এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোচবিহার,২২ আগস্ট : আজ ২২ অগস্ট ২০২৫ পালিত হচ্ছে ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথি কৌশিকী অমাবস্যা। তন্ত্র সাধনার জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এদিন শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন দেবী কালী । এই পূণ্য দিনেই তারাপীঠের মহাশ্মশানে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক ব্যামাক্ষ্যাপা । তারপর থেকে কৌশিকী অমাবস্যার রাতে তারাপীঠের মন্দিরের মা তারার বিশেষ পূজোর আয়োজন করা হয় । কয়েক লক্ষ পূণ্যার্থীদের ঢল নামে এই পূণ্য পীঠে । তবে তারাপীঠের পাশাপাশি কোচবিহার জেলার দিনহাটা-২ ব্লকের ছোট্ট জনপদ সাহেবগঞ্জে কৌশিকী অমাবস্যার রাতে দেবীর পূজায় প্রচুর ধুমধাম হয় । তবে দেবী এখানে পূজিতা হন ছিন্নমস্তা রূপে । দেবী ছিন্নমস্তার পূজোর সূচনায় জড়িয়ে রয়েছে একটা অলৌকিক কাহিনী । সাহেবগঞ্জের দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করা হয় । তার টানে এখানেও হাজার হাজার পূণ্যার্থীদের সমাগম হয় ৷ অনেকে দেবীর কাছে মানত করেন এবং মনোষ্কামনা পূর্ণ হওয়ার পর আজকের দিনে তারা দেবীর কাছে পুজো দিতে আসেন । কোচবিহারের দিনহাটা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, এমনকি কলকাতা এবং নিম্ন আসামের বহু পুণ্যার্থী দেবীকে পূজো দিতে আসেন বলে জানা গেছে । পরের দিন ভোরে দেবীর প্রসাদ গ্রহণের পর সকালে তারা বাড়ি ফিরে যান ।
দিনহাটায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে একটি মহাশ্মশান রয়েছে । সেই মহাশ্মশানেই রয়েছে সাহেমগঞ্জ গ্রামের দেবী ছিন্নমস্তার মন্দির ৷ এই দিনে দেবীর পূজোর জন্য কাঁটাতারের গেট খুলে দেওয়া হয় । বিএসএফকে পরিচয়পত্র দেখানোর পরে তবে মন্দিরে যাওয়ার অনুমতি মেলে । বৃহস্পতিবার রাতে দেবী প্রতিমা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । তার আগে পূণ্যার্থীদের বিশ্রামের জায়গাসহ মন্দিরের সামনে প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে ৷ ইতিমধ্যে পূণ্যার্থীদের আগমনও শুরু হয়ে গেছে ।
জানা গেছে,১৯৭৮ সালের কৌশিকী অমাবস্যায় সাহেবগঞ্জ গ্রামের দেবী ছিন্নমস্তার পূজোর প্রচলন হয় । দেবীর পূজোর সুচনায় জড়িয়ে আছে একটি অলৌকিক কাহিনী । যার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ও দেবীর পূজোর সূচনার অন্যতম উদ্যোক্তা বীরেন্দ্র কুমার সাহা সেই অলৌকিক কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে বলেন,’১৯৭৮ সালে এখানে খুব খরা হয় । দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টি চলে । আমাদের এলাকায় জিতেন ভট্টাচার্য নামে একজন তান্ত্রিক ছিলেন । তিনি গ্রামবাসীদের পরামর্শ দিলেন যে ছিন্নমস্তা দেবীর পূজা করলে বর্ষা হবে এবং কৃষি কাজও শুরু হবে । ওনার কথামতো আমরা পুজোটা আরম্ভ করি । আর পুজোর দিন রাত্রে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । যাতে সাধারণ কৃষকরা খুব আনন্দিত হয় । তারপর থেকেই ভাদ্র মাসের প্রথম অমাবস্যায় নিয়মিত পূজো চলে আসছে ।’ তিনি বলেন, ‘মায়ের কৃপায় পুজোতে কখনো কোনো বিঘ্ন বা বিরাম ঘটেনি । কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ প্রচুর সহযোগিতা করে । সাধারণ মানুষ নিঃস্বার্থভাবে পূজার আয়োজন করে । একদম জিরো পয়েন্টে এই পুজো হয় ।’ তিনি জানান প্রচুর পুনার্থীর সমাগম হয় । এই দিনের জন্য কাঁটাতারের গেট খোলা থাকে । বিএসএফ-কে পরিচয়পত্র দেখালে তবেই মন্দিরে যেতে দেওয়া হয় । তবে পূজোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে কোনো লিখিত অনুমতি পাওয়া যায়না বলে তিনি জানান ।
জানা যায়,সাহেবগঞ্জের দেবী ছিন্নমস্তার তন্ত্রমতে পূজো হয় । রয়েছে বলিদান প্রথা । সন্ধ্যা সাতটায় দেবীর পূজা আরম্ভ হয় এবং সারারাত ধরে চলে । পরের দিন ভোরের দিকে দেবীর প্রসাদ বিতরণ করা হয় । পূণ্যার্থীরা প্রসাদ গ্রহণের পর যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন ।
সাহেবগঞ্জের দেবী ছিন্নমস্তার পূজোর আর এক সুচনাকারী প্রবীণ উত্তম সরকার বলেন,’দেবী খুব জাগ্রতা । দেবী ভক্তদের মনষ্কামনা পূর্ণ করেন বলে বিশ্বাস ৷ অনেকে মানত করেন ৷ তারা কৌশিকী অমাবস্যায় দেবীকে পূজো দিয়ে যান ।’ তিনি জানান, এবছর ৪৭ তম বর্ষে পদার্পণ করল এই পুজো ।।

