সঞ্জয় মণ্ডল,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৮ এপ্রিল : শিক্ষক নিয়োগ, আবাস যোজনা, শৌচাগারের দুর্নীতির টাকা তৃণমূল নেতাদের ‘গলায় গামছা’ দিয়ে আদায় করার প্রতিশ্রুতি দিলেন দিলীপ ঘোষ । পাশাপাশি তিনি মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি কে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, দিদি খালি ভাষণ দিচ্ছেন আর ফুটানি মারছেন ।’ আজ রবিবার ভাতারে নির্বাচনী প্রচারে এসেছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলিপ ঘোষে । দিনভর গোটা ভাতার কার্যত দাপিয়ে বেড়ান তিনি। সব শেষে সন্ধ্যার দিকে রামচন্দ্রপুরে চা চক্রে অংশ গ্রহণ করেন । তখনই মুখ্যমন্ত্রী ও তার দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে একের পর এক হুঁশিয়ারি দেন দিলিপবাবু।
প্রথমেই তিনি মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে বলেন, ‘দিদি খালি ভাষণ দিচ্ছেন আর ফুটানি মারছেন । আর মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙছেন । এই করে একবার ভোট নিয়েছেন । আর মাথা ফাটলে কেউ কি ভোট দেবে ?’
সন্দেশখালি কান্ড প্রসঙ্গে দিলিপ ঘোষে বলেন, ‘একবার ৫০০ টাকা ঘুষ দিয়েছেন, এবার বলছে হাজার টাকা দেব । ৫০০ টাকা দিয়ে সন্দেশখালি মহিলাদের সঙ্গে কি করেছে জানেন তো ? রাত্রিবেলায় তৃণমূলের অফিসে নিয়ে গিয়ে ফুর্তি করা হতো, ওখানকার মেয়েদের সঙ্গে । বলছে ৫০০ টাকা দিয়েছি চল । এবার যদি হাজার টাকা দেয় তাহলে এখানকার মহিলাদের বলবে চল পিঠা বানাতে হবে, রাত্রিবেলায় ফুর্তি করব । আমাদের মা-বোনেদের ইজ্জত কি এভাবে ফুর্তি করার জন্য? আপনারা মানবেন? বলবেন তোদের ৫০০ টাকা তোদের কাছে রাখ । আর যদি টাকা নিতে চান নিন, কিন্তু ভোটটা পদ্মফুলে দিন ।’
রেশন দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’মোদীজি শুধু চাল নয় মাথাপিছু এক কেজি করে ডালও পাঠিয়েছেন । আপনারা কি কেউ পেয়েছেন? কেউ পায়নি । মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সব খেয়েছে । এখন জেলের ভাত খাচ্ছে । তুমি গরীব মানুষের মাল খেয়েছ তাই জেলের ভাত তোমায় খেতেই হবে।’
বিজেপি প্রার্থী দিলিপ ঘোষের বক্তব্য শুনুন 👇
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে দিলিক ঘোষ বলেন,’২৬ হাজার ছেলের চাকরি গেল তারমধ্যে কুড়ি পরীক্ষাই দেয়নি । বাপের টাকা আছে, ১২ লক্ষ, ১৫ লক্ষ দিয়ে চাকরি কিনেছে। চাকরি চলে গেছে । আদালত বলেছে বেআইনি চলবে না, হাঁটাও । এই ১২ লক্ষ ১৫ লক্ষ টাকা কে নিয়েছে জানেন? পার্থ বাবু জেলে গেছে, উনি নিয়েছেন । কালীঘাট পর্যন্ত টাকা গেছে । এখানকার এমএলএ,এমপি, যত নেতা আছে সব টাকা তুলেছে । এমএলএ-এর প্যাডে লেখা আছে ১৫ জনের নাম, এই ১৫ জনকে চাকরি দিন, টাকা নেওয়া হয়েছে । সেই কাগজ আমার কাছে আছে । গরিব মানুষ জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছে । এবার আদালত বলেছে যত বছর চাকরি করছে সেই টাকা সুদ সহ ফেরত দিতে হবে । এবার বলুন কোথা থেকে টাকা আসবে? বাপের জমি তো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে । মায়ের গয়নাও বিক্রি করে দিয়েছে । তাহলে টাকা ফেরত দেবে কোত্থেকে?’ এরপর তিনি বলেন,’যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন অথবা চাকরি পাননি তারা আসুন, আমরা তৃণমূলের নেতাদের কলার ধরে টাকা আদায় করব ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন,’নরেন্দ্র মোদী মাথাপিছু তিন লক্ষ সাড়ে তিন লক্ষ করে টাকা পাঠাচ্ছেন বাড়ি করার জন্য । কিন্তু বাড়ি হয়নি। বলছে আগে কুড়ি হাজার টাকা দিলে তারপর বাড়ি হবে । কুড়ি হাজার টাকা থাকলে তো নিজেই বাড়ি করতাম । যদি নিয়ে থাকে বলুন, সেই ব্যাটার বাড়ি গিয়ে দরজা ভেঙে টাকা আদায় করব ।’
দিলীপ ঘোষের অভিযোগ,’কেন্দ্রের পাঠানো শৌচালয়ের জন্য দশ হাজার টাকার উপরেও ১০০০ টাকা করে কাটমানি নেওয়া হয়েছে । সেই লিস্ট আমাদের দেবেন । ভোটের পর আমি এসে সেই নেতার বাড়ি থেকে টাকা আদায় করে আপনাদের ফিরিয়ে দেব । ওদেরকে বলে রাখুন দিলীপ ঘোষ বলে গেছে, টাকাটা দিয়ে দে । যারা বাড়ির টাকা নিয়েছে তারা ফেরত না দিলে গ্রামে থাকতে দেবো না । সব টাকা আদায় করব আমরা । গলায় গামছা দিয়ে চন্ডী মন্ডপে দাঁড় করাবো । বলবেন জমি বিক্রি করেও টাকা দে । সে পঞ্চায়েত প্রধান হোক এমএলএ হোক, যেইই হোক না কেন ।’।