জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,০৮ মার্চ : একটা সময় দোল উৎসব বলতে রঙের বালতি ও হাতে পিচকারি নিয়ে ছুটে যেত বাচ্চারা। পরনে থাকত পুরনো ছেঁড়া জামা। বালতিতে জলে গোলা রঙ পিচকারির সাহায্যে ছুড়ে দেওয়া হতো অনিচ্ছুক পথচারীর দিকে। কোথাও কোথাও আবার বেলুনে রঙ ভরে অথবা বাড়ির ছাদ থেকে পথচারীর উদ্দেশ্যে রঙ ছোড়া হতো। আরও অনেক ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার করা হতো।এতে মিলন উৎসবের পরিবর্তে থাকত বর্বর উল্লাস। দোল উৎসব হয়ে উঠত আতঙ্কের উৎসব। ব্যতিক্রম ছিল শান্তিনিকেতনের দোল উৎসব। সেখানে আবির খেলা হয়।
ধীরে ধীরে দোলের সময় শান্তিনিকেতনের ভাবনা রাজ্যজুড়ে বিস্তার লাভ করে। গোলা রঙ ও পিচকারির পরিবর্তে হাতে উঠে আসে আবির। ছেঁড়া বা পুরনো জামার পরিবর্তে মহিলাদের পরনে স্থান পায় হলুদ শাড়ি ও ছেলেদের হলুদ পাঞ্জাবি ও চুড়িদার। সঙ্গে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কচিকাঁচারা থাকে মূল শিল্পী।
গত কয়েকবছর ধরে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা ‘ছন্নছাড়া ক্লাবে’র উদ্যোগে শহরের সাংস্কৃতিক পীঠস্থান বারোয়ারি তলায় এইভাবেই পালিত হয়ে আসছে দোল উৎসব। স্বয়ং পুরসভার চেয়ারম্যান যে ক্লাবের সম্পাদক সেখানে ভিড় ও প্রাণের আবেগ তো থাকবেই। শুধু কাউন্সিলাররা নন সাধারণ মানুষও তাদের বাচ্চাদের নিয়ে হাজির হয়ে যান বারোয়ারি তলায়। তার আগে অবশ্য বিদ্যাসাগর হল থেকে নৃত্য ও গীতের তালে তালে ঐসব বাচ্চা ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে একটি সুসজ্জিত পদযাত্রা শহরের কিছুটা অংশ পরিক্রমা করে। যেহেতু গোলা রঙের ভয় ছিলনা তাই সেই পদযাত্রা দেখার জন্য রাস্তার দু’পাশে ভিড় হয় যথেষ্ট। পদযাত্রা বারোয়ারি তলায় পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত দর্শকরা তাদের স্বাগত জানায়। তারপর সেখানে নৃত্য, গীত ও পরস্পরকে আবির মাখানোর মধ্যে দিয়ে মহাসমারোহে দোল উৎসব পালিত হয়। এরমধ্যেই পাওয়া যায় সত্যিকারের প্রাণের স্পর্শ।
ওদিকে শহরের জনপ্রিয় স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত স্পোর্টিং গ্রাউন্ডে পালিত হয় দোল উৎসব। সেখানে শহরের সুপরিচিত এক নৃত্য শিক্ষিকার প্রতিষ্ঠানের বাচ্চাদের নৃত্য প্রদর্শন উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। পরনে হলুদ শাড়ি ও মাথার খোঁপায় হলুদ ফুলের মালা জড়িয়ে যখন তারা মাঠে নামে তখন মনে হচ্ছিল – কে যেন হলুদ আবির ছড়িয়ে দিল এখানে। সত্যিই সে এক অপরূপ দৃশ্য, দেখলেই মন ভরে যায়। প্রথমবারের জন্য নৃত্য প্রদর্শনের সুযোগ পেয়ে ঋতিকা চ্যাটার্জ্জী, কৃধা মাজিরা তো খুব খুশি। তাদের মধ্যে ছিলনা কোনো জড়তা। পরিবর্তে ছিল একরাশ মন ভাল করা উচ্ছ্বাস।
পাড়াগ্রাম হলেও গুসকরা লাগোয়া মঙ্গলকোটের জালপাড়ার বাচ্চাদের মধ্যে বসন্ত উৎসবের উচ্ছ্বাস কোনো অংশেই কম ছিলনা। বাহ্যিক আড়ম্বর কম থাকলেও ছিল প্রাণের আবেগ। হলুদ শাড়ি পরিহিতা অহনা, ঐন্দ্রিলা, দিশা, শ্রীজা এবং প্রীতম, অঙ্কন প্রমুখদের নৃত্য প্রদর্শন দর্শকদের মুগ্ধ করে। পথচলতি মানুষরা কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়ে তাদের নৃত্য উপভোগ করে। এমনকি তাদের অভিভাবকরাও খুব খুশি।
‘ছন্নছাড়া ক্লাবে’র সম্পাদক তথা গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন,বিভিন্ন প্রান্তে দোল উৎসবের এই আয়োজন দেখে খুব ভাল লাগছে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবিরের ব্যবহার এই উৎসবকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। তিনি আরও বললেন – তার বিশ্বাস রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রবীন্দ্রনাথের ভাবধারায় বিশ্বাসী হয়ে শান্তিনিকেতনের ধাঁচে দোল উৎসব পালিত হবে। এটা হবে এক বড় পাওনা ।।