এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২১ আগস্ট : এক বছর ত্রিশের মহিলা,প্রায় সমবয়স্ক এক পুরুষ এবং একটি নাবালক…. তিনজনের একটি দল ভিখারির ছদ্মবেশে এলাকায় ঘুরছিল । নিজেদের দম্পতি বলে পরিচয় দেয় ওই মহিলা । মহিলা জানায় যে তার স্বামী অসুস্থ, চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই । সহজ সরল গ্রামবাসীরা তাদের অসহায় পরিবার মনে করে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন । কিন্তু দলটির মূল পেশা যে ভিক্ষাবৃত্তি নয় বরঞ্চ ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে হাত সাফাই করা,সেটা কল্পনাও করতে পারেননি তারা । যথারীতি দুটো বাড়িতে হানা দেয় ওই দুষ্কৃতী দলটি । সোনারুপোর গহনা ও নগদ টাকা সহ কয়েক হাজার টাকার সামগ্রী তারা হাতসাফাইও করে ফেলে । কিন্তু সৌভাগ্যবশত দলটিকে ধরে ফেলে গ্রামবাসীরা । পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বলগোনা গ্রামের ঘটনা । গ্রামবাসীরা দলটিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে ভাতার থানায় খবর দিলে পুলিশ তাদের আটক করে । এদিকে এই ধরনের অভিনব চুরি এতদিন কাটোয়া বা ভিন জেলা থেকে খবর পাওয়া গেলেও এযাবৎ ভাতারে শোনা যায়নি । ফলে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় ।
জানা গেছে,আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বলগোনা গ্রামের ঘোলার পাড় এলাকায় হানা দেয় ওই দলটি । পাড়ার বাসিন্দারা মূলত কৃষি শ্রমিক । সকাল হলেই যে যার কাজে বেরিয়ে যায় । আর সেই সুযোগের সদব্যবহার করে চোরের দলটি । কিন্তু ভরত মাঝি নামে এক কৃষি শ্রমিকের বাড়িতে চুরি করতে ঢুকে ধরা পড়ে যায় তারা।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে,কয়েকদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন ভরত মাঝি । সেকারণে এদিন তিনি মাঠে কাজে যেতে পারেননি । সকালের দিকে তিনি বাজারে গিয়েছিলেন নিজের জন্য ওষুধ আনতে । তার স্ত্রী মৌসুমি মাঝি বাড়ির পোষ্য গবাদি পশুর জন্য মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন । তাদের এক ছেলে মাঠে কাজে গিয়েছিল এবং স্কুলে গিয়েছিল তাদের বছর সাতেকের নাতনি । ঘরগুলিতে শুধু শিকল তোলা ছিল । সেই সুযোগেই বাড়িতে হানা দেয় ওই দুষ্কৃতী দলটি । ইতিমধ্যে মৌসুমীদেবী ঘাস কেটে বাড়ি ফিরে আসেন । তিনি দেখেন একজন উঠানে দাঁড়িয়ে আছে । দুজন তাঁদের ঘর থেকে সবেমাত্র বের হচ্ছে । অচেনা লোক ঘরে ঢুকেছে দেখেই মৌসুমীদেবী চিৎকার শুরু করেন। তখন তিনজন ছুটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে । তার চিৎকার শুনে আশপাশের বাড়ির কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ ছুটে এসে তাদের ধরে ফেলেন । তারপর তিনজনকে খুঁটিতে বেঁধে রেখে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ২ ভরি সোনা ও ৪ ভরি রুপোর গহনার পাশাপাশি হাজার পাঁচেক টাকা উদ্ধার হয় বলে জানান মৌসুমি মাঝি ।
গ্রামবাসীরা আরও জানান,ভরত মাঝির বাড়িতে হানা দেওয়ার আগে দলটি বসুদেব মাঝি নামে এক খেতমজুরের বাড়িতে হানা দিয়েছিল । সেই সময় তার বাড়িও ফাঁকা ছিল । দলটি বসুদেবের ঘরের আলমারি সহ জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে দেয় । তবে তার বাড়ি থেকে ঠিক কি সামগ্রী চুরি গিয়েছে এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি ।
উল্লেখ্য,অনান্য এলাকায় একই ধরনের চুরির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল যে ভিখারির ছদ্মবেশে চুরির ক্ষেত্রে মূলত খেটে খাওয়া গৃহস্থের বাড়িকেই নিশানা করে দুষ্কৃতীরা । কারন সকালের দিকে পরিবারের সদস্যরা সাধারণত বাড়িতে থাকে না । আর বাড়িতে না থাকলে ঘরে তালা লাগানোর প্রবনতাও কম লক্ষ্য করা যায় গ্রামবাংলায় । যে সুযোগ কাজে লাগায় ওই দুষ্কৃতী দলগুলি । বলগোনা গ্রামের ঘোলার পাড়ের বাসিন্দা সীতারাম ঘোষ বলেন,’আমরা তো সবাই গরিব মানুষ । কঠোর পরিশ্রম করে তিল তিল করে পরিবারের মেয়েদের জন্য গহনা গড়ানো হয় এবং টাকা জমাই আমরা । ওটা আমাদের কাছে অনেক । ওই দলটার শাস্তি অবশ্যই হওয়া দরকার ।’ আপাতত তিন দুষ্কৃতীকে আটক করে জেরা করছে ভাতার থানার পুলিশ । তবে এনিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে।।

