এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ ডিসেম্বর : রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের একটা ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করেছেন রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সহ সভাপতি তথা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । ভিডিওটি একটি মন্দিরের ভিতরে তর্কাতর্কির মুহূর্তের । কুনাল ঘোষ ও তার দলবলকে তুমুল ঝগড়াঝাঁটি করতে দেখা যায় ভিডিওতে । চরম উত্তপ্ত অবস্থায় বাক্য বিনিময় করতে দেখা যায় কুনাল ঘোষকেও । ওই মন্দিরে ভেতরে ঠিক কি ঘটেছিল তার সাফাই একটা ভিডিও বার্তায় দিন দুয়েক আগে দিয়ে রেখেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ । কুনালের অভিযোগ যে দেবীর অলৌকিক কাহিনী প্রচার করে এলাকায় চূড়ান্ত অরাজকতার সৃষ্টি করে রেখেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ । কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের উপর ভরসা না করে কেন কুনাল ঘোষরা মন্দিরে ঢুকে ঝামেলা পাকাতে গেলেন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি এও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তাকে, ‘মাজার বা দরগায় দাদাগিরি দেখানোর সাহস আছে আপনাদের ?’
প্রসঙ্গত,শ্যামা সুন্দরী মন্দিরটি রয়েছে উত্তর কলকাতার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে । ওই ওয়ার্ডের বর্তমান পুরপিতা তৃণমূল কংগ্রেসের অয়ন চক্রবর্তী । ইউটিউবে সম্প্রচারিত ভিডিওতে কুনাল ঘোষকে অঅভিযোগ করতে শোনা গেছে,’আমরা নিজেরা হিন্দু এবং কালী ভক্ত । মন্দির নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই । কিন্তু এই এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আসছে যে এই মন্দিরটির কোন ট্রাস্ট বা বৈধ কিছু আছে কিনা তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি । দ্বিতীয়তঃ, বিপুল পরিমাণ টাকা এখানে তোলা হচ্ছে এবং তার রেটও হচ্ছে ভয়ংকর । ৫০১ টাকা থেকে ২৮ হাজার পর্যন্ত । আর এলাকার মহিলারা মন্দিরে গেলে পূজারী বলছেন আপনার গলার এই হারটি মায়ের পছন্দ হয়েছে । রাত্রিবেলায় মা নাকি হাঁটের নাঁচেন এবং ছাদে হাঁটেন এসব শোনা যায় ।’
তিনি বলেন,’দক্ষিণেশ্বরের মা হাঁটলেন না। কালীঘাটের মা হাঁটলেন না। শ্যামা সুন্দরীতে এসে মা হাঁটছেন ? এটা নাকি ৫১ পিঠের সমান । আজকালকার হিন্দুদের জমানায় এসব রটেছে । আজকালকার ইউটিউবের জমানায় এসব ঘটেছে । মানুষ ভক্তি বিশ্বাস থেকে আসছেন । আর এখানে যে চূড়ান্ত অরাজকতা তৈরি হয়েছে তাতে এখানকার বাসিন্দারা পাগল হয়ে যাচ্ছে । কারন ভোগ-পাতা-নোংরা এবং আরো কিছু বিষয় তৈরি হয়ে যাচ্ছে । আর সব থেকে বড় বিষয় হল, এরা বড় বড় নাম জপ করছে, দু তিনজন বড় বড় সেলিব্রিটিকে এখানে আনে । সেগুলো আবার ইউটিউবে ছাড়ছে । পরে এলাকায় বলছে যে যাদের যাদের যা যা দিয়ে দেওয়ার আমরা দিয়ে দিয়েছি, তাই কেউ কিছু করতে পারবেনা৷ ফলে এই চাপে এলাকার মানুষ কিছু বলেননি । কিন্তু এই ধরনের কথাবার্তা কেন এলাও করা হবে ?
কুনালের বক্তব্য,’মন্দিরে পুজো হবে কিন্তু যেভাবে এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন, জনজীবন একেবারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছে, এবং মায়ের নাম করে বুজরুকীর কথা বলে যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, ফলে আমরা এখানকার পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি জনজীবনটা পুরো স্বাভাবিক রাখতে । মাকে কে পুজো করবে সেটা তার ব্যাপার । কিন্তু এই এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তার ঢুকতে পারে না, মৃতদেহ ঢোকাতে পারে না, বলা হচ্ছে যতক্ষণ ভক্তরা থাকবে মৃত্যু দোকানে যাবে না । অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না । ভগবান না করুন কোন অঘটন ঘটলে দমকল ঢোকার পরিস্থিতি বন্ধ করে দিয়েছে।’
সব শেষে তাকে বলতে শোনা যায়,’আমাদের আবেদন ইউটিউব থেকে মা কালীকে ভক্তি শ্রদ্ধা করু..ন..ন…ন । কোন সমস্যা নেই । কিন্তু এই মন্দিরটাকে ঘিরে ভক্তিকে বিপথে চালিয়ে যা যা করছে দয়া করে সেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন । আমরা এসেছি এবং আমরা ভবিষ্যতেও এই এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক রাখবো।’
প্রতিক্রিয়ায় তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’কুনাল ঘোষ এবং তার দলবল শ্যামসুন্দরী মায়ের মন্দিরে গিয়ে যে আচরণ করেছেন, তা একাধিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। যদি মন্দিরে তোলাবাজি হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রমাণ সহ যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দাদাগিরি করার প্রয়োজনীয়তা কী? প্রণামীর ভাগ না পাওয়ার জন্যই কি এই উত্তেজনা সৃষ্টি করা হলো? শ্যামসুন্দরী মায়ের মন্দির হাজারো ভক্তের পূজার স্থান, এবং এমন একটি জায়গায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি এমন আচরণ কেন? বিভিন্ন মাজার বা দরগায় কি একইভাবে তারা দাদাগিরি দেখানোর সাহস করেন?’
তিনি লিখেছেন,’এখানে বিষয়টা স্পষ্ট যে, তৃণমূল সরকারের অধীনে মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন মন্দির ট্রাস্টে তৃণমূলের লোকজন বসিয়ে রেখে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। এই ধরনের হস্তক্ষেপ হিন্দু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করছে এবং এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আর যদি তোলাবাজি হয়ে থাকে, তাহলে সরকারকে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কুনাল ঘোষ নিজে কেন সরাসরি গিয়ে মন্দিরের পবিত্র পরিবেশকে কলুষিত করলেন? এটি কি ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রচেষ্টা?’
সব শেষে তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, তা জনসাধারণের সামনে আরও স্পষ্ট। শ্যামসুন্দরী মায়ের মন্দিরে এই ধরণের হস্তক্ষেপের ফলস্বরূপ আজ মন্দির বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ যদি এই ঘটনা কোনো মাজার বা দরগায় হতো, তাহলে কি এমন দুঃসাহস তারা দেখাতে পারত? শেষ কথা হলো, শ্যামসুন্দরী মায়ের মন্দিরের প্রতি এই ধরনের আচরণ কেবলমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, জনমানসের ওপরও গভীর আঘাত হেনেছে। এর দায় কুনাল ঘোষ এবং তার সঙ্গীদের নিতে হবে। ধর্মীয় স্থানে কোনো ধরনের দাদাগিরি বরদাস্ত করা যায় না। জনসাধারণ এদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট বুঝে ফেলেছে এবং উপযুক্ত জবাবও দেবে।’।