এইদিন ওয়েবডেস্ক,মেদিনীপুর,২৩ জুলাই : অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘার জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার বা জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষের হাসিমুখে উপস্থিতি বিজেপির নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেননি । বিশেষ করে যখন মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানে হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দিলীপের কথিত সৌজন্যের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । বহু বিজেপি কর্মীদের পাশাপাশি বিজেপিপন্থী কিছু ইউটিউব চ্যানেল ও সাংবাদিকেরাও দিলীপের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ আর গতকাল খড়গপুরে সেই সব সমালোচনার প্রতিশোধ নিলেন দিলীপ ঘোষ । তবে তিনি তার সমালোচকদের আক্রমণ করতে গিয়ে যে শব্দ প্রয়োগ করেছেন তা মেনে নিতে পারছেন না তার দলেই কর্মী ও সমর্থকরা । কিছু ইউটিউবার, রিপোর্টার ও বুদ্ধিজীবীদের “বেজম্মা”,”কুকুর”, “শয়তানের বাচ্ছা” বলে আক্রমণ করেছেন বিজেপির ওই বর্ষীয়ান নেতা ৷ শুধু তাইই নয়,নিজের বক্তব্যের ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্টও করেছেন ।
ভিডিওতে দিলীপ ঘোষকে বলতে শোনা গেছে,’কিছু ইউটিউবার, কিছু রিপোর্টার, কিছু বুদ্ধিজীবী এরা খুব বিজেপির হিতৈষী হয়ে গেছে । আপনজন হয়ে গেছে । তারা আমাদের চেয়েও বিজেপিকে বেশি ভালোবাসে ! নিজের বাবা মার চেয়েও বেশি ভালোবাসে । সকাল সন্ধ্যা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে । কিছু কিছু বেজন্মা আছে যারা বলে যে টিএমসির কি করা উচিত, আরএসএসের কি করা উচিত,দিলীপ ঘোষের কোথায় যাওয়া উচিত তাকে কি টাইট করা উচিত । আরে বেজন্মার দল, বিজেপি কে চিনতে তোদের আরো কয়েক পুরুষ লাগবে ।’
তিনি বলেন,’জেনে রাখুন, তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী থেকে সাবধানে থাকবেন। চাটুকার সাংবাদিকদের থেকে সাবধানে থাকবেন। ভ্রষ্টাচারী নেতাদের থেকে সাবধানে থাকবেন। পার্টির প্রতি বিশ্বাস, পন্থের প্রতি বিশ্বাস এবং আমাদের আত্মবিশ্বাস টিমকে আগিয়ে নিয়ে গেছে এটা ভুলবেন না । অনেক আসবে, এই যারা আজকে আপনাদের বিভ্রান্ত করছে, এরকম ইউটিউবের কিছু সাংবাদিক, যেমন বাড়ির সামনের রুটি দিলে কেউ কেউ সকালবেলা এসে লেজ নাড়ায়, এদেরকে রুটি দিয়ে কেনা যায়, পয়সা দিয়ে কেনা যায়, বিশ্বাস করবেন না এই বেজন্মা গুলোকে । এরা বিভ্রান্ত করতে এসেছে ।’
দিলীপ বলেন,’আমি জিজ্ঞেস করি আপনাদেরকে, ১৯ সালে আমরা ৪১℅ ভোট পেয়েছিলাম, ১৮ আসনে বিজেপিকে জিতিয়েছলাম, বলুন ক’জন ইউটিউবার ছিল বিজেপির জন্য ? কয়জন সাংবাদিক ছিল ? কটা চ্যানেল ছিল ? সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে, টিএমসির চোখ রাঙানির বিরুদ্ধে আমরা বিজেপিকে জিতিয়ে ছিলাম প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম । এই শয়তানের বাচ্ছাগুলো যবে থেকে বিজেপির বন্ধু হয়েছে আমরা হেরে চলেছি । ভোট নামছে, শিট নামছে । কোন পত্রিকা, চ্যানেল, ইউটিউব লাগবে না, আপনার আমার কব্জির জোর বাংলার পরিবর্তন করবে । নিজের কলমের জোর, নিজের কব্জির জোর আর পদ্মফুলে বিশ্বাস রাখুন ।’
এদিকে দিলীপ ঘোষের এহেন বিতর্কিত ও সাংবাদিকদের প্রতি অপমানজনক মন্তব্য মেনে নিতে পারছেন না তার দলেরই বহু কর্মী সমর্থক । তার ফেসবুকে পোস্টের কমেন্ট সেকশনে প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছেন । একজন দিলীপ ঘোষকে সমর্থন করলে দীপক দে লেখেন,’ওটা একটা অশিক্ষিত মাথামোটা, সব জান্তা হামবড়া তৃণমূলের এজেন্ট।’
প্রনব ঘোষের প্রতিক্রিয়া,’আপনি দীর্ঘদিন সংঘের স্বয়ংসেবক থেকেও এইসব শব্দচয়ন আপনার মতাদর্শকে প্রশ্নচিহ্নের মাঝে দাঁড় করিয়ে দিল।তারচেয়েও লজ্জাজনক সেটা ফলাও করে পোস্ট করছেন।’
সঞ্চিতা হালদার লিখেছেন,’আপনি যত পারেন বেগমকে অ্যাটাক করুন। কিন্তু এমন কিছু বলবেন না যা বিজেপির কর্মী সমর্থকদের খারাপ লাগে।’
সুবির ব্যানার্জি লিখেছেন,’দিলীপ দা, আপনার মাথাটা মমতার কাছে বিকিয়ে দিয়েছেন ভালো করেছেন, কিন্তু বিজেপি দলটাকে বিকিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা করছেন সেটা কিন্তু সবাই বোঝে। তাই আপনি আগে আপনার বাড়ির দলিল টা সামলান।’
মলয় বসু লিখেছেন,’নিজেকে কি মনে করে কে জানে ? মমতা বেগমের গুণগান করে বেড়াচ্ছে । সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে !’
মুনমুন গ্যালি নামে এক কর্মী দিলীপ ঘোষের উদ্দেশে লিখেছেন,’ভয় পেয়েছেন নাকি ? আচ্ছা ২০২১ এর নির্বাচনের পর যখন কর্মীরা তৃণমূলের কাছে মার খাচ্ছিল, আপনার ফোনের সুইচ অফ ছিল কেন? আপনি নাকি মাছ ধরছিলেন? মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের হত্যা করছে আর আপনি বিয়ে করছেন ।’ দিলীপ ঘোষের বক্তব্য শুনুন 👇
তবে ইদানীং ফের হঠাৎ করে মমতা ব্যানার্জি ও তৃণমূলের কট্টর সমালোচক হিসাবে প্রমান করার চেষ্টা চালাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ । দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের সমতা ব্যানার্জির একটা ভিডিও পোস্ট করে তিনি গতকাল লিখেছিলেন,’আমরা জয় শ্রীরাম ও বলব আবার জয় মা কালী,জয় মা দুর্গাও বলব। দুদিন তিলক কাটলে আর জগন্নাথ মন্দিরে বানিয়ে দিলেই কেউ হিন্দু হয়ে যায় না। হিন্দু একটা সংস্কার, একটা জীবন বোধ একটা জীবন শৈলী। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীকে নারকেল ফাটাতে দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু তিনি তো জীবনে এসব কাজ করেননি। আমরা কি দেখলাম তিনি পেটো বোমা বাঁধার মত করে এমন নারকেল ছুঁড়ে মারলেন যে নারকেল ছিটকে গেল দূরে। প্রভু জগন্নাথ, জগতের নাথ। তিনি তাঁর বড় বড় চোখ দিয়ে সব দেখছেন। চুরি, কাটমানি, দুর্নীতি সব লক্ষ্য রাখছেন। তিনিই বিচার করবেন।’।