প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ জুন : করোনা অতিমারির কারণে রাজ্যে লকডাউন চলার সময়েই কাজ চলে গিয়েছে। তার পর থেকে সংসারে নেমে এসেছে ঘোর অনটন । অন্ন সংস্থানের বিকল্প আর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে নিজের ’কিডনির’ খরিদ্দার খুঁজে পেতে সামাজিক মাধ্যমের দ্বারস্থ প্রতিবন্ধী যুবক। তাঁর এই আর্তির বিষয়টি জেনে স্তম্ভিত রাজ রাজার শহর বলে পরিচিত বর্ধমানের বাসিন্দারা।
নিজের কিডনি বেচতে চাওয়ার কথা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরা প্রতিবন্ধী যুবকের নাম সম্রাট গোস্বামী । শহর বর্ধমানের টিকরহাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি থাকেন । বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে স্নাতক করার পর কম্পিউটারে কোর্স করে সম্রাট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডেটা অপারেটরের কাজ করতেন । লক ডাউনের সময়ে সেই কাজ চলে গিয়েছে।তার পর থেকে চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই দিন কাটাচ্ছেন।অন্ন সংস্থানের জন্য লোকের বাড়িতে পরিচারিকার
কাজ শুরু করেছেন সম্রাটের স্ত্রী মনীষাদেবী । দুটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে তিনি পান ২৪০০ টাকা । সেখানে বাড়ি ভাড়া মেটাতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। এরপর রয়েছে খাওয়া ও অন্যান্য খরচ ।
সম্রাট এদিন বলেন,’এই পরিস্থিতিতে অনেক চেষ্টা করেও রোজগারের পথ খুঁজে না পেয়ে তিনি নিজের ’কিডনি’ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। আশা একাটাই,ক্রেতা মিলে গেলে মোটা টাকা পাওয়া যাবে। তা দিয়ে রুটি রুজি জোগাড়ের একটা পথ তৈরি করে নেবেন । সম্রাটের স্ত্রী মনীষা গোস্বামী জানান,নিরুপায় হয়েই পরিবারের সবার অন্ন সংস্থানের অর্থ জোগাড়ের তাঁর স্বামী সম্রাট এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব কষ্টে আমাদের সংসার চলছে। সরকার বা কোন সহৃদয় ব্যক্তি যদি সম্রাটকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেন তাহলেও তাঁদের সংসারটা বেঁচে যাবে ।
সম্রাটের বোন বনশ্রী বলেন,আমরাও বর্ধমান শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকি। লকডাউনে আমাদেরও কাজ চলে গিয়েছে।শুনেছি কিডনি বিক্রি করলে মোটা টাকা পাওয়া যায়। তাই আমার স্বামী ও আমি দু’জনেই কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তার প্রক্রিয়া বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলে বুঝতে পারি আমরা প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়েছি। তাই আর কিডনি বিক্রি করা হয় নি । আমাদের পরিবারও বহু কষ্টে আছে। ভাই সোশাল মিডিয়ায় কিডনি বিক্রির পোস্ট করেছে। কিন্তু চাইলেই তো আর কিডনি বিক্রি করা হবে না, ক্রেতাও তো পেতে হবে। তাছাড়া ভাই মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ। সেদিকটাও মাথায় রাখতে হবে।
বনশ্রী সম্রাটের বাবা মুর্শিদাবাদ জেলায় পুরসভার কর্মী ছিলেন। সঙ্কটে সেই পুরসভাও তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি । অভিযোগ, সব শুনে মুখ ফিরিয়েছেন সেখানের বিধায়কও। এক হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা এই অগ্নিমূল্যের বাজারে সামান্যই । তাই ছেলে বউয়ের মুখ চেয়ে এখন সোস্যাল মিডিয়ায় কিডনির ক্রেতা খুঁজছেন সম্রাট। বিষয়টি জানার পর ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন । বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা শাসক তীর্থাঙ্কর বিশ্বাস জানিয়েছেন,আইন মেনে পরিবারটিকে সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে।।