এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়া দিল্লি, ১৮ এপ্রিল : দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় মুখ খুলতে শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ একপক্ষ জাহাঙ্গীরপুরীতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে । তেমনি অন্যপক্ষ ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে আপত্তি তুলেছে । ঘটনার দিন প্রদীপ ভান্ডারি নামে এক ব্যবসায়ীর দোকানে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় একদল দুষ্কৃতী । স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনও কিছুতেই ছিলাম না । অথচ দুষ্কৃতীদের একটা দল এসে আমার দোকানে অকারণ ভাঙচুর করে গেলো ।’প্রদীপবাবুর কথায়, জাহাঙ্গীরপুরীর সর্বনাশ করে দিল বাংলাদেশী মুসলমানরা ।’
তিনি বলেন, ‘সামনে সি ব্লকে শব্জি বাজার বসে । আমাদের পরিবারের মা বোনেরা সেখানে শব্জি কিনতে যেতে পারে না । মহিলাদের শ্লীলতাহানি পর্যন্ত করা হয় । আমরা এনিয়ে অভিযোগও করি কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনা । আমরা হিন্দুস্তানি, আমরা ভারতের ভিতরে থাকি, আমাদের কথা শোনার কেউ নেই । ওরা বাংলাদেশী অথচ ওদের কথা সবাই শোনে ।’
প্রদীপ ভান্ডারি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরপুরীতে বসবাসকারী বাংলাদেশী মুসলমানরা এমন কোনো বেআইনি কাজ নেই যে করে না । ওরা চরস বিক্রি করে,ওরা গাঁজা বিক্রি করে, ওরা চোর ।জাহাঙ্গীরপুরীতে এসব লোকজন বরাবরই এ ধরনের অপকর্ম করে আসছে । রবিবার, এই লোকেরা একটি বাজার বসায় যেখানে শুধুমাত্র চোরাই পণ্য বিক্রি হয় ।’তিনি বলেন,’সি ব্লকে আগে হিন্দুদের বসবাস ছিল । সেখানে এখন হিন্দুদের একটা বাড়িও নেই । সবাইকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । ওদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হিন্দুরা সবাই ঘরবাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে ।’
প্রদীপবাবুর কথায়, ‘শনিবার হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রার রথে হনুমান মূর্তিকে লক্ষ্য করে কয়েকজন দুষ্কৃতি পাথর ছুড়তে শুরু করলে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে ।’
অন্যদিকে ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় এক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের নামাজ পড়ার সময় কেন ডিজে বাজানো হচ্ছিল ? ওরা যদি অত জোরে জয় শ্রী রাম স্লোগান দেয় তবে তা কেউ তা সহ্য করবে না। আমাদের মসজিদের সামনে কেন ডিজে বাজানো হবে ?’
জানা গেছে,দিল্লি জাহাঙ্গীরপুরীতে হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রায় পাথর ছোড়া এবং দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগে এযাবৎ ১৪ জন অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে । এই হামলার মাস্টার মাইন্ড আনসার নামে এক ব্যক্তি বলে জানা গেছে । সেই প্রথম শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু করে বলে খবর । দিল্লি পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআরে বলা হয়েছে,শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ শোভাযাত্রাটি সি-ব্লকের জামা মসজিদের কাছে পৌঁছলে আনসার নামে ওই ব্যক্তি তার ৫-৬ জন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে এসে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের সঙ্গে বচসা শুরু করে । তারই মাঝে তারা শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে ইঁটপাটকেল ছুড়তে শুরু করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় । দু’পক্ষই তখন একে অপরকে লক্ষ্য করে ইঁটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে ।
পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করলে জাহাঙ্গীরপুরী (Jahangirpuri) থানার আধিকারক মেদা লালের(Meda Lal) বাম হাতে একটি গুলি এসে লাগে । যদিও পরে আসলাম নামে এক ব্যক্তিকে গুলি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ । উদ্ধার হয়েছে একটি আগ্নেয়াস্ত্রও । সংবাদ মাধ্যমের কাছে মেদা লাল জানিয়েছেন,সেদিন তার সামনেই ৬-৭ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল ।
বর্তমানে বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন আহত পুলিশ আধিকারিক মেদা লাল । রবিবার রাতে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন দিল্লির পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্থানা ।।