এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৩ অক্টোবর : ১৯৭৪ সাল, বাংলাদেশের ইতিহাসে দুঃসপ্নের একটা বছর, এই বছরই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ হয়েছিল । যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে শুরু হল বন্যা, দেশের দুর্ভিক্ষ চরম আকার ধারণ করে,আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের পত্রিকার শিরোনামে আসতে থাকে বিভিন্ন জায়গায় অনাহারে মৃত্যুর খবর । সেদিন ক্ষুধার কাছে হেরেছিল হিন্দু মুসলমান উভয়েই । সরকারী হিসেব অনুসারে ২৭,০০০ মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। বেসরকারি হিসেবে অনুমানিক ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ জন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মৃত্যুবরণ করে ।
সেই বছর হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদোৎসব নামেমাত্র পালন করা হয়েছিল । পূজোর খরচ বাঁচিয়ে পূজামণ্ডপ গুলোতে বিশাল বিশাল গনভোজের আয়োজন করা হয়েছিল । ঢাকার সার্বজনীন পূজামণ্ডপ গুলোতে পূজার ব্যয় কমিয়ে বিশাল বিশাল কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতি মণ্ডপে কমপক্ষে ১০০০ জন অভুক্ত লোকদের খাওয়ানো হয়েছিল। সেখানে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে একবেলা ভাত খেতে পেরেছিল । ফলে বহু মানুষ অনাহারের হাত থেকে বেঁচে যায় । কিন্তু অর্ধ শতাব্দী আগে বাংলাদেশের হিন্দুদের সেই মানবিক উদ্যোগের কথা পরবর্তী সময়ে ভুলে গেছে কট্টরপন্থী মুসলিমরা । আজ সেই মুসলিমদের বংশধররাই ভেঙে দিয়ে আসছে একের পর এক অসম্পূর্ণ দুর্গাপ্রতিমা । বুধবার মহালয়ের আগে ও পরে বাংলাদেশের একের পর এক জেলায় ঘটে চলেছে দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ।
মঙ্গলবার প্রায় ১১ টা নাগাদ রংপুর সদর লাহিড়ীরহাট ছুতোর পাড়ায় নির্মানাধীন দুর্গাপ্রতিমা ভাংচুর করা হয়।নড়াইলে সদর উপজেলার মিরাপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। গত দুইদিন আগে পাবনা জেলার সুজানগর থানা ঋষিপাড়াতে প্রতীমা ভাঙচুর করা হয়ছিল । তার দুইদিন পরে মহালয়ার দিন পাবনা জেলা সুজানগর থানা পালপাড়াতে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয় । ঢাকার কিশোরগঞ্জে গোপীনাথ জিউর আখড়ায় প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে । বুধবার, মহালয়া রাতে রংপুর জেলার সুতারপাড়া উপজেলার দাশভুজার মন্দির এবং কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বিষ্ণুপুর মন্দিরের তালা ভেঙে প্রতিমা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় চরমপন্থী মুসল্লিরা। পাবনা জেলার সুজানগর এলাকার পালপাড়ায় সর্বজনীন দুর্গা মন্দির ও নড়াইল জেলার মীরাপাড়া বাজারে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে ।
তবে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা না ঘটলেও আর একটা চমকপ্রদ ঘটনা পাওয়া গেছে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক মহাসাধক ও যোগসিদ্ধ মহাপুরুষ শ্রী শ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি মহারাজের মন্দির থেকে । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ওয়ারীর টিকাটুলি ১২ কে এম দাস লেনে রয়েছে আশ্রমটি । বেশ কয়েক বছর আগে ভোলানন্দ গিরি আশ্রম এর সাধারণ সম্পাদক নন্দুপাল মজুমদার ২ টি মুসলিম গৃহহীন পরিবারকে দয়াপরবশ হয়ে থাকার জন্য মন্দিরের পিছনে আশ্রয় দিয়েছিলেন । মন্দিরের জায়গায় ঘর নির্মান করে তাদের দলিলও করে দেওয়া হয় । এখন সেই মুসলিম পরিবারগুলো হাইকোর্ট থেকে অর্ডার এনেছে মন্দিরের পিছনে চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করার জন্য। সেই অর্ডার দেখিয়ে মুসলিম পরিবারগুলো মন্দিরের পিছনের অংশ ভাঙ্গা শুরু করে দেয় এবং অনেকটা অংশ ভেঙ্গেও ফেলে। স্থানীয় হিন্দুরা ও প্রশাসন বাধা দিলে বর্তমানে মন্দির ভাঙ্গার কাজ বন্ধ আছে বলে জানা গেছে ।।