এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ ডিসেম্বর : নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল ঘোষণা করেছিলে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির সিঙ্গল বেঞ্চ । আজ বুধবার সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করে দিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত বলেছে,দুর্নীতি হয়েছে বলে সবার চাকরি বাতিল করা যায় না।দীর্ঘ ৯ বছর পর চাকরি বাতিল হলে বিরূপ প্রভাব পড়বে, সমস্যায় পড়বেন শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা। তবে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, দুর্নীতির তদন্ত অব্যাহত থাকবে। দীর্ঘ ৯ বছর পর চাকরি বাতিলের নির্দিষ্ট নাকচ হওয়ায় স্বস্তিতে শিক্ষকরা ও বিধানসভার ভোটের মুখে এই রায়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,’কথায় কথায় চাকরি খেয়ে নেওয়া ঠিক নয় ।’ অন্যদিকে বিজেপির তরুনজ্যোতি তিওয়ারি এই রায়কে “দুর্নীতি আজ প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা পেল” বলে মন্তব্য করেছেন । পাশাপাশি তিনি কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
২০২৩ সালের ১২ মে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে একসঙ্গে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেন। বিচারপতি নির্দেশ দেন, চাকরি বাতিল হলেও শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। তবে নতুন করে ফের তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ শুরু করতে হবে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে একই সঙ্গে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ বহাল রাখা হয়। এরপর সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্য সরকার। চাকরিহারাদের একাংশও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। তারা জানান, সিঙ্গল বেঞ্চ তাদের বক্তব্য না শুনেই রায় দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার নির্দেশ দিয়ে এই মামলা ফের হাইকোর্টে ফেরত পাঠায়। এর পরে মামলা যায় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে। ১২ নভেম্বর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষ হলেও রায় স্থগিত রেখেছিল হাইকোর্ট। এদিন সেই মামলারই রায় দিল ডিভিশন বেঞ্চ।
তরুনজ্যোতি তিওয়ারি এক্স-এ লিখেছেন,’কলকাতা হাইকোর্টের রায় নিয়ে যা বলার, সেটা সুপ্রিম কোর্টেই বলা হবে।আজকের রায়ের পরে পশ্চিমবঙ্গের বেকার যুবকদের মনে নতুন করে বহু প্রশ্ন জাগবে। দুর্নীতি আজ প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা পেল।আদালতের যুক্তি—“কর্তৃপক্ষের ভুলে বা দুর্নীতির জন্য নিরীহদের চাকরি যেতে পারে না।” দীর্ঘ ৯ বছর পর চাকরি বাতিল করলে পরিবারগুলোর উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে—এই মানবিক দিক লক্ষ করে 32,000 চাকরি বহাল।’
তিনি লিখেছেন,’কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—যারা বঞ্চিত হয়েছে তাদের পরিবারের কোনও মূল্য নেই?মানবিকতা আর ন্যায়বিচার এক জিনিস নয়।সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর সেলিব্রেশন সেই পার্থক্যটাই আড়াল করছে।সুপ্রিম কোর্টে এমন বহু রায় আছে—ত্রিপুরা চাকরি বাতিল মামলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক SSC মামলার জাজমেন্ট—যেখানে দুর্নীতির চাকরি বাতিলের নীতি স্পষ্ট। আজকের রায়ে বেঞ্চ জানাল—দুর্নীতির তদন্ত আগের মতোই চলবে,এবং যাদের বিভিন্ন ইস্যু সহ রিজার্ভেশন নিয়ে যে সিঙ্গেল বেঞ্চে মামলা গুলো চলছে তাদের কেস সিঙ্গেল বেঞ্চে চলবে। আদালতের রায় শিরোধার্য। লড়াই চলবে। এ রায় যেদিকেই যেত, শেষ কথা তো সুপ্রিম কোর্টেই হত—এখনও হবে।এ লড়াই কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়—পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে।বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা আজ সবটাই বুঝতে পারছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যতদিন তৃণমূল থাকবে ততদিন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি চলবে।’
প্রসঙ্গত,সম্প্রতি এসএসসি (SSC) মামলার রায়দান সামনে এসেছে। নিয়োগ দুর্নীতির ওই মামলায় ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিস্তর জলঘোলা হলেও সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশ বহাল রাখে। ফলে এদিনের রায় নিয়েও যথেষ্ট চাপের মধ্যে ছিলেন প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষক। তবে বেশি চাপে ছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । কারন, সামনেই বিধানসভার ভোট । এমনিতেই এসএসসি-এর যোগ্য চাকরিহারাদের দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে । তারপরে যদি ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হত তাহলে ড্যামজ কন্ট্রোল করা মমতা ব্যানার্জি বা আই প্যাকের পক্ষে কঠিন হত । ফলে আজকের আদালতের রায় ঘোষণার পর শুদু প্রাথমিক শিক্ষকরাই নয়, শাসকদলের জন্যও স্বস্তি বয়ে এনে দিয়েছে ।।

