এইদিন ওয়েবডেস্ক,তাখার,০৬ জুন : তালিবান আসার পর আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে পরিবারের শিশুরা পর্যন্ত বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে । আফগানিস্তানের তাখারের কেন্দ্রস্থল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর তালুকানে অনেক শিশুকে রাস্তায় কাজ করতে দেখা যায়, তাদের মধ্যে কিছু শিশু তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী । বুটপলিশ থেকে শুরু করে ঠেলা গাড়িতে করে দোকানে দোকানে মালপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজে করছে আফগান শিশুরা । তারা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি তালুকান শহরের একটি ছোট বাজারের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় কাজের কোনো সুযোগের সন্ধানে । একজন শিশু যে তার নিজের বয়স পর্যন্ত জানে না, বলে তার বয়স পাঁচ বছর বা ছয় বছর হতে পারে এবং সে বুট পলিশ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ আফগানি মূদ্রা (এক আমেরিকান ডলার) উপার্জন করে । ওই শিশু শ্রমিক বলে,’আমি বুটপলিশের কাজ করি… আমার বয়স হয়তো পাঁচ বছর হবে … আমি সারাদিনের রোজকারে টাকাটা আমার মায়ের হাতে তুলে দিই ।’
আরেক শিশু আজিজুল্লাহ বলে, তার বাবা অসুস্থ এবং সে একটি ঠেলা গাড়ি নিয়ে দোকানে দোকানে মালপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে । শিশুটি বলে, ‘আমাদের পরিবারে আমাকে নিয়ে ১০ জন সদস্য । আমি প্রতিদিন ১০ টি রুটি কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই এবং ট্যাক্সি ভাড়ার জন্য ৫০ আফগানি মূদ্রা দিতে হয় । তারপর আমার জন্য কিছুই অবশিষ্ট টাকা থাকে না ।’ খালিদ নামে একজন শিশু শ্রমিক বলে, ‘আমাদের পড়াশোনা করা উচিত। আমার প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া উচিত। ভবিষ্যতে সফল হওয়ার জন্য আমার এটি বন্ধ করা উচিত । কিন্তু কি করবো, আমরা নিরুপায় ।’
তাখারের বাসিন্দা নুসরাতুল্লাহ বলেন, তালুকানের রাস্তায় শ্রমিক শিশুদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে । শিশুরা তাদের সামর্থ্যের বাইরে শ্রম করছে, কিন্তু তাদের আর কোনো উপায় নেই। এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যা শিশুদের তাদের পরিবারের অন্ন সংস্থানের জন্য শ্রম করতে বাধ্য করে । তারা ভারী জিনিসপত্র বহন করে, তারা বুটপলিশ করে ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে আফগানিস্তানে কমপক্ষে ১০ লক্ষ শিশু শ্রমিক রয়েছে । যেখানে আয় কমে গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ অনাহারের দ্বারপ্রান্তে । আফগানিস্তানে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) প্রতিনিধি ফ্রান ইকুইজা মে মাসে বলেছিলেন যে আফগানিস্তানের প্রায় ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা দারিদ্র্যের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং এর ফল ভুগছে আফগানি শিশুরা ।।