প্রদীপ চট্টোপাধ্যার,বর্ধমান,০৭ জানুয়ারী : সংবর্ধনার জোয়ারে ভেসে গেলে হবে না। লক্ষ্য রাখতে হবে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক হওয়ার। সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলার ফুটবল দলের সেরা তারকা খেলোয়াড় রবি হাঁসদাকে সোমবার এই উপদেশ দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মন্ত্রী মশাইয়ের এই উপদেশ যথার্থ বলেই মনে করছে ক্রীড়া মহল।এই প্রসঙ্গে রাম মালিকের নাম অনেকের মুখেই বারে বারে ঘুরে ফিরে এসেছে।
সন্তোষ ট্রফি জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ফুটবলে বাংলা এখন ভারত সেরা।এই জয়ের সেরা কাণ্ডারী পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গকোটের মশারু গ্রামের আদিবাসী পাড়ার যুবক রবি হাঁসদা। দ্ররিদ্র খেত মজুর পরিবারের ছেলে রবি’ই ৭৮ তম সন্তোষ ট্রফি ফুটবল টুর্ণামেন্টে সর্বাধিক গোল দাতা । এমনকি রবি হাঁসদার করা একমাত্র গোলেই ফাইনাল ম্যাচে কেরালার মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে বাংলা হয়েছে ভারত সেরা।এহেন ফুটবলার রবি হাঁসদাকে সংবর্ধনা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদ। সেই মত বর্ধমান টাউনহলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।টাউনহলে রবি হাঁসদার সঙ্গে ছিলেন তাঁর কোচ মুদ্রাজ সেডেন,স্ত্রী ভারতী হাঁসদা ও দেড় বছরের মেয়ে রিমি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ,জেলাশাসক আয়েশা রাণী এ ,জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাস , জেলা পরিষদের সভাধীপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার ,বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস সহ আরো অনেক বিশিষ্ঠ জন।
টাউনহলের সংবর্ধনা সভায় ফুটবলার রবি হাঁসদা কে উদ্দেশ্য করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।তিনি বলেন,“এখন সবাই সংবর্ধনা দেবে। কিন্তু শুধু সংবর্ধনার জোয়ারে ভেসে গেলে হবে না।জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে খেলাটা ঠিক ভাবে চালিয়ে যেতে হবে“। একই দিনে মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী নিজের দলীয় কার্যালয়ে রবি হাঁসদাকে সংবর্ধনা দেন।রবির কোচ মুদ্রাজ সেডেন বলেন,“রবি সারাদিনে ৬ ঘন্টা অনুশীলন করতো। সেটাই তার সাফল্যের চাবিকাঠি। ফল।মুদ্রাজ সেডেনও চান জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি যেন রবির গায়ে ওঠে।
জেলার ফুটবল ক্রীড়ামহল মনে করছে,রবি হাঁসদাকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ যে উপদেশ দিয়েছেন তার যথার্থতা রয়েছে। কারণ,রবির মতই দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে ফুটবল খেলায় সুনাম কুড়িয়েছিল এই জেলার ছেলে রাম মালিক জেলার জামালপুর থানার মুহিন্দর গ্রামের বাড়ি রাম মালিকের । ছোট্ট একটি মাটির ঘরে বেড়ে ওঠে রাম।সঙ্গী ছিল দারিদ্রতা । তবুও ফুটবলার হওয়ার বাসনাকে তিনি আঁকড়েই ছিলেন। পরিবারের সবার মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে রাম মালিকের বাবা অজয় মালিককে কঠিন পরিশ্রম করতে হত ।এহেন এক দরিদ্র পরিবাবের ছেলে রাম মালিক বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন যেতেন জামালপুরের জৌগ্রামের ফুটবল ক্যাম্পে। সেখান থেকে তিনি দুর্গাপুরে মোহনবাগান আকাডেমিতে কোচিং নেওয়ার সুযোগ পান।রাম তখনই নজরে পড়েন মোহনবাগান ক্লাবের তদানিন্তন কোচ করিম বেঞ্চারিফার।রাম মালিক কলকাতা লিগে খেলার সুযোগ পান।মোহনবাগান ক্লাবের হয়ে খেলে রাম মালিক তাঁর দক্ষতা প্রামাণ কর দিয়ে বাংলার ফুটবল প্রেমিদের মনে জায়গা করে নেন। তখন রাম মালিক কে নিয়ে উচ্ছাস উদ্দিপনা,সংবর্ধনা দেওয়া,কোন কিছুরই শেষ ছিল না । পরবর্তী সময়ে রাম মালিক মোহনবাগান, ক্যালকাটা কাস্টমস, ইউনাইটেড স্পোর্টস ও কালীঘাটে হয়ে খেলেন। সবুজ মেরুণ জার্সিতে তিনি পঞ্চাশের বেশী ম্যাচ খেলেছেন। সিনিয়র ফুটবলার হয়ে এখনও খেলে যাচ্ছেন রাম মালিক। চাকরি মেলার পর এখন কিছুটা হলেও রাম মালিকের পরিবারে সুদিন ফিরেছে।রবি হাঁসদাকেও এভাবেই ফুটবল খেলাকে আঁকড়ে থাকতে হবে । এই বাস্তবটাই হয়তো মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এদিন রবি হাঁসদাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বলে মত জেলা ক্রীড়া মহলের ।।