এইদিন ওয়েবডেস্ক,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০২ জুলাই : শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের উপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে নিহত বাবা ও দুই দাদার স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ বেদি ভেঙে দিলেন খোদ শহীদ পরিবারের এক সদস্য । ১৯৮৫ সালে ২রা জুলাই সিপিএমের সশস্ত্র দুষ্কৃতিদের হাতে খুন হন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার বেলাড়ি গ্রামের কেশবাড়ির তিন সদস্য । তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর নিহতের স্মৃতিতে গ্রামে একটি শহীদ বেদী নির্মান করে । তারপর প্রতি বছর এই দিনে শহীদ বেদীতে ফুল মালা দিয়ে নিহতের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানান শাসকদলের নেতা কর্মীরা । কিন্তু শুক্রবার শহীদের স্মরণের দিনেই কেশ পরিবারের সদস্য অনন্ত কেশ নিজের হাতে শাবল দিয়ে ভেঙে দিলেন তাঁর বাবা ও দুই দাদার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত শহীদ বেদীটি । অনন্তবাবুর অভিযোগ,তৃণমূল কংগ্রেস তাদের প্রতি অবিচার করেছে । তারই প্রতিবাদে তিনি শহীদ বেদী ভাঙতে বাধ্য হয়েছেন । অন্যদিকে শহীদ পরিবারের প্রতি অবিচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ।
বাম জমানায় পূর্ব বর্ধমান জেলার যে দুটি গনহত্যার ঘটনায় রাজ্য ছাড়িয়ে গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল উত্তাল হয়ে উঠেছিল তার মধ্যে একটি হল বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা এলাকার
‘সাই বাড়ি গনহত্যা’র ঘটনা । ওই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ । তার ঠিক ১৫ বছর পর ২ জুলাই আউশগ্রাম থানার বেলাড়ি গ্রামের কেশবাড়িতে ঘটেছিল দ্বিতীয় গনহত্যার ঘটনাটি ।
ওইদিন বেলাড়ি গ্রামের বাসিন্দা তৎকালীন কংগ্রেস নেতা কমলাকান্ত কেশের বাড়ি ঘেরাও করে সিপিএম আশ্রিত দুস্কৃতীরা । কমলাকান্ত কেশসহ তাঁর তিন ছেলের মধ্যে বড় অশোক কেশ ও মেজ অসীম কেশকেকে দুষ্কৃতিরা পিটিয়ে,কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ । ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন কমলাকান্তবাবুর ছোট ছেলে অনন্ত কেশ । পরে ২০১১ সালে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে বেলাড়ি গ্রামে দলের বিল্বগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়ের ঠিক সামনেই কেশ পরিবারের নিহতদের স্মৃতিতে একটি শহিদবেদী নির্মান করা হয় । তারপর থেকে প্রতি বছর ২ জুলাই শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা । এদিন ছিল ওই বিশেষ দিনটি । কিন্তু সকাল হতেই অনন্ত কেশকে একটি শাবল হাতে নিয়ে তাঁর বাবা-দাদাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত ওই শহীদ বেদীটির সামনে আসতে দেখা যায় । তারপর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেঙে চুরমার করে দেন শহীদ বেদীটি ।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অনন্ত কেশ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন । তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস আমার নিহত বাবা দাদাদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা দেয়নি । আমার পরিবারের প্রতি অবিচার করেছে । বর্তমান শাসকদল অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । কিন্তু কোনও কথা রাখেনি । তাই শহিদবেদী ভেঙে দিয়েছি।’ জানা গেছে, সপ্তাহ দুয়েক ধরে পাড়ার জলনিকাশি নালা নির্মান নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে অনন্ত কেশের সংঘাত চলছে । ওই প্রসঙ্গে অনন্ত কেশের অভিযোগ, ‘পাড়ায় সরকারি জায়গার ওপর নিকাশিনালাগুলি অবরোধ করে কয়েকজন ঘর করেছে । সেসব নালা সংস্কার করতে গেলে ওই অবৈধ নির্মানগুলি ভাঙা পড়বে । তাই ওই নালার সংস্কার করা হচ্ছে না । অথচ জোর করে আমাদের জায়গার ওপর দিয়ে নালা কেটে জলনিকাশ করা হচ্ছে । আমি প্রতিবাদ করলে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে । পুলিশকে জানিয়েও ফল হয়নি । সব কিছু স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতেই হচ্ছে ।’ উল্লেখ্য,তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন অনন্ত কেশ । দলের বিরুদ্ধে তাঁর এই বিষোদগারে কার্যত অশ্বস্তিতে পড়ে গেছে শাসকদল ।
যদিও অভিযোগ প্রসঙ্গে বিল্লগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ফাল্গুনী গোস্বামী বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে অনন্ত কেশকে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছিল । কেশ পরিবারের সদস্যদের যথার্থ সম্মান দিয়েছে দল । অনন্ত কেশ মিথ্যা অভিযোগ করছেন ।’ তাঁর কথায়, ‘শহীদ বেদী ভাঙাটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ ।’ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানবেন । পাশাপাশি তিনি বলেন , ‘প্রকৃত কি কারণে কেশ পরিবারের ওই সদস্য বিতশ্রদ্ধ তা জানি না । তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেশ পরিবারকে সম্মান দিয়ে চলেছেন ।’।