধিক চাঞ্চল্যকর নথিপত্র । আর ওই নথিপত্র দেখে ইডি জানতে পেরেছে যে উত্তর ২৪ পরগনার ছয় পুরসভায় গাড়ি চালক ও টাইপিস্ট থেকে শুরু করে আধিকারিক পর্যায়ে লাখ লাখ টাকায় চাকরি বিক্রি হয়েছে ।
আদালতে ইডি দাবি করেছে যে উদ্ধার হওয়া নথি থেকে জানা গেছে রাজ্যে ৬০টি পুরসভায় প্রায় পাঁচ হাজার বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ২৮ টি পুরসভারও । দুর্নীতি হয়েছে তৃণমূল শাসিত হাওড়া,দমদম, দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদম, বরানগর, হালিশহর এবং কামারহাটি পুরসভার নিয়োগেও । শুধু শিক্ষক নিয়োগ নয়, অয়ন শীলের সঙ্গে জুটি বেঁধে পুরসভাতেও নিয়োগ চক্র চালাতেন তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল ।
জানা গেছে,নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিঙ্কম্যান অয়ন শীলের বাড়ি থেকে শুধুমাত্র এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড-ওএমআর শিটই নয়, উদ্ধার হয়েছে পুরসভা সহ অন্যান্য বহু দফতরের নিয়োগ সংক্রান্ত নথি। এই দেখে ইডি আদালতে মন্তব্য করেছিল,’সোনার খনিতে প্রবেশ করেছি আমরা । স্তম্ভিত আমরা ।’।