একটা ছোট্ট অনাথ শিশু তিমিকে কোলেপিঠে করে বড় করেছিলেন প্রশিক্ষক জেসিকা র্যাডক্লিফ । নাম রেখেছিলেন ওরকা কাইরো । সেই প্রাণাধিক প্রিয় তিমির জন্য বিয়েও করেননি তিনি । জীবনের ৩৭ টা বছর সেই তিমির সঙ্গেই কাটিয়েছেন জেসিকা৷ কিন্তু হঠাৎ করে জেসিকা আমেরিকায় চলে যান কোনো এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে৷ ফিরে এসে তিমিকে নিয়ে লাইভ শো করছিলেন৷ এদিকে তিমিটি নাকি জেসিকার হঠাও উধাও হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি । সেই অভিমানে সে তার অবিভাবিকাকেই কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছিল । কিন্তু সত্যই কি লাইভ শো চলাকালে ওরকার আক্রমণে তিমি প্রশিক্ষক জেসিকা র্যাডক্লিফ নিহত হয়েছেন ? যেটা জানা গেছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও আসলে গুজব বলে প্রমাণিত হয়েছে । প্রচারিত ভিডিওগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের এক শোর আগে প্রশিক্ষণ চলাকালে তার ওরকা কাইরো হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে জেসিকাকে দাঁত দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে জলের নিচে টেনে নিয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাণী প্রশিক্ষক জেসিকা র্যাডক্লিফের ডলফিনের আক্রমণে নিহত হওয়ার দাবিটি সত্য নয়। বরং, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একাধিক ভিডিও ব্যবহার করে এই ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কথিত জেসিকা র্যাডক্লিফ নামটি ভিত্তি করে খোঁজ করা হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই নামের কোনো সামুদ্রিক প্রাণী প্রশিক্ষককে ওরকার আক্রমণে মৃত্যু হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এমন ঘটনা ঘটলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তা নিশ্চিতভাবে প্রকাশ করত, কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো সংবাদ লক্ষ্য করা যায়নি। এই বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ‘FactEX’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জেসিকার মৃত্যুর দাবি করা হয়। ভিডিওতে দাবি করা হয়, জেসিকা ওশান হ্যাভেন নামের এক মেরিন পার্কে প্রথমবারের মতো ওরকা শো-তে অংশ নেন। তবে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রেই এই পার্কের অস্তিত্ব মেলেনি।
একই ধরনের দাবি গত ১১ এপ্রিল ‘Animal Quests’ নামের ইউটিউব চ্যানেলেও প্রকাশিত হয়। তবে ভিডিওটির বর্ণনায় জেসিকাকে একজন কাল্পনিক প্রশিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং গল্পটি বাস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত বলাও উল্লেখ করা হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘Mahmuda Champa’ ফেসবুক প্রোফাইল থেকে চারটি ভিন্ন ভিডিও প্রচার করে, এগুলো জেসিকার নিহত হওয়ার দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে। তবে সবগুলো ভিডিওই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি।
এ ছাড়া ‘Bd Tube Master’ নামের ফেসবুক পেজে জেসিকা মৃত্যুর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে, একজন নারীর সঙ্গে দুটি ডলফিনের দৃশ্য দেখা যায়। তবে এটিও এআই দিয়ে তৈরি করা ভিডিও। এআই শনাক্তকরণ টুল হাইভ মোডারেশনের বিশ্লেষণে, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ। এ ছাড়া এই ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমও এটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।
তবে, ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সি-ওয়ার্ল্ড অরল্যান্ডোর ৪০ বছর বয়সী সিনিয়র প্রশিক্ষক ডন ব্রানশো একটি শো শেষে টিলিকাম নামের ওরকার আক্রমণে নিহত হন। সুতরাং, কথিত প্রাণী প্রশিক্ষক জেসিকা র্যাডক্লিফের ডলফিনের আক্রমণে নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানানো ।।