জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দুর্গাপুর(পশ্চিম বর্ধমান),২৬ ডিসেম্বর : অন্যান্য দিনের মত রুগীদের স্বাভাবিক ভিড় বিরাজ করছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। ডাক্তার ও নার্সদের চরম ব্যস্ততা তো আছেই, সঙ্গে রুগীর উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজনদের ভিড়। সব মিলিয়ে এটাই ছিল একটা মহকুমা হাসপাতালের দৈনন্দিন স্বাভাবিক চিত্র। এরমধ্যে অন্যরকম কিছু ছিল না। কেউ জানত না একটু পর সেখানে কি ঘটতে চলেছে।
রবিবার ছিল বড়দিন। ব্যস্ত হাসপাতালে যে যার নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ সেখানে থামল একটা অচেনা গাড়ি। উপস্থিত সবাই চমকে উঠল। চমক ভাঙতেই তারা দেখতে পেল গাড়ি থেকে নামছেন কল্পনার সান্তা ক্লজ । চমকানোরই কথা ! একে তো সান্তা ক্লজ, তার উপর আবার ব্যস্ত মহকুমা হাসপাতালে। এতদিন ওদের দেখা যেত শিশুদের মাঝে উপস্থিত হয়ে উপহার বিলি করতে। হঠাৎ হাসপাতালে কেন ?
যাই হোক, গাড়ি থেকে নেমে সান্তাক্লজ সোজা চলে গেলেন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। রোগীদের সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাদের স্বাস্থ্যেরও খোঁজ নিলেন, কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। যতই হোক সান্তা ক্লজ, উপহার না দিয়ে তো ফেরা যায় না ! কাঁধের ব্যাগ থেকে বের হলো হরলিক্স, চকোলেট ইত্যাদি এবং সেগুলি তুলে দিলেন প্রসূতি বিভাগের সকল মায়ের হাতে। বড়দিনে এমন উপহার পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি।
উপস্থিত ব্যক্তিদের মনে তখনও একটা প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে – কে এই সান্তাক্লজ রূপী ব্যক্তি? পোশাক পাল্টাতেই দেখা গেলো উনি আর অন্য কেউ নন উনি হলেন দুর্গাপুর ইএসআই হাসপাতালের অস্থি বিশেষজ্ঞ এবং জনপ্রিয় চিকিৎসক ডাঃ উদয়ন চৌধুরী । শুধু চিকিৎসক হিসাবে নন একজন সমাজসেবী হিসাবেও এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় । সমাজসেবার লক্ষ্যে এলাকার মেয়েদের নিয়ে ডাঃ চৌধুরী গড়ে তুলেছেন নিজস্ব দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা- “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত” ও “জাগো নারী ট্রাস্ট” । সংস্থার সদস্যদের নিয়ে চিকিৎসক ‘সান্তাক্লজ’ উদয়ন চৌধুরী সকাল থেকেই দুর্গাপুর এর আনাচে কানাচে অনুষ্ঠান করে চলেছেন। দুস্থদের হাতে তুলে দিয়েছেন উপহার সামগ্রী। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সন্ধ্যায় হাজির হয়ে যান নিজের কর্মক্ষেত্র মহকুমা হাসপাতালে। পরের ঘটনা সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা চাক্ষুষ করেন।
জনৈক রুগীর আত্মীয় বললেন,’একজন চিকিৎসক যখন এই বেশে রুগীর কাছে যান তাকে দেখে কিন্তু অর্ধেক রোগ সেরে যায়।’ চিকিৎসক চৌধুরী বললেন,’বড়দিনের আনন্দে সবাই যখন মেতে উঠেছে ওরা তখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। একই অবস্থা তাদের আত্মীয়স্বজনদের। তাদের কিছুটা আনন্দ দেওয়ার জন্যেই এই বেশ ধারণ করলাম ।’।