এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১৪ এপ্রিল : “দিদি সর্বদা রাগ দেখাচ্ছেন । আর এটাই প্রমান করে দিচ্ছে নির্বাচন তাঁর হাতছাড়া হয়ে গেছে । টিএমসি সাফ । ভারতীয় জনতা পার্টি আসা নিশ্চিত ।’ বুধবার পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের নতুনহাটে দলের নির্বাচনী জনসভায় এসে এই ভাবেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দিদির নির্বাচনী প্রচারের উপর ২৪ ঘন্টার প্রতিবন্ধকতা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন । কারন দিদি একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষদের একজোট হতে বলেছিলেন । দশ বছরের বাংলার নেতৃত্ব কেমন ছিল এতেই বোঝা যাচ্ছে । পুরো সমাজকে বিভাজনের কাজ করেছে ।’ তাঁর কথায়, ‘এক দিকে মোদিজী,সবকা সাথ-সবকা বিকাশ-সবকা বিশ্বাস এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন । ১৩০ কোটি মানুষের দিনরাত চিন্তা করেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী । আর অন্য দিকে এক জোট হবার আহ্বান জানাচ্ছেন দিদি । কার বিরুদ্ধে একজোট ? সিআরপিএফ জওয়ানদের ঘিরে ফেলার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী । মানসিকতা কোথায় পৌঁছেছে !’ এরপর জনসভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, ” এই মুখ্যমন্ত্রীকে কি আপনারা আর রাখবেন?”
সম্প্রতি আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁর একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আসে । সেখানে তফসিলি জাতির ভোটারদের সম্পর্কে তাঁকে বিতর্কিত মন্তব্য করতে দেখা যায় । এদিন এই প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে “দলিত বিরোধী” বলে নিশানা করেন জেপি নাড্ডা। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে তৃণমূলের এক নেত্রী দলিত সম্প্রদায় মানুষ সম্পর্কে সম্পর্কে খুবই হালকা শব্দ ব্যাবহার করেছিলেন । আমি এই সভামঞ্চ থেকে ওই শব্দ ব্যাবহার করতে পারবো না । ওই নেত্রী বলেছিলেন দলিতরা নাকি কেবল হাত পাতেন । কিন্তু ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মমতা দিদি আজ পর্যন্ত তাঁর দলের ওই নেত্রীকে তিরস্কার করার জন্য একটা শব্দও ব্যাবহার করেননি । এতেই তৃণমূলের দলিত বিরোধী মানসিকতা প্রমান মেলে ।’
পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের ‘মা মাটি মানুষ’ স্লোগানকে কটাক্ষ করে জেপি নাড্ডা বলেন,” মমতা দিদি মা মাটি মানুষের কথা বলেন। এদিকে মায়ের কি হাল সেটা শোভা মজুমদারকে জিজ্ঞাসা করুন।বেচারী আর বেঁচেই নেই । বিজেপির কার্যকর্তাকে বাঁচাতে গিয়ে বেচারী মাকে এভাবেই জীবন দিতে হয়েছে। আর মমতা দিদি এনিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। এটাই ওনার মাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা।”
সেই সঙ্গে রাজ্যে মহিলাদের উপর অত্যাচার নিয়েও তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি । তাঁর কথায়, ‘দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মহিলাদের ওপর আ্যসিড হামলার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে হয়। সবচেয়ে বেশি ধর্ষনের ঘটনাও বাংলায়। আর সবচেয়ে বেশি অপহরণের ঘটনা এই রাজ্যেই ঘটেছে। এটাই হল বাংলার মেয়ে ও বাংলার দিদির অবস্থা।”
এদিন মঙ্গলকোটের দলীয় প্রার্থী রানা প্রতাপ গোস্বামীর সমর্থনে জনসভায় যোগ দিতে এসে রাজ্যের শাসকদল ও মুখ্যমন্ত্রীকে আগাগোড়া নিশানা করেন জেপি নাড্ডা । তিনি বলেন, ‘মমতাদির একনায়কতন্ত্র,তোলাবাজি,তোষণ ও ভ্রষ্টাচারের উপর উঠে রানা প্রতাপ গোস্বামী এলাকাকে নয়া লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবেন । এটা শুধু রানা প্রতাপের একার নির্বাচন নয় বা ওনাকে বিধানসভায় নিয়ে যাওয়াই শুধু লক্ষ্য নয় । এর মাধ্যমে বিগত দশ বছর ধরে মমতা দিদির যে কুশাসন চলছে তার শিক্ষা দেওয়ার জন্য গনতান্ত্রিকভাবে ব্যালট বা ইভিএমের মাধ্যমে দিদিকে বিদায় দিতে হবে । আর অভিনন্দন জানাতে হবে বিজেপিকে ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষ বিগত ১০ বছরে অনেক অনাচার দেখেছেন। অনেক অত্যচার সহ্য করেছেন । কিন্তু তাতেও ভয় পাননি বাংলার মানুষ । ক্লান্ত হননি তাঁরা । বাংলার মানুষ পদ্মফুলে ভোট দিয়ে নতুন বাংলা, সোনার বাংলা ও আসল পরিবর্তন করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছেন । আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আগামী মে মাসের ২ তারিখে আপনারা বাংলাকে ডবল ইঞ্জিন করে দেবেন ।’
মঙ্গলকোটের দলীয় প্রার্থী রাণাপ্রতাপ গোষ্বামীর সমর্থনে এদিন নতুনহাটের কলেজ ময়দানে বিজেপির সভায় মূল বক্তা ছিলেন জেপি নাড্ডা।তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপির যুবমোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ,পূর্ব বর্ধমানে সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষসহ জেলা ও ব্লকের বিজেপি নেতারা । মঙ্গলকোটে এদিন বিজেপির জনসভা ছিল ভিড়ে ঠাসা ।।