জলই জীবন । আর বিশ্বের সিংহভাগ মানুষ পানীয় জলের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভর করে । বিশ্বের চারজনের মধ্যে প্রায় একজন ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরশীল । কারণ বেঁচে থাকার জন্য তাদের নদী, বাঁধ এবং মিষ্টি জলের হ্রদের সুবিধা নেই । কিন্তু চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন মানুষ এই ভূগর্ভস্থ জল থেকে বঞ্চিত হওয়ার মুখে । ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এটিকে বিষাক্ত এবং পান করার অযোগ্য করে তুলবে বলে মনে করছেন গবেষকরা ।
গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল দ্বারা তৈরি তাপ পরিবহনের বৈশ্বিক-স্কেল মডেলের উপর ভিত্তি করে গবেষণায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে ভূগর্ভস্থ জলের উৎসগুলিতে তাপমাত্রা কীভাবে পরিবর্তিত হবে তার স্পষ্ট আভাস পাওয়া গেছে ৷ এই সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৫৯০ মিলিয়ন মানুষ, যারা মূলত ভূগর্ভস্থ জলের উৎসের উপর নির্ভরশীল, ২১০০ নাগাদ পানীয় জলের জন্য কঠোরতম মান পূরণ করতে পারবে না। সায়েন্স অ্যালার্টের উদ্ধৃতি অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটির জলবিদ ডিলান আরভিন বলেছেন,’জলবায়ু পরিবর্তনের উপর অনেক ফোকাস সঠিকভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ঘটনা এবং জলের প্রাপ্যতার সাথে করা হয়েছে । কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ভূগর্ভস্থ জলের উপর যে প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে আমাদের আরও বিস্তৃতভাবে চিন্তা করতে হবে । ভূগর্ভস্থ জলের উষ্ণতা এবং এর বিপর্যয়কর পরিণতিগুলোকে বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষা করা হয়েছে।’
রিপোর্ট অনুযায়ী, ছিদ্রযুক্ত শিলাগুলির মধ্যে আটকে থাকা জল দ্রবীভূত খনিজ পদার্থ, দূষণকারী এবং সম্ভাব্য রোগজীবাণু দ্বারা পূর্ণ হতে পারে । যদি এই জলকে এক বা দুই ডিগ্রি গরম করা হয়, তবে এটি পরিবেশ থেকে অক্সিজেন কেড়ে নিতে পারে এবং বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করতে পারে। এটি ম্যাঙ্গানিজ বা আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতুগুলির অত্যধিক ঘনত্বের দ্রবীভূত হওয়ার কারণও হতে পারে।
জার্মানির কার্লসরুহে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একজন ভূ-বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান লেখক সুজান বেঞ্জ বলেছেন,’ইতিমধ্যেই এমন অঞ্চলে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করছেন যেখানে ভূগর্ভস্থ জল কঠোরতম পানীয় জলের নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্ধারিত থেকে বেশি উষ্ণ । তার মানে সেখানে বিনা পরীক্ষায় জল পান করা নিরাপদ নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ,প্রথমে জল ফোটানো প্রয়োজন হতে পারে। পানীয় জলও মাটির তাপে জলের পাইপে গরম হয়ে যায় ।’ তিনি আরও জানান, কিছু জনবসতি এলাকা যেখানে পর্যাপ্ত আকারের জলাধার রয়েছে, উত্তপ্ত ভূগর্ভস্থ জলের নিঃসরণ মূল গতিশীলতার পরিবর্তন ঘটাতে পারে যা এর জলকে মানুষের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ রাখে। ‘ভাগ করা আর্থ-সামাজিক পথ'(shared socioeconomic pathway)-এর পরিপ্রেক্ষিতে, বর্তমান পরিসংখ্যান দ্বিগুণ হতে পারে যেখানে ১৮৮ মিলিয়ন লোক বসবাস করছে ৷ যেখানে ভূগর্ভস্থ জল ২১০০ সালের মধ্যে পানীয় যোগ্যতার জন্য কঠোরতম মান পূরণ করবে না ।।