প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ ফেব্রুয়ারী : নবান্নের নির্দেশকে অমান্য করে নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বিডিও’রা। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর সহ জেলার একাধীক ব্লকের বিডিও’দের এই ভাবে ভিআইপি সাজার কীর্তি ’এইদিন’ ফাঁস করতেই তোলপাড় পড়ে প্রশাসনিক মহলে । তার পর থেকেই বিডিও’দের গাড়ি থেকে নীল বাতি উধাও হয়ে যাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।জামালপুর ব্লকের বডিও’র গাড়িতে এখন আর নীল বাতি দেখা যাচ্ছে না । ’এইদিন’ খবরের জেরে বিডিও’দের গাড়ি থেকে নীল বাতি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা কার্যত প্রমাণ করে দিল, ’এতদিন বিডিও’রা অনৈতিক ভাবেই গাড়িতে নীল বাতি ব্যবহার করে যাচ্ছিলেন’।
লাল-নীল বাতির গাড়ির অপব্যবহার নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মতই ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিল বঙ্গের হাইকোর্ট।তারপরেই বেআইনি ভাবে গাড়িতে লাল-নীল বাতির ব্যবহার রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। লাল-নীল বাতির গাড়ি কারা কারা ব্যবহার করতে পারবে তা ’নবান্ন’ নির্দিষ্ট করে দেয়।সেই মত রাজ্য পরিবহন দফতর নির্দেশিকা জারি করে।সেই নির্দেশিকায় রাজ্যের কোনও বিডিও’কে ফ্ল্যাশার সহ বা ছাড়া নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপে ঘোরার অধিকারই দেওয়া হয়নি।তা সত্ত্বেও নিজেকে ’ভিআইপি’ হিসাবে জাহির করতে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর সহ জেলার একাধিক ব্লকের বিডিও দিব্যি নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপেই সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।সেটা দেখেও পুলিশ ও পরিবহন দফতর নিশ্চুপ থাকায় লাল বা নীল বাতির গাড়ির অপব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল ।
লাল-নীল বাতির গাড়ি ব্যবহার নিয়ে নবান্নের এই নির্দেশের বিষয়ে জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে সহ জেলার বাকি বিডিও’রা কিছুই জানতেন না ,তা কিন্তু নয়।তবুও নিজেদের ’ভিআইপি হিসাবে’ জাহির করতে জেলার ভাতার,খণ্ডঘোষ,আউশগ্রাম ১ ও ২ ব্লক,রায়না ১ ও ২ ব্লক গলসি ২ ব্লক সহ আরো কয়েকটি ব্লকের বিডিও’র নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপে দেদার ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।হুটার সহ নীল বাতি লাগানো গাড়ি ছাড়া জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে তো কোথাও যাতায়াতই করতেন না।রাজ্যের উচ্চ পদস্থ কোন আধিকারিক কিংবা জেলাশাসক বা মহকুমা শাসক ব্লকে কোনও প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে এলে তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিতে বিডিও পার্থসারথী দে নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপেই তাদের পিছু পিছু যেতেন। কখনও ’কালো কভার’ দিয়ে নীল বাতি ঢেকে রাখার কোন ধার তিনি ধারতেন না।
নবান্নের নির্দেশ অমান্য করে নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপে বিডিও’দের ঘোরার খবর গত ১১ ফেব্রুয়ারি ’এইদিন’ প্রকাশ করে। সেই খবর প্রশাসনিক মহলে যথেষ্ট তোলপাড় ফেলে দেয়।অনৈতিক ভাবে নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপে বিডিও’দের ঘুরে বেড়ানোর খবর জেলাবাসীর মুখে মুখে ঘুরতে থাকে । তারপরেই বিডিওদের গাড়ি থেকে নীঢ় বাতি খোলার হিডির পড়ে গিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে’র গাড়িতে আর নীল বাতি নেই । তাঁর গাড়ির সামনে লাগানো থাকা ’হুটারটি’ রঙিন কাপড় দিয়ে মোড়া রয়েছে।
অথচ জামালপুর ব্লকের বিডিও’ই সপ্তাহ খানেক আগে ’এইদিন‘কে জানিয়ে ছিলেন,অনেক বিডিও’ই গাড়িতে নীল বাতি ব্যবহার করছেন,তাই তিনিও তাঁর গাড়িতে নীল বাতি ব্যবহার করছেন ।গাড়িতে নীল বাতি লাগিয়ে ঘোরার ব্যাপারে প্রশাসন থেকে কোন অনুমতি পেয়েছেন কি না ,তাও ওই দিন বিডিও পার্থসারথী দে’র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ।উত্তরে তিনি জানিয়ে ছিলেন,’না না সেই রকম কিছু নেই।’ তবে
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) আয়েষা রাণী এ ওই দিন ’এইদিন‘কে পরিস্কার জানিয়ে দিয়ে ছিলেন,সরকারী নির্দেশিকা সবাইকেই মানতে হবে।নির্দিষ্ট পদাধীকারি না হলে কেউ নীল বাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না“।কোন কোন বিডিও গাড়িতে নীল বাতি ব্যবহার করছেন তার তদন্ত হবে বলেও জেলাশাসক ওই দিন জানিয়ে দিয়ে ছিলেন।
এরপর একে একে জেলার বিডিও’দের গাড়ি থেকে নীল বাতি উধাও হতে শুরু হওয়ার কারণ জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ‘র কাছে জানতে চাওয়া হয়।তিনি যদিও এই বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া আর দিতে চাননি। জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে’র কাছেও একই প্রশ্ন রাখা হয়। উত্তরে তিনি তাঁর গাড়ি থেকে নীল বাতি খুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন । তবে নীল বাতি খুলে নেওয়ার কারণ নিয়ে তিনি বিশেষ আর কিছু বলতে চাননি।।