এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ অক্টোবর : সোমবার জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটার বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ দিতে যাওয়া মালদা উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক আহত শঙ্কর ঘোষের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদল । গুরুতর আহত হয়েছেন খগেন মুর্মু। এখনো দু’জন মাটিগাড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হামলাকারী কয়েকজনের নাম প্রকাশ্যে আনেন৷ তার উল্লিখিত চার হামলাকারীর নাম হল : রমজান আলী,সৈফুল হক,আইনুল আনসারি ও পিঙ্কি খাতুন । তার মধ্যে পিঙ্কি খাতুন স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপ প্রধান বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ।
এদিকে এই মারাত্মক হামলার প্রতিবাদের ঢেউ পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে আরও একটি বাঙালি রাজ্য ত্রিপুরায় পৌঁছে গেছে । গতকাল আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস ভাঙচুর হয় । তৃণমূলের অভিযোগ যে বিজেপি এই ভাঙচুর করেছে৷ যদিও বিজেপির দাবি এটা গনরোষ । যাই হোক,দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনা সরেজমিনে দেখতে আজ তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের নেতৃত্বে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তৃণমূলের ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল । ওই দলে কুনাল ছাড়াও রয়েছেন প্রতিমা মণ্ডল, সায়নি ঘোষ, শসুস্মিতা দেব, বীরবাহা হাঁসদা এবং সুদীপ রাহার । বাকিরা ত্রিপুরায় মোটামুটি অপরিচিত মুখ । কিন্তু কুনালের বিভিন্ন মন্তব্যের কারনে ত্রিপুরার বিজেপির কর্মীদের র্যাডারে আছেন কুনাল । পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বিজেপির কেউ কেউ মন্তব্য করছেন যে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে “নাগরাকাটার ট্রিটমেন্ট” দেওয়া হোক । বিশেষ করে কুনালকে আগরতলায় পাঠিয়ে মমতা ব্যানার্জি “বলির পাঁঠা” করলেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ । কারন বিভিন্ন সময় বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য শুধু এরাজ্য নয়,ত্রিপুরা থেকেও অনেক গালাগালি হজম করতে হয় ।
বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন ডিজিটাল ক্রিয়েটর সন্ময় ব্যানার্জিও । পাশাপাশি তিনি ৬ প্রতিনিধি দলের আগরতলা ভ্রমণের খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন । তিনি লিখেছেন ,’ভাঁড়টাকে আবার ত্রিপুরা পাঠিয়েছে ক্যাম্যাক স্ট্রিট থেকে বসে ফেরেপবাজটা ।আগরতলায় সবে ধন নীলমণি তৃণদের একটা পেড পার্টি অফিস আছে । সেখানে বিকেল বেলা পেড তিন পিস লোক ( কর্মী) বসে থাকে ।একটা টিভি, আর মহিলা আর তার ভাইপোর দুটো ছবি টাঙানো অফিসটায় ।ত্রিপুরা ছেড়ে দিন, আগরতলায় কেউ তৃণমূল করেনা ।সেই আগরতলায় ওই অফিসটা কাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি । কোন প্রয়োজন ছিল না । কাজটা অন্যায় ।’
তিনি আরও লিখেছেন,’কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা । তিন পিস পেড কর্মীর মনোবল বাড়াতে পাঁচ পিস প্রতিনিধি দল পাঠালো তৃণমূল আগরতলায় ।ভাঁড়ের নেতৃত্বে । ফ্লাইটে । যাওয়া আসা খরচ কত ?রাতে থাকবে ? মনে হয় না । তাড়া খাওয়ার ভয় আছে । গতবার কুণালের তাড়া খাওয়ার দৃশ্যটা মনে আছে,…. হুশ হুশ….তারপর দৌড়… একশো মিটারের স্প্রিন্ট রান….এবারে প্লিজ ওই দৌড়টা করাবেন না, অনুরোধ আগরতলার বিজেপি নেতৃত্বের কাছে ।শুভ হোক যাত্রা, ভাঁড়ামির, শুভেচ্ছা । শুভ নন্দন মাঝখানে মীনাক্ষীর মত বরাহ শব্দ কিন্তু লাগালাম না । ধন্যবাদ আমার পাওনা, সেজন্য, ঠিক কি না ? সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ।’
এদিকে গতকালই জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা হামলায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও রাজ্যসভার সদস্য শমীক ভট্টাচার্য । পরে তিনি এনিয়ে টুইটও করেন। তাতে তিনি লিখেছেন,’উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটায় একটি পরিদর্শনের সময়, বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে পূর্বপরিকল্পিত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নৃশংসভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল। পঞ্চায়েতের ভাইস-চেয়ারপার্সন পিঙ্কি খাতুন সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতারা অবৈধ অভিবাসী এবং জিহাদি গোষ্ঠীগুলিকে ব্যবহার করে এই আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। বিজেপি তাদের অবহিত করেনি বলে তাদের দাবি মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য। উদ্দেশ্য স্পষ্ট – উপজাতি এলাকায় ভয় ছড়িয়ে দেওয়া এবং রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং রাজনাথ সিংকে অবহিত করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’
সবশেষে তিনি লিখেছেন,’আমরা দাবি করছি: অবিলম্বে এনআইএ তদন্ত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি প্রদান, প্রশাসনিক ব্যর্থতার তদন্ত করা হোক । এই বন্যা স্বাভাবিক নয় – এটি দুর্নীতি, অবহেলা এবং অযোগ্যতার কারণে সৃষ্ট “টিএমসি-সৃষ্ট বন্যা”। উত্তরবঙ্গের মানুষের ভয় পাওয়া উচিত নয়। বিজেপি আইনি ও সাংবিধানিক উপায়ে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করবে।’।