প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ মার্চ : নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি হাতে গ্রেপ্তার হয়ে অয়ন শীলের এখন ঠাঁই হয়েছে গারদে । আর এরপর থেকেই হদিশ মিলতে শুরু করেছে কোটি কোটি টাকায় কেনা অয়ন শীলের নানা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি । তার মধ্যে একটি হল হুগলীর গুড়াপ থানার ঘোষলা এলাকায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ের ধারে সাড়ে তিন বিঘা জমির উপর পেট্রোল পাম্প । যেটির নাম “শুক্লা সার্ভিস স্টেশন” । বেশ কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তি ২০২০ সালে ১ কোটি টাকার দলিল মূল্যে কেনা হয়েছিল শান্তনু ঘনিষ্ঠ প্রমোটার অয়ন শীলের ছেলে অভিষেক শীল ও তার বান্ধবী ইমন গাঙ্গুলীর নামে । মালিকের এতসব কীর্তিকলাপের বিষয়ে কিছুই জানেন না পাম্প কর্মীরা । তবে তারা যে বিচলিত সেটা তাদের কথা বার্তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ।
নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করতেই কি পেট্রোল পাম্প কেনা হয়েছিল ? এই সম্পত্তি কেনায় অর্থের উৎসই বা কি ছিল ? হুগলির গুড়াপের ঘোষলা এলাকায় অয়ন শীলের পেট্রোল পাম্পের হদিশ মিলতেই সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে । শুধু পেট্রোল পাম্পই নয়,ওইপাম্প লাগোয়া জায়গায় বিশাল হোটেলও তৈরি হচ্ছিল । যে হোটেল তৈরীর কাছ এখন থমকে রয়েছে । কোটি কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তি কেনায় অর্থের উৎস কি সেটাই সম্ভবত ইডি,সিবিআই এখন খতিয়ে দেখছে।
দূর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে কলকাতার দিকে যেতে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার এলাকা শেষ হতেই শুরু হয় হুগলির গুড়াপ থানা এলাকা ।
গুড়াপের ঘোষলা এলাকায় জাতীয় সড়কের একেবারে পাশেই রয়েছ “শুক্লা সার্ভিস স্টেশন” । যেটি বছর চারেক ধরে বন্ধ ছিল । ২০২০ সালের ২ অক্টোবর কলকাতার বিডন স্ট্রিটের বাসিন্দা নন্দগোপাল শুক্লা, অজয় শুক্লা এবং আশিস শুক্লার কাছ থেকে এই পেট্রোল পাম্পটি অয়ন শীলের ছেলে ও তার বান্ধবী ইমনের নামে কেনা হয়েছিল । তার পর পাম্পটি পুণরায় চালু হয় । নথি অনুযায়ী,শুক্লা সার্ভিস স্টেশনের মালিক অভিষেক হুগলীর চুঁচুড়ার বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তিনি দিল্লিতে থাকেন । বকলমে পাম্পটি দেখতেন তাঁর বাবা অয়ন শীলই। দুর্নীতির দায়ে ইডি-র হেফাজতে অয়ন শীল।পাম্পের পাশে যে হোটেলটি তেরী হচ্ছিল সেটির কাজ কি কারণে বছর দেড়েক আগে বন্ধ করা হয় ,তা নিয়েও রহস্য রয়েই গেছে ।
ইডি গ্রেপ্তার করার পর থেকে অয়ন শীল তো এখন গারদে,তাহলে পাম্প কে দেখভাল করছে ? এই প্রশ্নের উত্তরে পাম্পের কর্মী রাজু বৈরাগ্য বৃহস্পতিবার বলেন,’পাম্প চালুর পর থেকে অয়ন শীল মাঝে মধ্যে পাম্পে আসতেন । হঠাৎ হঠাৎ উনি আসতেন পাঁচ সাত মিনিটের জন্য।কিন্তু কাগজে কলনে যাঁরা পাম্পের মালিক সেই অভিষেক বা ইমন কোনোদিনও পাম্পে আসেননি । পাম্পটি অভিষেক শীল-ই চালান ।’ পাম্প থেকে আয়ের টাকা তাহলে অয়ন শীলের কাছে রোজ পৌঁছাত কীভাবে ? এর উত্তরে পাম্পের আপর কর্মী বাপ্পা দাস বলেন, ‘পাম্পের নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে । ডিজিটাল লেনদেন মাধ্যমে বা ক্যাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অয়ন শীলের কাছে চলে যেত । আর ভারত প্রেট্রোলিয়ামের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক থেকে কাটা হয়ে যেত ।’ কর্মীদের কথা, অয়ন বাবু পাম্পে এলে কর্মিদের সঙ্গেই কখনো তাদের রান্না করা খাবার খেয়ে নিতেন । এমন সাদামাটা মানুষটাকে দেখলে বোঝা যেত না যে তলে তলে তিনিও এতবড় দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন ।
অয়ল শীল এখন জেলে । ইতিমধ্যেই তার ৩২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে ইডি । অয়ন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মজুত করা তেলেই এখন পাম্প চলছে । সেই তেল ফুরোলেই কী ভাবে পাম্প চলবে তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ‘শুক্লা সার্ভিস স্টেশনের’ কর্মীরা । পাম্পের কর্মী বাপ্পা বলেন, ‘কাজ চলে গেলে তো সবারই অসুবিধা। কী হবে তা ভেবে চিন্তা হচ্ছে।’।