অপারেশন সিঁদূরে মধ্যস্থতা করে যুদ্ধ থামানোর মিথ্যা দাবি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছিলেন এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ যদিও দিন দুয়েক আগে তিনি নিজের মুখেই কবুল করেছেন যে ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে তার কোনো ভূমিকা ছিল না । সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর দু’ধাপে ২৫℅ শতাংশ করে মোট ৫০% শতাংশ শুল্ক আরোপ করে মোদীকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছেন তিনি । কিন্তু এতেও ট্রাম্প বিশেষ সুবিধা করতে করতে পারেননি । উলটে জিও পলিটিক্সের ভিন্ন খেলা শুরু করে দিয়েছে নয়াদিল্লি । রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারত সফরে আসছেন বলে জানিয়েছেন অজিত দোভাল । পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাংহাই সম্মেলনে চীনে যাচ্ছেন । এখন মনে হচ্ছে ট্রাম্প নিজের কৌশলেই আটকা পড়েছেন ।
যেহেতু ভারতকে তার পণ্য বিক্রি করতে হবে, তাই ভারত এখন অন্য বাজার খুঁজছে । কিন্তু আমেরিকার কী হবে ? কিছু চাটুকার বলছে যে শুল্ক আরোপের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে, কিন্তু তারা এটা ভাবছে না যে আমেরিকার জনগণকেই ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক দিতে হবে । উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও আমেরিকান নাগরিক ভারতে তৈরি প্যারাসিটামল কেনে, তবে তাকে ৫০% অতিরিক্ত কর দিতে হবে। এটা সত্য যে ভারতীয় পণ্য আমেরিকায় দামি হয়ে যাবে কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডায় নয়। এখন কী হবে?
ভারত থেকে আসা পণ্য অন্য কোনও দেশে যাবে, সেই দেশটি এটিকে স্ট্যাম্প করবে এবং আমেরিকায় বেশি দামে বিক্রি হবে। আর সমস্যায় পড়বে ট্রাম্প । ভারতীয় পন্যের উপর ৫০% শুল্ক চাপিয়ে এখন ট্রাম্পের সাপের ছুঁচো গেলা অবস্থা হয়ে গেছে ।
যাই হোক,প্রথমে ৭ তারিখে বলা হয়েছিল। কিন্তু ৬ তারিখে ২৫% এর পরিবর্তে ৫০% শুল্ক ঘোষণা করে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । তিনি বলছেন যে ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করএ, তাহলে ভারতীয় ওষুধের উপর ২৫০% শুল্ক আরোপ করা হবে । এখন গোটা বিশ্ব জানে যে ভারত চিকিৎসা ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। যদি ভারতের উপর এত বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে আমেরিকান জনগণকে অনেক দামি ওষুধ কিনতে হবে।
প্রসঙ্গত,ট্রাম্পের সমগ্র বিশ্বকে শুল্ক চাপানোর হুমকি দেওয়ার মধ্যে, আমেরিকা সম্পর্কে বিশ্বে এক অদ্ভুত চিন্তাভাবনা তৈরি হয়েছে। ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স এবং ফিলিপাইন এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে কথা বলেছে। উন্নত দেশ এবং বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ যারা উন্নত হওয়ার কাছাকাছি, তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্বাস করলে, শীঘ্রই বাণিজ্যের জন্য একটি নতুন মুদ্রা জারি করা হতে পারে । বিষয়টি এতটাই এগিয়েছে যে বিশ্ব মঞ্চে আমেরিকান এবং ইউরোপীয় চাপমুক্ত একটি নতুন জাতিসংঘের আবির্ভাব হতে পারে ।
পরিবর্তিত বৈশ্বিক ঘটনার এই সময়ে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রাশিয়া গেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি পুতিনের সাথেও দেখা করেছেন । গতকাল অজিত দোভাল ঘোষণা করেছেন যে পুতিন ভারত সফরে আসছেন । ইতিমধ্যেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও রাশিয়া সফর করে এসেছেন । তার আগে তারা দুজনেই চীন গিয়েছিলেন।
চীন ও রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে একসাথে আছে। ভারতের মতো চীনও রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে। রাশিয়া চায় যে চীন যদি ভারতের সাথে তার সমস্ত বিরোধের অবসান ঘটায়, তাহলে ভারত, চীন এবং রাশিয়া একসাথে একটি খুব বড় বিশ্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে । কিন্তু ভারত জানে যে বাধ্যবাধকতার কারণে চীনের মনোভাব অবশ্যই পরিবর্তিত হয়েছে।তা সত্ত্বেও, ভারতের চীনের অভ্যাসের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। ভারত এখনও সতর্কতার সাথে এগিয়ে চলেছে। ট্রাম্পের অভদ্র আচরণ ভারতকে নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে । ট্রাম্পের মুখের কোনো লাগাম নেই । আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এই বিষয়ে চিন্তিত। আর যদি ভারত আমেরিকার শিবির ছেড়ে চলে যায়, তাহলে আমেরিকা আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে,এটাই মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের চিন্তার কারন ।
অন্যদিকে ভারতের নীতি সর্বদা জোটনিরপেক্ষ এবং সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ। এটিই সঠিক নীতি, তবেই সমস্ত দেশ ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে । তুরস্কও আমাদের বন্ধু ছিল, কিন্তু পাকিস্তানের বিষয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শত্রুতা করে বসে । আজ রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং আমেরিকার মতো পরাশক্তির সাথে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে।
গত মেয়াদে, ট্রাম্প ভারতের সাথে এমনভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন যে চীন এবং পাকিস্তান ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে ট্রাম্প পুরো বিশ্বের সাথে শত্রুতা করে ফেলেছেন । হয়তো ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরেই এই ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে ফেলেন যে তিনি পুরো বিশ্বের অভিভাবক । কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে তিনি ভুল মূল্যায়ন করে ফেলেছেন । ভারতের কাছে অনেক বিকল্প আছে, ভারত আমেরিকা যদি পণ্য বিক্রি নাও করে তাহলে ভারতের সামনে অনেক বিকল্প খোলা আছে ।
এবারে ভারত যদি বাজার পরিবর্তন করে তবে কী হবে ? ট্রাম্প কার উপর ৫০ এবং ২৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন? এই পৃথিবী গোলাকার, ভারতও নতুন, বিশ্ব বাজার খোলা। ভারতকে তার পণ্য বিক্রি করতে হবে, অন্য কোথাও বিক্রি করবে । আখেরে ক্ষতি কার হবে । ইতিমধ্যেই মার্কিন কোম্পানি “ফোন পে” ও “গুগুল পে” বয়কটের ডাক ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়ে গেছে । মার্কিন সংস্থা ওয়ালমার্টের “ফোনপে” এবং ল্যারি পেজ-সের্গেই ব্রিনের “গুগল পে” অ্যাপ আনইন্সটল করে ভারতীয় কোম্পানি “ভীম” (BHIM) এবং “পেটিএম”(Paytm) পেমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করার আহ্বান জানানো হচ্ছে । যদি ভারতীয়রা এই আহ্বানে সাড়া দেয় তাহলে বিপুল অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়বে ওই মার্কিন সংস্থা । পাশাপাশি কোল্ড ড্রিঙ্কস সহ বিভিন্ন মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাকও উঠছে । এদিকে কংগ্রেস সাংসদ শশি থারুর কেন্দ্র সরকারের কাছে মার্কিন পণ্যের উপর পালটা ৫০% শুল্ক আরোপ করার দাবি তুলেছেন । এখন ভারতও যদি মার্কিন পণ্যের বিরুদ্ধে কঠোর শুল্ক পদক্ষেপ নেয় তাহলে শুধু আন্তর্জাতিক নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও চরম বিপাকে পড়ে যাবেন ট্রাম্প ।।