এইদিন ওয়েবডেস্ক,০৯ জুলাই : ইসলামিক মৌলবাদী মানসিকতার বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন হিন্দু ধর্ম ও বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নূপুর শর্মার কট্টর সমর্থনকারী নেদারল্যান্ডসের সাংসদ গির্ট উইল্ডার্স (Geert Wilders) । তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন,’কোরান ও মহম্মদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করা উচিত । আদালতে এটা প্রমান করা দরকার যে তাদের আদর্শের মূলে রয়েছে বৈষম্য, বশ্যতা,হিংসা এবং অসহিষ্ণুতা । তাছাড়া সমাজ আর মুক্ত, ধার্মিক এবং নিরাপদ হবে না ।’ শেষে তিনি লিখেছেন, ‘শুধু একটি ভাবনা ।’ এছাড়া শনিবার একটি টুইট করে কুরবানির নামে নির্বিচারে পশু নিধনের পক্ষে সওয়াল করেন উইল্ডার্স । তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘আজই নিষিদ্ধ করা হোক জঘন্য বর্বর ইসলামিক কুরবানির ঈদ হত্যা উৎসবকে !’
প্রসঙ্গত,বিশ্বে মুসলিম কট্টরপন্থার সমালোচকদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছেন ডাচ রাজনৈতিক দল পার্টি ফর ফ্রিডম (PVV) এর প্রতিষ্ঠাতা গির্ট উইল্ডার্স । গির্ট নেদারল্যান্ডসের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য এবং নেদারল্যান্ডে ইসলাম ও কোরান নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি এতটাই ইসলামের বিরুদ্ধে যে নেদারল্যান্ডসে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য অভিবাসন নীতি পরিবর্তনেরও দাবি তুলেছেন । এই কারনে ২০০৬ সালে অ্যান্টি-ইমিগ্রেশন পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি । তিনি ও তাঁর ডানপন্থী মতাদর্শের দল হিজাবকে নিপীড়নের প্রতীক আখ্যা দিয়ে নেদারল্যান্ডসকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন । গির্টকে তার তীক্ষ্ণ বক্তব্যের কারণে ‘নেদারল্যান্ডসের ডোনাল্ড ট্রাম্প’ও বলা হয় ।
আগস্ট ২০১৯ -এ, গির্ট ওয়াইল্ডার্সও জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অপসারণকে দৃঢ়ভাবে স্বাগত জানিয়েছিলে । সে সময় তিনি ভারতকে ‘সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ’ এবং পাকিস্তানকে ‘শতভাগ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, ইমরান খানকে ইসলামি চরমপন্থী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন গির্ট । পাকিস্তান সরকার তাঁর ইসলাম বিরোধী মতামত সম্পর্কে অভিযোগ করার পর টুইটার গির্টের অনেক টুইট মুছে ফেলে । যদিও তার টুইট পাকিস্তান ছাড়া বাকি বিশ্বে দেখা যায় ।
গির্ট ওয়াইল্ডার্স ২০০৮ সালে ‘ফিতনা’ নামে একটি শর্ট ফিল্মও তৈরি করেন । যেটিতে দেখানো হয়েছিল কোরান তার অনুসারীদেরকে যারা ইসলামী শিক্ষা অনুসরণ করে না তাদের ঘৃণা করতে অনুপ্রাণিত করে । যদিও তখন তিনি ফিল্মটির কোনও পরিবেশক খুঁজে না পেয়ে গির্ট নিজেই এটি টুইটার এবং ইন্টারনেটে প্রদর্শন করেছিলেন । ইসলামি মৌলবাদের কট্টর সমালোচনার কারনে মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীদের হিট লিস্টে রয়েছেন উইল্ডার্স । ইসলামের সমালোচনা করে একটি চলচ্চিত্র তৈরির অপরাধে নেদারল্যান্ডের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক থিও ভ্যান গগকে জিহাদিরা আমস্টারডামে গুলি করে হত্যা করেছিল । তারপরই গির্ট ওয়াইল্ডার্সের নিরাপত্তার কড়াকড়ি করা হয় । ২০০৪ সাল থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন ওয়াইল্ডার্সেরও তাঁর পরিবার ।
প্রসঙ্গত,গির্ট উইল্ডার্সের মুসলিম মৌলবাদের কট্টর সমালোচক হওয়ার পিছনে অতীত ইতিহাস রয়েছে । আসুন জেনে নিই কে গির্ট এবং কেন তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ বক্তব্য দেন – নেদারল্যান্ডসের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গির্ট । তিনি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন । ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ইসরায়েলে থাকতেন এবং এই সময়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন । সেই সময় বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ পরিদর্শন করার পর গির্টের মনে একটি ইসলাম বিরোধী ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল । যার প্রভাব পরে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দেখা যায় ।
হিন্দু ধর্ম ও নূপুর শর্মাকে সমর্থন করায় তিনি এমনিতে নিয়মিত হুমকি পাচ্ছেন জিহাদিদের কাছ থেকে । এখন কোরান ও মহম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও কুরবানির নামে পশু নিধন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পক্ষে সওয়াল করায় ফের একবার তিনি মৌচাকে হাত দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে ।।