আজিজুর রহমান,গলসি(পূর্ব বর্ধমান),১৩ মে :
পেট্রোপন্নের মুল্যবৃদ্ধি জেরে চাষের খরচ দিগুন হয়েছে। ধানের সরকারি সহায়ক মুল্য বাড়ানোর আবেদন গলসি এলাকার চাষিদের। এপ্রিল মাসে বছরের শুরু থেকেই প্রখর ছিল সূর্যের তেজ। শেষের দিকে কয়েক পশলা বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে পায় মানুষ। তবে বৃষ্টির ফলে ক্ষতির মুখে পরতে হয়েছে গলসি সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষিদের। মে মাস শুরু হতেই প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। তাতে তাপমাত্রা আরামদায়ক হলেও ক্ষতি হচ্ছে ধান চাষিদের।
সপ্তাহ দুইয়েক আগে শুরু হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি এলাকায় ধান কাটার কাজ। তবে তখন থেকে পাকা ধানে নিত্য বৃষ্টি হওয়ায় ধান কাটাই ও মাড়াই খরচ দিগুন হচ্ছে চাষিদের এমনটাই জানাচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা। বৃষ্টির জন্য মাঠে মেশিন ছাড়া ধান কাটা সম্ভব নয়। তাছাড়াও মেশিনে কাটা ধান মাঠের কাদা পেরিয়ে বাড়িতে আনার খরচ দ্বিগুণ হয়ছে। সব মিলিয়ে লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে নিচ্ছে বলে দাবী চাষিদের। এমন অবস্থায় ধানের সহায়ক মুল্য কুইন্টাল প্রতি দু তিন শো টাকা বাড়ানোর আবেদন চাষিদের।
স্থানীয় পুরসা গ্রামের চাষি, সেখ গুলজার, আব্দুল আলিম মল্লিক ও সেখ মেহেবুব আলমরা জানান, বৃষ্টির জন্য তাদের এলাকার জমিতে জল জমে কাদা হয়ে গেছে। ফলে সাড়ে চার হাজার টাকা ঘন্টা হিসাবে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। যাতে ধান কাটাই খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। তাছাড়াও মাঠ থেকে ধান তুলতে সাধারণ ট্রাক্টর নয় ফোর হুইলার ট্রাক্টর আটশো থেকে এক হাজার টাকা টলি ভাড়া দিয়ে ধান খামারে আনতে হচ্ছে। ফলে কাটাই মাড়াই এর খরচ দ্বিগুন হয়ে গেছে। আর এতেই কারও কারও দুইমুখ সমান হলেও বেশিরভাগ চাষির লোকসান হবে। সরকার যদি ধানের সহায়ক মুল্য কুইন্টাল প্রতি দু তিন শো টাকা বাড়ায় তাহলে তাদের উপকার হবে। না হলে এবারও তাদের ধান চাষে লোকসানের মুখ দেখতে হবে।
বনসুজাপুর গ্রামের চাষি রাজকুমার কেস বলেন, ‘ডিজেল পেট্রলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। চাষের প্রয়োজনীয় সার চাপানের দাম বেড়েছে। ট্রাক্টরের ও ধান কাটা মেশিনের দাম বেড়েছে। চালেরও দাম আগের থেকে বেশ কিছু বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি। তার দাবী, রাজ্য সরকার সবসময় সবাইকে সাহায্য করে। তাই চাষিদের ধানের দাম কুইন্টাল প্রতি দু তিনশো টাকা বাড়ালে তারা উপকৃত হতো।’ চাষিদের ধানের দাম বৃদ্ধির জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বলে জানান।
স্থানীয় লোয়া গ্রামের চাষি সেখ রজব আলি বলেন, ‘নয় বিঘা জমি ধান চাষ করতে তিনি আট বস্তা ডিএপি, সাত বস্তা ইউরিয়া ও চার বস্তা পটাশ কিনেছিলেন। দুইবার দানা কীটনাশক ও একবার স্প্রে করেছিলেন। এবারে তার ধান ভালো হয়েছিল। তবে ধান কাটতে চার হাজার টাকা ঘন্টা চেন মেশিন ভাড়া নিতে হচ্ছে। আবার ধান বয়ে আনার জন্য ট্রাক্টর পিছু সাতশো টাকা গুনতে হচ্ছে । তাই খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে । যে লাভের আশা করেছিলাম তা আর হবে না।’ তার দাবী চাষিদের কথা মাথায় রেখে সরকারি সহায়ক মুল্য কুইন্টাল প্রতি অন্তত তিনশো টাকা করে বাড়ানো হোক ।
স্থানীয় এক কম্বাইন্ড হারভেস্টার চালক বলেন, ‘আগের বছর ৩৫০০-৩৬০০ টাকা ঘন্টায় চেন মেশিন ভাড়া চালিয়েছি। এবারে ডিজেলের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে তাদেরও কিছু করার নেই। পেট্রোপন্নের মুল্য বৃদ্ধির জন্যই ৪০০০-৪৫০০ টাকা ঘন্টা মেশিনের ভাড়া নিতে হচ্ছে ।’।