জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দমদম,১৯ জুলাই : যে পেশার সঙ্গে উত্তর দমদমের মৃগাঙ্ক সাহা যুক্ত তাতে সাহা দম্পতি ইচ্ছে করলেই তাদের একমাত্র সন্তান ডোডোর জন্মদিন চারদেওয়ালের মাঝে উৎসবের মেজাজে পালন করতেই পারতেন। সেখানে থাকত মৃদু বাজনার তালে মায়াবী আলোর ঝলকানি, বাড়িতে থাকত রঙিন ঝলমলে পোশাক পরিহিত আত্মীয় স্বজনের ভিড়, নিজের পেশার জগতের মানুষের উজ্জ্বল উপস্থিতি, টেবিল ভরে যেত দামি দামি উপহারে, কেক কাটার সময় ঝলসে উঠত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বাল্ব – সব মিলিয়ে সৃষ্টি হতো এক স্বপ্নময় পরিবেশের এবং সেটাই হতো স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ এলাকার মানুষ তাকিয়ে দেখল অভিজাত সাহা দম্পতি তাদের একমাত্র ছেলের জন্মদিন পালন করলেন উত্তর দমদমের শরৎ বসু রোডের শরৎ কলোনির ‘আদরবাসা’-র একঝাঁক আদরের ফুটফুটে শিশুদের সঙ্গে।
১৮ ই জুলাই ছিল ছ’বছরের ডোডোর জন্মদিন। ঠাম্মি, দাদাই, দাদার হাত ধরে ডোডো হাজির হয় ‘আদরবাসা’-র আদরের বাসায়। সঙ্গে ছিল পিতা মৃগাঙ্ক সাহা ও মা অঞ্জলি সাহা। নিয়ে এসেছিল প্রচুর খাবার,বই-খাতা ও অফুরন্ত ভালোবাসা। তারপর সে মেতে ওঠে আদরবাসার ক্ষুদেদের সঙ্গে। তাদের উপস্থিতিতে সে মায়ের হাতের তৈরি জন্মদিনের কেক কাটে। তারপর সেগুলি একে একে তুলে দেয় সেখানে উপস্থিত শিশুদের হাতে। শুধু তাই নয় তাদের হাতে বই-খাতা ও খাবারও তুলে দেয়। দামি পার্থিব উপহার না পেলেও বিনিময়ে সে পেল ঐসব অসহায় শিশুদের অকৃত্রিম হাসি ও ভালবাসা।
প্রসঙ্গত ‘আদরবাসা’ হলো দমদম নিবাসী অর্পিতা ইন্দ্রের মানসকন্যা। নিজের সামান্য আয়কে সম্বল করে বারবার সে এলাকার দুঃস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। লকডাউনের সময় হাতে তুলে দিয়েছে খাবার, পুজোর সময় জামাকাপড়। করোনা জনিত কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশুদের জন্য নিজের বাড়িতে শুধু পাঠশালা তৈরি করেনি তাদের হাতে টিফিনও তুলে দিয়েছে। যদিও তার নিঃস্বার্থ ‘হার্ট টাচিং’ কাজে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন পাশে দাঁড়ালেন সাহা দম্পতি।
আদরবাসার শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ডোডোকে একরাশ শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়ে অর্পিতা দেবী বললেন – আজ আমি সত্যিই অভিভূত, মৃগাঙ্ক দাদা ও অঞ্জলি দিদির কাছে কৃতজ্ঞ। ওদের জন্য আমার আদরের শিশুরা একদিনের জন্যে হলেও যেভাবে আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ পেল সেটা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নাই। বলতে বলতে তার চোখ ছলছল করে ওঠে।
ব্যস্ত মানুষ মৃগাঙ্ক বাবু বিশেষ কথা বলার সুযোগ পাননি। তার ছোট্ট প্রতিক্রিয়া, ‘এখানে আমার সন্তানের জন্মদিন পালন সত্যিই সার্থক হলো। আমাদের দুর্ভাগ্য এত কাছে থাকা সত্ত্বেও অর্পিতার সন্ধান আগে আমরা পাইনি।’
অর্পিতার ভূয়সী প্রশংসা করে ডোডোর মা অঞ্জলি দেবী বললেন, ‘বর্তমান যুগে অর্পিতার মত নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা করে যাওয়া মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। আমাদের সৌভাগ্য আমরা তাকে খুঁজে পেয়েছি। আমাদের সন্তান আর একঝাঁক সন্তানের মাঝে তার জন্মদিন পালন করে যে আনন্দ পেল সেটা যেকোনো দামি উপহারের থেকেও দামি। বাস্তবে অর্থ দিয়ে তার মূল্যায়ন করা যায় না। তিনি আরও বললেন – শুধু সন্তানের জন্মদিনে নয় আমাদের সাধ্যমতো আমরা আবার এখানে আসব।’।