প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ ডিসেম্বর : আর কম্প্রোমাইস নয়।স্কুলের মিড-ডে মিল হোক বা আইসিডিস কেন্দ্রে শিশু ও প্রসূতিদের খাবার, সবের উপরেই যৌথ ভাবে নজরদারি চালানো শুরু করে দিল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।একই সাথে চুরি রুখতে নৈশ কালীন পুলিশ পাহারা শুরু হয়েছে জেলার পিএইচই পাম্প হাউস গুলিতে । খাবারের গুনগত মান খতিয়ে দেখতে শুক্রবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্কুল ও আইসিডিএস কেন্দ্রে হানা দিলেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা।সেখানে তৈরি হওয়া খাবার খেয়ে খাবারের মান বোঝা থেকে শুরু করে খাদ্য সামগ্রী রাখার জায়গা ,মজুত খাবারের পরিমাণ,খাদ্য গ্রহিতার সংখ্যা সব বিষয়ে তারা তথ্য সংগ্রহও করেন।
এই নজরদারি চালানোর নেপথ্য কারণটা অবশ্য খুব একটা সুখকর নয়।স্কুলের মিড-ডে মিলে চাল চারি,সেই চাল খালা বাজারে বিক্রি সহ প্রাপ্য ডিম তাদের না-দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভাগাভাগি করে নেওয়ার মত অভিযোগ মাঝে মধ্যেই ওঠে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের খাবার নিয়ে নিয়মিত অভিযোগ আসছিল জেলাশাসক আয়েষা রানি এ-র কাছে। তার মধ্যে ছিল অনেক স্কুল বা আইসিডিএস কেন্দ্র ঠিকভাবে চলে না চলার অভিযোগ।বিষয়টিকে হালকা ভাবে না নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার যৌথভাবে নজরদার দল তৈরি করে মিড-ডে মিল ও পুষ্টিকর খাবারের গুণমান চেখে দেখার সিদ্ধান্ত নেনে।সেই মতই বৃহস্পতিবার থেকে জেলার ব্লকে ব্লকে শুরু হয়েছে সেই নজরদারি । যা শুক্রবারও পুরোদস্তুর নজরদারি ।
জেলাশাসক আয়েষা রাণী এই প্রসঙ্গে জানান, এডিএম, এসডিও, বিডিওদের স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ির উপর নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে পরিদর্শন শেষে রিপোর্টও জমা দিতে হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ সুপার সায়ক দাস প্রতিটি থানার ওসিকে একটি বার্তায় জানিয়েছেন, প্রত্যেক দিন স্কুল গিয়ে মিড-ডে মিঢ় এবং আইসিডিএস কেন্দ্রে গিয়ে শিশু ও প্রসূতিদের জন্য বরাদ্দ পুষ্টি খাবার পরিদর্শন করতে হবে। সপ্তাহের শেষে বিস্তারিত রিপোর্ট ডিআইবিতে পাঠাতে হবে। পুলিশ সুপার সায়ক দাস জানিয়েছেন,প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে এই কাজটা করছে । সেই কাজে ইতিমধ্যেই মহকুমা শাসক এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (বর্ধমান দক্ষিণ)মেমারির পাহাড়হাটি গোলাপমনি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলে।
সেখানে গিয়ে তাঁরা খাবারের মান ছাড়াও কী কী খাবার দেওয়া হচ্ছে,রান্নার জায়গার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা,বিধি মেনে রাঁধুনিরা রান্না করছেন কি না তাঁরা দেখেন।শুক্রবার খণ্ডঘোষ থানার ওসি পঙ্কজ নস্কর কে সঙ্গে নিয়ে ব্লকের বিডিও অভিক বন্দ্যোপাধ্যায় সগড়াই অঞ্চলের একাধীক স্কুলে গিয়ে একই ভাবে মিড-ডে মিলের মান সহ সবিস্তার খতিয়ে দেখেন।সাথে সাথে তারা স্কুল গুলিতে পঠন পাঠনের মানও বুঝে নেওয়ার কাজটা করেন।
একই দিনে আউসগ্রামের ছোঁড়া ফাঁড়ির ওসি ত্রিদিব রাজ এলাকার একাধীক আইসিডিস কেন্দ্রে গিয়ে খাবারের মান সহ সবিস্তার খতিয়ে দেখেন। পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনে আধিকারিকরা চাল চুরি, ডিম নিয়ে যাওয়ার মতো কোনও অভিযোগ উঠলে তৎক্ষণাৎ প্রশাসনকে জানানোর কথাও স্কুল ও আইসিডিএস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন। পাল্টা আইসিডিএস কেন্দ্রের কর্মী-সহায়িকারাও পরিদর্শকদের কাছে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পুষ্টি দায়ক খাবারের জন্য যে টাকা বরাদ রয়েছে সেটা বাড়ানোর দাবি তারা পরিদর্শকদের কাছে রাখেন।
স্কুল ও আইসিডিএস কেন্দ্রের খাবারে নজরদারি চালানোর সাথে সাথে পুলিশ এখন পিএইচই পাম্প হাউস গুলিতেও নজরদারি চালানো শুরু করেছে। পাশাপাশি পিএইচই পাম্প হাউস গুলিতে নৈশ পাহারার ব্যবস্থাও জোরদার করেছে পুলিশ। রাতে পিএইচই পাম্প হাউস গুলিতে সিভিক ভলেন্টিয়ার দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা এখন জামালপুর সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় থাকছে।পুলিশ সূত্রে খবর, সাম্প্রতিক সময়ে পিএইচই পাম্প হাউসের দামি যন্ত্রপাতি চুরির ঘটনার পর পুলিশ নড়ে চড়ে বসে । তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই নৈশ পাহারার ব্যবস্থা বলে জানা গিয়েছে।।