জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),২২ ফেব্রুয়ারী :এযেন অনেকটা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মত গুরু-শিষ্যের লড়াই। প্রত্যক্ষ নয় ঠিকই কিন্তু পরোক্ষভাবে তো বটেই এবং নিস্তরঙ্গ গুসকরা পুরভোটে এটাই হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়বস্তু। চঞ্চল বাবুর আশীর্বাদ কে পাবে – শিষ্য কুশল না কন্যা দেবযানী ?
গুসকরা পুরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী হলেন দেবযানী গড়াই। তিনি হলেন গুসকরা পুরসভার প্রাক্তন তথা তৃণমূল বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান চঞ্চল গড়াইয়ের কন্যা । গুসকরা শহরের বাসিন্দাদের উপর ‘গড়াই’ বাড়ির দুই সন্তান চম্পক গড়াই ও চঞ্চল গড়াইয়ের যথেষ্ট প্রভাব আছে। চম্পক গড়াই অনেক দিন আগে না ফেরার দেশে চলে গেলেও গুসকরার রাজনীতিতে এখনও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক। অন্যদিকে চঞ্চল গড়াইকে প্রথমে যেভাবে তৃণমূল দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পরে প্রবীণ নেতাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে সেটা শুধু শহরবাসীরা নয়, বহু সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেনি। গুসকরার রাজনীতিতে এইরকম দু’জন বর্ণময় চরিত্রের পরিবারের মেয়ে হলো দেবযানী। আদ্যোপান্ত গৃহবধূ দেবযানী নিজে রাজনীতিতে ‘হেভিওয়েট’ না হলেও পরিবার কিন্তু হেভিওয়েট ।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হলো শহর তৃণমূল সভাপতি তথা পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কুশল মুখার্জ্জী। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা চম্পক গড়াইয়ের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ এবং বেড়ে ওঠা চঞ্চল গড়াইয়ের ছত্রছায়ায়। দেবযানীর মত শক্তিশালী পারিবারিক রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউণ্ড না থাকলেও আছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং দলীয় কর্মী ও মানুষের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও শহর সভাপতি হিসাবে কার্যত চষে বেড়িয়েছেন শহরের সমস্ত ওয়ার্ড। করোনা বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য হিসাবে চেষ্টা করেছেন শহরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে। কুশল বাবুর সৌভাগ্য স্হানীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই পাশে পেয়েছেন স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার ও এলাকার ভারপ্রাপ্ত নেতা এক ও অদ্বিতীয় অনুব্রত মণ্ডলকে ।
আটটি পাড়া, দুটি বুথ ও প্রায় দুই হাজার ভোটার নিয়ে গড়ে উঠেছে শহরের ১০ নং ওয়ার্ড। অধিকাংশ ভোটার শিক্ষিত এবং সাধারণ শ্রেণির। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী তুলনামূলকভাবে বিজেপির থেকে কম ভোট পেলেও বিগত বিধানসভা ভোটে, অল্প হলেও, বিজেপির থেকে দুটি বুথেই তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে আছে। অবশ্যই চরিত্রগত দিক থেকে বিধানসভা ও পুরভোট সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথমটি অনেকখানি এলাকা জুড়ে যেখানে দলের প্রভাব বেশি থাকে। দ্বিতীয়টি স্হানীয় যেখানে দলের সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে দুই প্রার্থীই প্রচারের কাজে তত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহর সভাপতি হিসাবে কুশল বাবুকে অন্য প্রার্থীদের ওয়ার্ডে যেতে হচ্ছে। তাসত্ত্বেও তিনি ইতিমধ্যে নিজের ওয়ার্ডে একবার ‘ডোর টু ডোর’ প্রচার করছেন। বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে এলাকার কর্মীরা প্রতিদিনই বাড়ি বাড়ি প্রচারে যাচ্ছে। সাংসদ, বিধায়ক, ব্লক নেতৃত্বও প্রচার করছেন ।
অন্যদিকে সামান্য কয়েকজন কর্মী নিয়ে প্রচারে যাচ্ছেন দেবযানী দেবী। ইতিমধ্যেই বাবা চঞ্চল গড়াইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ডোর ডোর প্রচার করেছেন। চঞ্চল বাবুর উপস্থিতি অবশ্যই প্রার্থীকে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে। দেবযানী দেবীর দাবি তিনি মানুষের সাড়া পাচ্ছেন।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটের পর থেকে ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের ফল বের হওয়া পর্যন্ত কার্যত গুসকরা শহর দাপিয়ে বেড়িয়েছে বিজেপি কর্মীরা। তাদের সামনে যথেষ্ট ম্রিয়মান লাগছিল তৃণমূল কর্মীদের। এখন উল্টোটা। বিজেপি সমর্থকদের একটা বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। অনেকেই নিষ্ক্রিয়। কুশল বাবুর জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত তৃণমূল কর্মীরা মার্জিনের হিসাব কষতে ব্যস্ত। শহরের মানুষের কাছে চঞ্চল গড়াইয়ের আবেগ বনাম রাজনীতির বাস্তবতা, রাজনীতির মঞ্চে সম্পূর্ণ নতুন বনাম পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ – কার জয় হয় সেটা দেখার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতেই হবে ।।