জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,২৬ অক্টোবর : ওরা নেই রাজ্যের বাসিন্দা। দু’বেলা পেট ভরে দু’মুঠো খাবার পায়না। নাচের জন্য প্রয়োজনীয় ঝাঁ-চকচকে পোশাক তো দূরের কথা পুজোর সময় নতুন পোশাকও জুটত না। উৎসবের সময় কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজার হাজার দর্শকদের সামনে পারফরম্যান্স করাটা ছিল ওদের কাছে পুরোপুরি দুঃস্বপ্ন। দূর থেকে রঙিন পোশাক পড়ে নৃত্যরত ছেলেমেয়েদের দেখত আর দীর্ঘশ্বাস ফেলত। হয়তো ভাবত ওরা কবে মঞ্চে ওঠার সুযোগ পাবে? আজ ওদের স্বপ্ন বাস্তব হয়ে নেমে এলো মর্ত্যের মঞ্চে এতদিন যেদিকে তাকিয়ে ওরা বিস্মিত হতো।সৌজন্যে সেই অর্পিতা ইন্দ্রের মানসকন্যা ‘আদরবাসা’, এইসব বাচ্চাদের নিয়ে যে গড়ে তুলেছে ‘মুক্তধারা’ এবং সুযোগ করে দিয়েছে ‘যুবগোষ্ঠী’ ক্লাব । গত মঙ্গলবার(২৫ অক্টোবর ২০২২) ছিল উত্তর দমদমের শরৎ বসু রোডের শরৎ কলোনির ‘যুবগোষ্ঠী’ পরিচালিত কালীপুজোর দ্বিতীয় দিন। গত বাষট্টি বছর ধরে পুজোর সময় দেশের প্রথম সারির শিল্পীদের এনে তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করত। কিন্তু তেষট্টিতম বছরে তারা নিয়ে এল ‘মুক্তধারা’-র ক্ষুদেদের। তাদের না আছে ঝাঁ-চকচকে পোশাক বা রূপ অথবা চড়া মেকআপ। এদিকে বহু দর্শক হাজির। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সঙ্গে আদরবাসার অর্পিতাও যথেষ্ট চিন্তিত ছিল। কিন্তু পরবর্তী দু’ঘণ্টা ধরে যেটা ঘটল সেটা সত্যিই বিষ্ময়কর, অলৌকিক।
দেবু, দেবাশীষ, সঙ্কর, রাজনন্দিনী, সৌমিপ্রিয়া, বর্ণালী, শ্রুতি, রুহি, রিদ্ধিমা, জিয়া, স্নিগ্ধা, মনীষা, স্নেহাশিষ, কৃষ্টিনা, আরশি, শ্রেষ্ঠাংশী, পিয়া, পায়েলরা যতবার মঞ্চে উঠে তাদের পারফরম্যান্স করেছে ততবার দর্শকরা হাততালি দিয়েছে। ওদিকে মঞ্চের পেছনে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের আনন্দে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে অর্পিতার। মঞ্চের সামনে ক্লাব সভাপতি দীপঙ্কর দের ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছিল – তিনি যেন নীরবে বলতে চাইছেন – এদের এনে ভুল করিনি।
দীপঙ্কর বাবু বললেন,’প্রতিবছর নামী শিল্পীদের আনি। ভাবলাম এবার না হয় স্থানীয় প্রতিভাদের আনলে কেমন হয়? দর্শকদের হাততালি জানিয়ে দিচ্ছে আমরা সফল। পরবর্তীকালে এদের নিয়ে আমরা আরও কিছু করব ।’
যুবগোষ্ঠীর সম্পাদক, সভাপতি সহ প্রত্যেক সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অর্পিতা দেবী বললেন,’ওরা সুযোগ না দিলে আমাদের স্বপ্ন কোনো দিনই পূরণ হতনা। সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে বহু সহৃদয় ব্যক্তি আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে চলেছেন বলেই এইসব কচি বাচ্চাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করার কথা ভাবতে পারছি। আজকের এই সাফল্যের দিনে তাদেরকেও জানাই প্রণাম। মাত্র কয়েক দিন হলো ওরা নৃত্য অনুশীলন করছে। তারপর হাজার হাজার দর্শকদের সামনে এই প্রদর্শন। খুব গর্ব হচ্ছে। আমার পাশে থেকে প্রতিমা পাল সমানে ওদের তালিম দিয়ে গেছে। পিছনে মা জয়তী ইন্দ্র আমাকে উৎসাহ দিয়ে গেছে। আর দূরে থেকেও আমার এক ‘পিতৃতুল্য’ দাদা সর্বদাই আমাকে ‘মরাল’ সাপোর্ট দিয়ে চলেছেন। দূর থেকেই তাকে জানাই প্রণাম ।’।